করোনার কারণে পিছোচ্ছে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব।— ফাইল চিত্র
প্রশ্নটা উঠেছে পূর্ববর্তী বাম জমানাতেও। অতিমারি-পরিস্থিতিতে কলকাতায় সরকার আয়োজিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের দিনক্ষণ ঘোষণার সূত্রে সেই প্রশ্নটাই আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
২০২০-র উৎসবের সময় ২০২১-এর জানুয়ারিতে ঠেলে দেওয়া হলেও করোনা এবং আমপানের ধাক্কায় ধ্বস্ত রাজ্যে সরকারি আয়োজনে এই ব্যবস্থা কতটা মানানসই হচ্ছে সে-প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। সরকারি আমলাদের একাংশের চোখে এই উৎসব অবশ্য বিশ্বের সামনে কলকাতা তথা বাঙালির সাংস্কৃতিক-গরিমা মেলে ধরার মঞ্চ। এক দিকে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানের মতো বলিউডি তারকাদের ডেকে এনে উৎসবের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্য দিকে, চলচ্চিত্র নয়, ছৌ, বাউল, ঝুমুর, রায়বেশে মিলিয়ে বাংলার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র মেলে ধরার মুখও হয়ে উঠেছে এই উৎসব। রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাম জমানার চলচ্চিত্র উৎসব গুটিকয়েকের বৃত্তে আটকে ছিল। এখন তা সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে।’’
চলচ্চিত্র উৎসবের এই চরিত্র বদল নিয়ে সংস্কৃতি জগতের অন্দরে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। গত বছরও নন্দন-চত্বরে উৎসবের আঙিনায় বিশ্ব চলচ্চিত্রের পরিচালকদের এড়িয়ে সর্বত্র মুখ্যমন্ত্রীর ছবির প্রদর্শন নিয়ে টালিগঞ্জের জনৈক চলচ্চিত্র পরিচালকই কটাক্ষ করেছিলেন। আন্তর্জাতিক একটি উৎসব কার্যত রাজ্যের শাসক-শিবিরের রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠছে বলেই তিনি আঙুল তোলেন। প্রবীণ চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার চলচ্চিত্র উৎসবে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমি এখন এর মধ্যে থাকি না। কিন্তু আগে এটা চলচ্চিত্র উৎসব ছিল, এখন কার্নিভ্যাল হয়ে উঠেছে। ধর্মটাই পাল্টে গিয়েছে।’’ সরকারি সূত্রের খবর, বছর-বছর দশ শতাংশ করে বাড়ছে উৎসবের বাজেট। ২০১১য় মমতার জমানা শুরুর পরে পাঁচ কোটি থেকে বেড়ে তা এখন সাত কোটি ছুঁয়েছে। রাজ্য সরকার কেন এত বড় ‘কার্নিভালের’ আয়োজন করবে? কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকেরা অবশ্য উৎসবের এই জনমোহিনী দিকটাকেই তার শক্তি বলে মেলে ধরছেন। বাম জমানায় কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসব শুরু থেকে এ বছরের আয়োজনেও জড়িয়ে রয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। তিনি এখন ফিল্ম সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান। গৌতমবাবু বলছেন, ‘‘ছবি বাছাইয়ে কোনও অনভিপ্রেত সরকারি প্রভাব কলকাতায় কোনও আমলেই দেখিনি।’’ আর উৎসবের চরিত্র বদল প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত, ‘‘এ তো এক-একটা সময়ে সরকারি নীতি। তবে চলচ্চিত্র উৎসবে গ্ল্যামার আমদানি যুগের ধর্ম মেনেই। সরকারি উৎসব হলেও বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাব তো রয়েইছে।’’ রাজ্যের সরকারি কর্তাদের দাবি, গোয়ায় দেশের তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রক আয়োজিত ইফি বা মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে কলকাতার উৎসবও জৌলুস, ধারে-ভারে তুলনীয়।
‘‘কিন্তু নিছক গ্ল্যামারেই চলচ্চিত্র উৎসবের গরিমা বাড়ে?’’, প্রশ্ন তুলছেন, ২০১১ পর্যন্ত কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য তথা ফিল্ম স্টাডিজ়ের শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। কান, ভেনিস বা বার্লিন বিশ্বের তা-বড় চলচ্চিত্র উৎসবে সরকারের ভূমিকা স্রেফ পরিকাঠামোগত সহায়তা। সরকারি কর্তাদের কোনও উপস্থিতি সেখানে থাকে না। সঞ্জয়বাবুর কথায়, ‘‘বাম আমলেও সরকারের উৎসবে জড়ানো অভিপ্রেত ছিল না। কিন্তু এখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সব-কিছুতে সরকারের উপস্থিতি বেশি প্রকট।’’ তা ছাড়া, বিশ্ব সিনেমাকে চেনার নানা মাধ্যম এখন হাতের মুঠোয় তাতেও সরকারি চলচ্চিত্র উৎসবের গুরুত্ব কমছে বলেই তিনি মনে করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy