—প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান পৌঁছে গেল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ায়। যাকে সামনে রেখে বিজেপির প্রচার, দুর্গা পুজোকে নির্দিষ্ট ‘মুঠো’র বাইরে এনে তার সর্বজনীন চরিত্র ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টিকে আলাদা গুরুত্ব না দিয়ে ‘নীতিগত’ ভাবে দেখছে বলে জানিয়েছে।
দুর্গাপুজো উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে ক্লাবগুলোকে অনুদান দিয়েছিলেন। বছর বছর সেই অনুদানের পরিমাণ যতই বেড়েছে, সেই নিয়ে সমালোচনাও ততই তীব্র হয়েছে। বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, অনুদান দিয়ে ক্লাবগুলোকে ‘হাতে’ রাখতে চেয়েছে তৃণমূল। অনুদানের টাকার বদলে ক্লাবগুলোকে দিয়ে দল ও সরকারের প্রচার এবং প্রভাব বাড়াতে চেয়েছে শাসক দল। সমালোচনা করলেও তৃণমূলের এই রাজনীতি ঠেকাতে গত বছর পুজোর আগে দলীয় ভাবে ক্লাবগুলোকে সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিল বিজেপিও।
তবে দলীয় ভাবে অনুদান দিতে গিয়ে বিজেপি দেখেছিল, ‘রাজনীতির রং’ থাকায় সেই অনুদানে তারা সাড়া ফেলতে পারেনি। এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রককে সামনে রেখে অনুদান ও পুরস্কার দিচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দল। তবে এর মধ্যে রাজনীতি আছে বলে মানতে রাজি হননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘‘যে দিন ইউনেস্কো কেন্দ্রের সহযোগিতায় দুর্গাপুজোকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে, সে দিন থেকে কেন্দ্র অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউনেস্কো-র ‘হেরিটেজ’ মানে গোটা পৃথিবীর সংস্কৃতির অংশ। স্বাভাবিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার চেষ্টা করছে, যাতে আরও ভাল হয়, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।’’
পুজো উদ্যোক্তাদের অনুদানের সমর্থনে তৃণমূলের যুক্তি ছিল, দুর্গাপুজোর মতো সর্বব্যাপী উৎসব ঘিরে অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব বাড়াতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার বিজেপির অনুদানের রাজনীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনুদান নিয়ে বিজেপি শিবিরের সক্রিয়তা নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব পুজো কমিটিকে অনুদান দেন। তখন বিজেপি সমালোচনা করেছিল। এখন কেন সেই জায়গা থেকে সরে এসে নিজেদের টাকা দিতে হচ্ছে? কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকেই স্বীকৃতি দিল!”
সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরে অনুষ্ঠান করে রাজ্যের বাছাই করা ২৫টি পুজো কমিটিকে অনুদান দিয়েছে কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রক। পাশাপাশি ১০টি পুজো কমিটি পেয়েছে সেরার স্বীকৃতি। উল্লেখযোগ্য ভাবে অনুদান পাওয়া পুজো কমিটির তালিকায় ৭ নম্বরে নাম ছিল নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট ক্লাবের। যে ক্লাবের অবস্থান কালীঘাটে। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে কয়েক হাতের মধ্যে। ক্লাবের পুজো সম্পাদক অভিজিৎ বসু বলেন, ‘‘আমরা এর আগে ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৯ সালে তিন বার জাতীয় স্তরে পুরস্কার পেয়েছি। আমরা প্রতিবার শ’খানেকের উপরে প্রতিযোগিতায় নাম দিই। এ বারও দিয়েছিলাম। এর মধ্যে রাজনীতি দেখতে চাই না। আমরা বিজেপি-তৃণমূল, মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই না। কেন্দ্রের সরকার অনুদান দিয়েছে। আমরা সরকারের অনুদান গ্রহণ করেছি।”
কিন্তু বিষয়টা এতটাও সহজ নয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। কারণ, এই অনুদান পাওয়ার জন্য যে যে শর্ত পূরণ করতে হয়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল পুজো মণ্ডপের ৫০ মিটারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ-সহ কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের ফেস্টুন লাগাতে হবে। এমনকি, অনুদান-মঞ্চও ছিল প্রধানমন্ত্রীর মুখের ছবিতে ভরা। মঞ্চে ছিলেন পাপিয়া অধিকারী, অঞ্জনা বসুর মতো সংস্কৃতি জগৎ থেকে গেরুয়া শিবিরে যাওয়া মুখ। যদিও অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ‘বাংলা আবার’ নামের সামাজিক সংগঠনের সম্পাদক প্রীতম সরকার বলেন, ‘‘আমরা অনুষ্ঠানে কোনও রাজনৈতিক পতাকা রাখিনি। সংস্কৃতি মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিল। আমরা আগামী বছর থেকে আরও বড় আকারে এই অনুদান দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy