আসানসোল স্টেশনে টহল। নিজস্ব চিত্র।
সমস্যা মেটাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে, অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সেই সুযোগে বারবার স্টেশনে তাণ্ডব হকারদের। এর মাঝে পড়ে প্রায়শই আসানসোল স্টেশনের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের একটা বড় অংশের।
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মঙ্গলবার ফের আসানসোল স্টেশনে হকারদের তাণ্ডব চলে। ভাঙচুর চালানো হয় স্টেশনে টিকিট কাউন্টার, আরপিএফ পোস্ট-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায়। আরপিএফ কর্মীদের লক্ষ করে ছোড়া হয় ইট-পাটকেলও। ওই ঘটনায় জডিত সন্দেহে ২৭ জন হকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার তাঁদের আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কী হয়েছিল মঙ্গলবার? ওই দিন স্টেশনে জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেওয়ার দাবিতে তৃণমূল সমর্থিত হকার ইউনিয়নের প্রায় তিনশো হকার ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের আরপিএফ পোস্টের সামনে বসে পড়েন। হকারদের দাবি, এ দিন তাঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান চালাচ্ছিলেন। আচমকা আরপিএফ কর্মীরা অবস্থান হঠাতে লাঠি চালাতে শুরু করে। এরপরই মারমুখী হয়ে ওঠেন হকারেরা। আরপিএফ কর্মীদের লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায় হকারদের। পরে ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মের একটি টিকিট কাউন্টারেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় কম্পিউটার, অন্য যন্ত্র, বেশ কিছু আসবাব, আলো, পাখা প্রভৃতি। গোলমালের মধ্যে পড়ে বেশ কয়েকজন যাত্রীও আহত হন বলে রেল সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
এই ঘটনার পরেই স্টেশনের সুরক্ষার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। গত বছর এপ্রিল মাসেও আসানসোল স্টেশন রোড ও প্ল্যাটফর্ম চত্বর থেকে হকার উচ্ছেদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ড হয় আসানসোলে। এক যাত্রীর প্রশ্ন, বারবার এমন ঘটনার পরেও কেন হকার-সমস্যার স্থায়ী সমাধান মিলছে না? যাত্রীদের একাংশের মতে, এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। ১৯৯৬ সালে বাম জমানায়, ‘অপারেশন সানশাইন’ নাম দিয়ে কলকাতার ফুটপাথ থেকে যখন হকার উচ্ছেদ শুরু হয়, তখন হকারদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তত্কালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যে অবস্থান বদলাননি, সেটা আর টের পাওয়া যায় প্রায় দু’দশক পরে, ২০১৫-র কলকাতা পুরভোটের মুখে। হকারদের আইনি স্বীকৃতির পাশাপাশি একগুচ্ছ আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। রেলকর্তাদের একাংশের দাবি, আসানসোল স্টেশনেও বিক্ষোকারীরা বেশির ভাগই ছিলেন শাসকদলের মদতপুষ্ট। হাতে তৃণমূলের ঝান্ডাও দেখা গিয়েছে।
রেল সূত্রে খবর, বুধবার স্টেশন জুড়েই মোতায়েন করা হয় প্রচুর আরপিএফ কর্মী ও রেল পুলিশ। আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই স্টেশন চত্বরে হকারদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’’ আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফ কমান্ডান্ট প্রদীপ কুমার গুপ্তার দাবি, ‘‘স্টেশন চত্বরে হকারদের প্রবেশ রুখতে পারলেই যাত্রী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাবে।’’
সমস্যা আপাতত যে মিটবে না, তার কথা ধরা পড়েছে তৃণমূল সমর্থিত হকার ইউনিয়নের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্যেও। তিনি বলেন, ‘‘স্টেশনে যাতায়াতের সব কটি রাস্তায় লাগাতার অবরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ এর জেরে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়বেন না তো? রাজুবাবুর জবাব, ‘‘প্রায় ছ’মাস ধরে হকারদের রোজগার বন্ধ রয়েছে। উল্টে তাঁদের জেলে পাঠানো হচ্ছে। ফলে তাঁদের এই আন্দোলনে যাওয়া ছাড় উপায় নেই।’’ যদিও সিপিএম নেতা ভজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘মানুষকে হয়রান করতেই এমন অমানবিক আন্দোলন।’’
বুধবার স্টেশনে চত্বরে কোনও হকারের দেখা মেলেনি। তবে ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া একটি মাঠে দেখা গিয়েছে কয়েকশো হকারের জটলা। গুঁড়িয়ে যাওয়া সংরক্ষণ কাউন্টারটিও সারাইয়ের কাজ চলছে। ফ্যান, আলো বসানোর কাজও চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy