—প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের ৬৯ শতাংশ এখনও রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার শিকার। প্রসূতিদের ১০০ জনের মধ্যেও ৬২ জনই রক্তাল্পতায় ভুগছেন। তার জেরে শিশুদের উচ্চতা ও ওজনের বৃদ্ধি ঠিক মতো হচ্ছে না। বয়স অনুযায়ী উচ্চতা বাড়েনি বা ‘স্টান্টিং’-এর শিকার শিশুর সংখ্যা রাজ্যে ৩৩.৮ শতাংশ। বয়সের তুলনায় ওজন কম, এমন ‘আন্ডারওয়েট’ শিশুর সংখ্যা ৩২ শতাংশের বেশি। যার পিছনে মূলত অপুষ্টিই কারণ।
গত পাঁচ বছরে এই সব মাপকাঠিতে রাজ্যের রেখচিত্র নীচের দিকে। অর্থাৎ, ছবিটা পাঁচ বছর আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা বা ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে’ (এনএফএইচএস)-র রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৭টি রাজ্য ও ৫টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, কেরল, অসম, বিহার, হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্য রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রিপোর্ট এখনও দেখিনি। কিন্তু আমাদের শিশুমৃত্যু এবং মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কম। প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মৃত্যুহার ৩২ থেকে কমে হয়েছে ২২। প্রতি লাখে ১১৭ থেকে কমে ৯৮ হয়েছে মাতৃমৃত্যু। অপুষ্ট হলে এই সাফল্য আসত না।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘জে পি নড্ডা, যিনি এসেছিলেন, তিনি পাঁচ বছর দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কী করেছেন? উত্তর তাঁকে দিতে হবে। ও সব বলে রাজনীতি করে লাভ নেই।’’
পাঁচ বছর আগে ২০১৪-১৫-তে হওয়া চতুর্থ সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৯-২০-র সমীক্ষা বলছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের ১০টি বড় রাজ্যের মধ্যে ৭টিতেই বয়সের তুলনায় কম ওজনের শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। ১০টির মধ্যে ৬টি রাজ্যে শিশুদের মধ্যে ‘স্টান্টিং’-এর হার বেড়েছে। ১০টি বড় রাজ্যেই শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতাও বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে রিপোর্ট একটু বেশিই উদ্বেগজনক। কারণ পাঁচ বছর আগের সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গে শিশুদের মধ্যে কম ওজন, কম উচ্চতা, রক্তাল্পতা— এ সব ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও উন্নতি চোখে পড়েছিল। কিন্তু পাঁচ বছর পরে দেখা যাচ্ছে, ফের ছবিটা খারাপ হচ্ছে।
কী ভাবে? ২০০৫’০৬-এ পশ্চিমবঙ্গে রক্তাপ্লতায় আক্রান্ত শিশু ছিল ৬১ শতাংশ। ২০১৪-১৫-য় তা ৫৪.২ শতাংশে কমে আসে। ২০১৯-২০-তে তা ফের বেড়ে ৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রসূতিদের মধ্যে রক্তাল্পতা ৫৩.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬২.৩ শতাংশ হয়েছে।
তবে পাঁচ বছর আগে দেখা গিয়েছিল, গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আয়রন ও ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খেয়েছেন, এমন প্রসূতিদের হার মাত্র ২৮ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৬২.৫ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও অপুষ্টির প্রভাব কাটিয়ে যে রাজ্যের শিশুরা এখনও বার হতে পারেনি, তার প্রমাণ হল, বয়সের তুলনায় ওজন কম শিশুর সংখ্যা ৩২.২ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে কিন্তু দেখা গিয়েছিল, তার আগের দশ বছরে আন্ডার-ওয়েট শিশুর সংখ্যা ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ৩১.৫ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ফের তা ঊর্ধ্বমুখী। বয়সের তুলনায় উচ্চতার আশানুরূপ বৃদ্ধি ঘটেনি বা স্টান্টিং-এর শিকার শিশুর সংখ্যা ২০০৫’০৬-এ ৪৪ শতাংশ ছিল। ২০১৪’১৫-য় তা ৩২.৫ শতাংশে নেমে আসে। এ বার তা বেড়ে ৩৩.৮ শতাংশ হয়েছে।
জাতীয় সমীক্ষা বলছে, জন্মের পর প্রথম দু’বছরে মাতৃস্তন্য পেয়েছে, এমন শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়েনি পশ্চিমবঙ্গে। ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের মাত্র ৫৩.৩ শতাংশ শুধু মাতৃস্তন্যের উপরে নির্ভর করেছে। পাঁচ বছর আগে তা ৫২.২ শতাংশ ছিল। তবে জন্মের পর প্রথম ঘণ্টায় মায়ের দুধ পাওয়া শিশুর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৯ শতাংশ হয়েছে। দু’বছরের কম বয়সি শিশুদের মাত্র ২৩.৪ শতাংশ যথাযথ পুষ্টিগুণের খাদ্য পেয়েছে। পাঁচ বছর আগে অবশ্য এই হার ১৯.৬ শতাংশ ছিল।
সদ্যোজাত শিশু-মৃত্যুর হার ও পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যু-প্রতিরোধের হারে পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় গড়ের তুলনায় এগিয়ে ছিল। এ বারও দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে গত পাঁচ বছরে উন্নতি হয়েছে। সদ্যোজাত শিশু-মৃত্যুর হার ২৭.৫ থেকে কমে ২২ শতাংশ হয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুহারও ৩১.৮ থেকে কমে ২৫.৪ শতাংশ হয়েছে। শিশুদের টিকাকরণের ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে। সেখানে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের ছবিটা বেশি ভাল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, সার্বিক ভাবে দেখা যাচ্ছে, শিশু-মায়েদের স্বাস্থ্যের মাপকাঠিতে উন্নতি হয়েছে। জন্মের হার কমেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy