দাড়িভিট স্কুল।—ফাইল চিত্র।
দাড়িভিট কাণ্ডের পরে শনিবার স্কুল খোলা গেলেও ক্লাস হয়নি। সোমবারই প্রথম ক্লাস শুরু হল স্কুলে। তার মধ্যেও এ দিন মাঠের একদিকে অবস্থানে বসেন নিহতদের পরিবারের লোকেরা।
নিহত তাপসের বাবা বাদলবাবু জানান, দাবি নিয়ে এ দিন আর কিছু বলেননি। তাঁরা চান ধৃতদের ছাড়ার বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। তিনি বলেন, ‘‘ধৃতেরা মুক্তি না পেলে ফের ১৪ নভেম্বর থেকে স্কুলের গেট আটকে দেব।’’ মহকুমা শাসক মণীশ মিশ্রর কথায়, ‘‘বিষয়টি আদালতের অধীনে।’’
স্কুল খোলার দিনই প্রশাসনকে নিরীহ গ্রামবাসীদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে সিবিআই তদন্তের দাবিও। তা না হলে স্কুলের গেট আটকে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন নিহতদের পরিবার। এদিন ফের তাঁরা একই দাবি জানান। সে কারণে টেস্ট পরীক্ষার আগে ফের নতুন কোনও সমস্যা তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেল।
যদিও এ দিন সম্পূর্ণ ক্লাসই হয়েছে। এ দিন প্রায় ৪০০ পড়ুয়া স্কুলে আসে। অনেক ক্লাসে অবশ্য ছাত্রছাত্রী কম ছিল। তবে ক্লাস নিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। হাতে চক ডাস্টার নিয়ে ক্লাস নিতে দেখা গিয়েছে বিডিও শতদল দত্ত-সহ স্কুল পরিদর্শক, এআইদেরও। দাড়িভিটের ঘটনায় স্কুলের প্রচুর চেয়ার টেবল ভাঙচুর হয়েছে। এ দিন তাই ডেকরেটারদের কাছ থেকে কিছু চেয়ার টেবিল ভাড়া করেও আনতে দেখা গিয়েছে।
সাড়ে দশটার পর থেকেই ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই স্কুলে ঢুকতে শুরু করে। হাতে গোণা কিছু ছাত্রছাত্রী বাদে বেশির ভাগেরই ছিল স্কুলের পোশাকে। পৌনে ১১টা নাগাদ স্কুলের প্রার্থনার ঘণ্টাও বাজে। প্রার্থনাসভা হয়। সেখানে নিহত দুই তরুণের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালনও করা হয়। এ দিন মিড-ডে মিলেরও ব্যবস্থা হয়। মিড-ডে মিল খেয়েছে প্রায় ৩৫৬ জন। মেনু ছিল মুসুর ডাল, আলু-ফুলকপির তরকারি ও ডিম।
এ দিন দুপুরে স্কুলে যান ইসলামপুরের মহকুমাশাসক মণীশ মিশ্রও। দুপুরে নিহতের পরিবারের লোকেরা তাঁর সঙ্গে দেখাও করেন। স্কুলের ভিতরে দরজা বন্ধ করে কিছু ক্ষণ বৈঠকও হয়। পরে নিহত তাপস বর্মণের মা মঞ্জুদেবী, রাজেশ সরকারের মা ঝর্নাদেবী জানান, মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। মঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘জেলাশাসক তাঁর কাছে যেতে বলেছিলেন। আমরা অসুস্থ কাজেই জেলাশাসকের কাছে গিয়ে দেখা করা সম্ভব হবে না জানিয়েছি।’’ স্কুল খুলতেই রীতিমতো পরীক্ষার দিনক্ষণ পেয়ে রীতিমতো চাপের মুখেই পড়তে হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শিপ্রা মণ্ডল, নিকিতা মণ্ডল, জয়ন্ত সরকাররা জানায়, তাদের কষ্ট হচ্ছে সেদিনের কথা ভেবে। তবে স্কুল শুরু হল পড়াশোনা যাতে নষ্ট না হয় তাই স্কুলে এসেছে। এ দিন দেরি করে আসে দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী। তারা বলে, পরিবারের লোকেরা ভয় পাচ্ছিলেন। এক ছাত্রী বলে, ‘‘ঘটনার দিনও স্কুল পোশাকেই ছিলাম প্রত্যেকেই। আমাদের উপর হামলা হল।’’
স্কুলে নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা, শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য বায়োমেট্রিকে উপস্থিতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান। এমনকি নতুন করে শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্যও আবেদন করা হয়েছে বলে জানতে পারা গিয়েছে।
ইসলামপুরের মহকুমাশাসক মণীশ মিশ্র বলেন, ‘‘স্কুল ঠিক ভাবে চালাতে যত জন শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজন তার তালিকা করতে বলা হয়েছে। এমনকি স্কুলের প্রয়োজনীয় সামগ্রী যা দরকার সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিল মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে। এটাই এখন বড় ব্যাপার। সামনে পরীক্ষা রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy