Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Rajib Banerjee

মন্ত্রিত্বে ‘ইস্তফা’ দিয়ে বেরিয়ে রাজভবন চত্বরেই হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন রাজীব

আড়াই বছর আগে আচমকা সেচ দফতরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই দলের প্রতি তিনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন ডোমজুড়ের বিধায়ক।

সংবাদমাধ্যমের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজীব।

সংবাদমাধ্যমের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজীব। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:৫২
Share: Save:

গেরুয়া হাওয়ায় প্রভাবিত হননি তিনি। আড়াই বছর আগেই মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন। সে যাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁকে নিরস্ত করেছিলেন। শুক্রবার বনমন্ত্রীর পদ থেকে ‘ইস্তফা’ দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানান রাজীব। তাঁর অভিযোগ, দিনের পর দিন অপমানিত হয়েছেন। ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে। সহ্যের সীমা পেরিয়েছিল। তাই মন্ত্রিত্ব ছাড়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে। তবে ‘ইস্তফাপত্রে’ ত্রুটির কারণে তা গৃহীত হয়নি বলে জানানো হয়েছে। রাজীবকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সকালেই চিঠি পাঠিয়ে মন্ত্রিত্ব থেকে 'ইস্তফা' দিয়েছেন রাজীব। ফেসবুকে তা নিয়ে ‘আবেগঘন’ পোস্টও লিখেছেন। তার পরেই রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করতে যান তিনি। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরনোর সময় সংবাদমাধ্যমের সামনে রীতিমতো ‘ভেঙে’ পড়েন রাজীব। ধরা গলায় বলেন, ‘‘অনেক বেদনা নিয়ে 'ইস্তফা' দিতে বাধ্য হলাম। সম্প্রতি সতীর্থদের কথায় অত্যন্ত আহত হয়েছি। ব্যক্তিগত আক্রমণও করা হয়েছে। আর নিতে পারছিলাম না, বিশ্বাস করুন।’’

আড়াই বছর আগে রাজীবের হাত থেকে সেচ দফতরের দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ওই দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভেন্দুকে। রাজীব দাবি করেছেন, তাঁকে না জানিয়েই ওই দিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। রাজীবের কথায়, ‘‘আড়াই বছর আগে আচমকা দফতর বদল করে দেওয়া হয়েছিল। অত্যন্ত খারাপ লেগেছিল। সেই সময় ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখাননি মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে উত্তরবঙ্গে বৈঠক করছিলাম তখন। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখে জানতে পেরেছিলাম, আমার দফতর বদল হয়েছে। সে দিনই 'ইস্তফা' দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনিই নিরস্ত করেছিলেন।’’

তবে আড়াই বছর ধরে মনে ক্ষোভ পুষে রেখে হঠাৎ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই কেন মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? রাজীবের যুক্তি, ‘‘গত এক মাসে সতীর্থদের কথায় অত্যন্ত আহত হয়েছি। লাগাতার ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে। এত আঘাত না পেলে হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিতাম না। ভাবিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু আর পারছিলাম না। আমার সিদ্ধান্ত কাউকে আহত করলে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি। প্রতিদিন মনে প্রাণে আহত হচ্ছিলাম। আঘাত আর সহ্য করতে পারছিলাম না।’’

তবে রাজীব যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন তা প্রত্যাশিত ছিল বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। রাজীবের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। এমনকি তিনি কোনও কাজও করেননি বলে অভিযোগ করেন সৌগত। এ ব্যাপারে রাজীব বলেন, ‘‘মানুষ বিচার করবে কী কাজ করেছি। যত দিন বাঁচব, বাংলার মানুষের জন্যই কাজ করব। আমাকে সেই কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য দলনেত্রীকে নতমস্তকে প্রণাম জানাই। এর বেশি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই আমি।’’

তবে শুভেন্দু অধিকারীর মতো তিনিও পদ্মশিবিরে যেতে পারেন, এমন জল্পনাকে গুরুত্ব দিতে চাননি রাজীব। তিনি জানান, কোন মঞ্চ থেকে কাজ করবেন, এখনও ভেবে উঠতে পারেননি। তবে তাঁকে দলে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, রাজীব তৃণমূলের বিধায়ক পদ না ছাড়া পর্যন্ত তাঁদের কিছু করার নেই। তবে আসতে চাইলে রাজীবকে তাঁরা স্বাগত জানাবেন।

মন্ত্রিত্ব থেকে 'ইস্তফা' দিলেও, এখনও ডোমজুড়ের বিধায়ক পদ ছাড়েননি রাজীব। ছাড়েননি তৃণমূলের সদস্যপদও। তবে তিনি চলে গেলেও দলে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা দল ছেড়ে যান, কী কারণে যান, তাঁরারই বলতে পারবেন। জনসমুদ্রের সমর্থনে তৃণমূল আজ এই জায়গায়। সমুদ্র থেকে দু’-ঘটি জল তুলে নিলে সমুদ্রের কিছু যায় আসে না। ঠিক যেমন দুটো পাতা ঝরে গেলে বটগাছের কিছু যায় আসে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো নিজেই একটা ইঞ্জিন। তিনিই সকলকে টেনে নিয়ে যান। কোন স্টেশনে কে নেমে গেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE