নিয়োগে দুর্নীতিকাণ্ডে হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য। ছবি ফেসবুক থেকে।
রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিকাণ্ডে হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য। নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত গোপাল দলপতির স্ত্রীই হৈমন্তী বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত হুগলির বলাগড়ের যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। এর পর থেকেই হৈমন্তীকে ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে। হৈমন্তীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। হোয়াটসঅ্যাপ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘ডিপি’ (ডিস প্লে পিকচার) বদলে দেন হৈমন্তী। তা হলে কি অন্তরালেই থাকতে চাইছেন এই ‘রহস্যময়ী’?
কে এই হৈমন্তী? নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে গোপাল দলপতি নামে পূর্ব মেদিনীপুরের এক বাসিন্দার। মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ এবং বেসরকারি ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলের ‘পরিচিত’ গোপাল। টাকা লেনদেনে গোপালের নাম উঠে এসেছে। গোপালেরই স্ত্রী হৈমন্তী, এমনটাই দাবি করেছেন কুন্তল। যুব তৃণমূল নেতার মুখে হৈমন্তীর নাম প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এই ‘রহস্যময়ী’কে ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে।
হাওড়ার উত্তর বাকসাড়া এলাকায় পৈতৃক বাড়ি রয়েছে হৈমন্তীর। টালিগঞ্জে তাঁর একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। পরিবার সূত্রে খবর, তিনি পেশায় মডেল। গোপালের দ্বিতীয় স্ত্রী হৈমন্তী, এমনটাই দাবি করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। সূত্রের দাবি, হৈমন্তীর নামে একটি সংস্থা রয়েছে। ‘হৈমন্তী অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে ওই সংস্থার অফিস রয়েছে বিবাদি বাগে। ২০১৩ সাল থেকে ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে নাম রয়েছে হৈমন্তী এবং গোপাল ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের। সূত্রের খবর, মুম্বইয়ের একটি সংস্থার সঙ্গেও যোগ রয়েছে এই যুগলের। ২০১৭ সাল থেকে মুম্বইয়ের ওই সংস্থার সঙ্গে যোগ রয়েছে তাঁদের। আরমানের অ্যাকাউন্ট থেকে ওই সংস্থায় লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে দাবি। সেখানেও হৈমন্তীর যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে আরমানের নামে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যে নথি হাতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই অ্যাকাউন্টে ‘নমিনি’ হিসাবে নাম রয়েছে হৈমন্তীর।
হৈমন্তীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। গোপালের কি স্ত্রী ছিলেন তিনি? গোপালের অ্যাকাউন্টে ‘নমিনি’ হিসাবে কি নাম রয়েছে? হৈমন্তীকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু, মেসেজ দেখার পরও কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেননি। এর পরই তিনি ডিপি বদলে দেন।
নিয়োগে দুর্নীতিকাণ্ডে গত ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয় কুন্তলকে। এর পরই তাপসের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন যুব তৃণমূল নেতা। পাল্টা কুন্তলকেই নিশানা করেন তাপস। এই সময়ই গোপাল দলপতির নাম উঠে আসে। টাকা লেনদেনে গোপালও জড়িত বলে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। গোপালকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গত রবিবার তাপসকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এর পরই হৈমন্তীর নাম প্রকাশ করেন কুন্তল। পাশাপাশি গোপালেরই আরও এক নাম আরমান বলে দাবি করেন তিনি।
তবে হৈমন্তী এবং গোপালের নাম উল্লেখ করা ছাড়া এ নিয়ে বিশদে মুখ খোলেননি কুন্তল। বিচারাধীন বিষয় বলে এড়িয়ে যান। এর আগেও একাধিকবার গোপাল দলপতির বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলা-সহ নানা অভিযোগ করেছিলেন কুন্তল। এমনকি তাঁকে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের ‘মেন লোক’ বলেও অভিহিত করেন তিনি। এর পরই বৃহস্পতিবার হৈমন্তীর নাম উল্লেখ করে কুন্তল দাবি করেন, সব টাকা রয়েছে গোপাল ওরফে আরমানের স্ত্রী হৈমন্তীর কাছে। তবে হৈমন্তীর কাছে যে টাকা রয়েছে, তা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কি না, তা খোলসা করতে চাননি কুন্তল।
হৈমন্তী এবং গোপাল সম্পর্কে কুন্তলের দাবির পর এই দুর্নীতি কাণ্ড নতুন মোড় নিয়েছে। গোপাল এই মুহূর্তে কোথায় রয়েছেন, তা জানা যায়নি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খোঁজে মেলেনি হৈমন্তীরও। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই হৈমন্তীকে নিয়ে দুর্নীতিকাণ্ডে নতুন রহস্য তৈরি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy