Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
BGT 2024-25

১৯ বছরের কনস্টাসের কাছে শুরুতে ‘হার’ রোহিতদের, শেষ বেলায় ম্যাচে ফেরালেন বুমরা

বড়দিনের পরের দিন। মেলবোর্নে উৎসবের আমেজ। গ্যালারিতে ৯০ হাজার দর্শক। ক্রিকেটের মাধ্যমে বিনোদন দিতে চাইলে এর থেকে বড় মঞ্চ আর কী হতে পারে? বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরে সেটাই করে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা।

cricket

(বাঁ দিকে) স্যাম কনস্টাস। যশপ্রীত বুমরা (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪
Share: Save:

বড়দিনের পরের দিন। মেলবোর্নে উৎসবের আমেজ। গ্যালারিতে ৯০ হাজার দর্শক। ক্রিকেটের মাধ্যমে বিনোদন দিতে চাইলে এর থেকে বড় মঞ্চ আর কী হতে পারে? বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরে সেটাই করে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা। শুরুটা যদি স্যাম কনস্টাস করে থাকেন, তা হলে দিনের শেষটা করলেন স্টিভ স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার তরুণ এবং অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটারের শটের বৈচিত্র, আগ্রাসন আনন্দ দিল মেলবোর্নের সমর্থককে। একই সঙ্গে ভারতীয় দলের জন্য খাড়া করে দিল একগুচ্ছ প্রশ্ন। টসে জিতে ব্যাট নিয়ে প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৩১১/৬। যশপ্রীত বুমরা (৩/৭৫) ছাড়া কোনও বোলারই দাগ কাটতে পারেননি।

কনস্টাসের বাজ়বল

বয়স মাত্র ১৯ বছর। ঠোঁটের উপরে গোঁফের পাতলা রেখা সবে দেখা যেতে শুরু করেছে। খেলতে নেমেছিলেন জীবনের প্রথম টেস্ট। এ সব দেখেই কি ভারত একটু হালকা ভাবে নিয়ে ফেলেছিল স্যাম কনস্টাসকে? প্রশ্ন উঠছে মেলবোর্নে প্রথম দিনের খেলার পরেই। ১৯ বছরের ক্রিকেটার থিতু হতে কয়েক ওভার নিয়েছেন। তার পরেই ৬৫ বলে ৬০ রানের ইনিংসে নিজের জাত চিনিয়েছেন। শুরু থেকেই একটা আগ্রাসী মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল তাঁর খেলার মধ্যে। খারাপ বলে আক্রমণ করতে চাইছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম রান পাওয়ার তিনটি বল পরেই বুমরাকে প্রথম বার ‘র‌্যাম্প’ শট খেলতে গেলেন। ব্যাটে-বলে ব্যবধান খুবই কম ছিল। তা জমা পড়ল উইকেটকিপার ঋষভ পন্থের হাত। উল্টো দিকে তখন হাসছিলেন উসমান খোয়াজা। এগিয়ে এসে কনস্টাসকে কিছু বললেনও। তবে নিজের অবস্থান থেকে সরে এলেন না কনস্টাস। সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই অফস্টাম্পের দিকে সরে আবার ‘র‌্যাম্প’ শট খেললেন। এ বার বল বাউন্ডারির কাছে আছড়ে পড়ল। পরের বলে লেগ স্টাম্পের দিকে সরে গিয়ে ‘রিভার্স স্কুপ’। হতভম্ব বুমরা দেখলেন, বল সীমানার বাইরে চলে গিয়েছে। টেস্টে ২০২১ সালে সিডনিতে তাঁকে শেষ বার ছয় মেরেছিলেন ক্যামেরন গ্রিন। ৪,৪৮৩ বল পরে আবার ছয় হজম করতে হল বুমরাকে। সেই ওভারেরই পঞ্চম বলে আবার কনস্টাসের ‘স্কুপ’। আবার চাপ। মেলবোর্নের দর্শকেরা এ বার গা ঝাড়া দিয়ে বসলেন। বোঝা গেল, এ যে সে ছেলে নয়!

অতীতে অস্ট্রেলীয়রা স্লেজিং করে কোহলিকে রাগিয়ে দিতেন। ফল হত উল্টো। কোহলির ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসত সেরা ইনিংস। এ বার সেই একই ভুল করলেন কোহলি নিজেই। দশম ওভারে ইচ্ছা করে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরে রাগিয়ে দিলেন কনস্টাসকে। ১১তম ওভারে বুমরাকে সপাটে লং-অনের উপর দিয়ে ছয় মারলেন কনস্টাস। বুমরার বোলিং দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, তাঁর ভাবনাচিন্তা গোলমাল পাকিয়ে গিয়েছে। প্রায় প্রতি বলেই উইকেট ছেড়ে লেগ স্টাম্পের দিকে সরে গিয়ে শট খেলছিলেন। অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁর খেলার মধ্যে। সুন্দর, একই সঙ্গে নিষ্ঠুরও। যত ক্ষণ ক্রিজ়ে ছিলেন, প্রতিটি মুহূর্তে আনন্দ দিয়ে গেলেন। অর্ধশতরানের পর হাত নাড়িয়ে দর্শকদের চিৎকার করতে বলা আলাদা করে নজরে পড়ল।

আবার ভারতের দল নির্বাচনে প্রশ্ন

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের ৫০ ওভার হয়ে যাওয়ার পরেও দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁকে। অবশেষে তিনি বল করতে এলেন ৫২তম ওভার হওয়ার পর। ওয়াশিংটন সুন্দরকে দিয়ে যদি বেশি বল করানোই না হয় তা হলে তাঁকে দলে নেওয়া হল কেন? স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্ন উঠেছে। চার বছর আগে মেলবোর্নেই টেস্টে অভিষেক হয়েছিল শুভমনের। ভাগ্যের এমন ফের যে তাঁকে সেই মেলবোর্নে এসেই বাদ পড়তে হল। অ্যাডিলেড এবং ব্রিসবেনে না হয় রান পাননি। তবে শুভমন কি এতটাই খারাপ ক্রিকেটার যে তাঁকে এত তাড়াতাড়ি বাদ পড়তে হবে? দলে রবীন্দ্র জাডেজা থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় স্পিনার হিসাবে কেন সুন্দরকে নেওয়া হল তা কেউ বুঝতে পারলেন না। পিচে ভর্তি ঘাস। স্বাভাবিক বুদ্ধিতেই পেসারেরা সুবিধা পাবেন। সেখানে সুন্দরের বল খেলতে কোনও সমস্যাই হল না অস্ট্রেলিয়ার। তারা প্রথম একাদশে স্রেফ জশ হেজ়লউডের জায়গায় স্কট বোলান্ডকে খেলাচ্ছে। গতিময় পিচে কেন সুন্দরকে খেলানোর সিদ্ধান্ত, তাঁর উত্তর গৌতম গম্ভীর, রোহিত শর্মারাই দিতে পারবেন।

বুমরা ছাড়া আর কে

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে বার বার এই প্রশ্নটা উঠছে। সেই প্রথম টেস্ট থেকেই ভারতের বোলিং বিভাগকে একার কাঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বুমরা। যখনই দলের দরকার হচ্ছে, তিনি এগিয়ে আসছেন। মেলবোর্নে প্রথম উইকেটটি পেয়েছিলেন কিছুটা ভাগ্যের জেরে। মিড অনের উপর দিয়ে শট খেলতে যাওয়া খোয়াজা সময়ে গন্ডগোল করে ফেলেছিলেন। বল ব্যাটের একদম তলার দিকে লেগে কেএল রাহুলের হাতে পৌঁছয়। ৫৭ রান করে ফিরতে হয়। তবে বাকি দু’টি উইকেটের মধ্যে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। ৭২ রান করে মার্নাস লাবুশেন ফেরার পরে গ্যালারিতে থাকা ‘ভারত আর্মি’ উল্লাস শুরু করলেও কিছুটা থমকে গিয়েছিল ট্রেভিস হেডকে নামতে দেখায়। সেই হেডকে বলের গতিতে ঘোল খাইয়ে শূন্য রানে বোল্ড করলেন বুমরা। টোপ দিয়ে তুলে নিলেন মিচেল মার্শের উইকেটও। তবে বুমরা ছাড়া আর কোনও ভারতীয় বোলার দাগ কাটতে পারলেন না। সিরাজ প্রতি ম্যাচেই হতাশ করছেন। এ দিন কনস্টাস এবং লাবুশেনের সঙ্গে বার কয়েক কথা চালাচালি ছাড়া তাঁর থেকে আর কিছু পাওয়া যায়নি। সিরাজের মধ্যে কোনও বিকল্প পরিকল্পনা নেই সেটা বোঝা গিয়েছে। লাইন-লেংথ একই রাখলেও বলের মধ্যে বৈচিত্র আনতে পারছেন না। আকাশ দীপ তবু এক জায়গায় বল করে গিয়েছেন। দিনের শেষে তাঁর প্রাপ্তি অ্যালেক্স ক্যারের উইকেট। জাডেজা এবং ওয়াশিংটন একটি করে উইকেট নিলেও কারও বোলিংয়ে এমন ধার ছিল না যা অস্ট্রেলিয়াকে ধাক্কা দিতে পারে।

অস্ট্রেলীয়দের ধৈর্য

মেলবোর্নের উইকেটে আগে ব্যাট করা (১০ জয়) এবং পরে ব্যাট করা (১২ জয়) দলের পরিসংখ্যান প্রায় এক। তবে এগিয়ে আছে পরে ব্যাট করা দলই। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ভারতীয় ক্রিকেটারদের হয়তো খুশি হওয়ারই কথা। তবে প্রথম দিনের খেলা দেখে খুশি হওয়া যাচ্ছে না। এই উইকেটে টিকে থাকতে পারলে রান আসবেই। আর সেটাই করে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা। কনস্টাস বাদে অতি আগ্রাসী খেলতে কাউকেই দেখা যায়নি। প্রত্যেকেই সময় নিয়ে খেলেছেন। থিতু হতে সময় নিয়েছেন। মারার বলে মেরেছেন। ক্রিজ় কামড়ে পড়ে থাকার কারণেই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম চার ব্যাটার অর্ধশতরান করেছেন। ফলে পরে ব্যাট করতে নামলে ভারতকেও একই কাজ করতে হবে।

স্মিথের পয়া মাঠ

মেলবোর্ন সাধারণত খালি হাতে ফেরায় না স্মিথকে। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক এই মাঠেই ১০ বছর আগে ভারতের বিরুদ্ধে ১৯২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। গত বারের সিরিজ়‌ে ব্যর্থ হলেও আবার এমসিজি তাঁর কাছে পয়া মাঠ হয়ে রইল। তিন ঘণ্টার উপর ক্রিজ়ে কাটিয়ে অর্ধশতরান করলেন। ৬৮ রানে অপরাজিত থেকে দলকে লড়াইয়ে রাখলেন তিনি। শুক্রবার স্মিথের ব্যাট থেকে একটা শতরান পাওয়া গেলে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে আরও চাপে ফেলতে পারবে।

এবং কোহলি-কনস্টাস দ্বৈরথ

ভারত-অস্ট্রেলিয়া খেলবে আর বিতর্ক হবে না তা কি হয়! মেলবোর্নও ব্যতিক্রম নয়। ১০ ওভারের পরের ঘটনা। সিরাজ সেই ওভার শেষ করার পর দিক পরিবর্তন করার জন্য হেঁটে আসছিলেন কোহলি। উল্টো দিক থেকে আসছিলেন কনস্টাসও। দু’জনের কাঁধে ধাক্কাধাক্কি হয়। কনস্টাসের বিষয়টি পছন্দ হয়নি। তিনি কোহলিকে কিছু একটা বলেন। পাল্টা কোহলিও রক্তচক্ষু দেখিয়ে কনস্টাসকে উত্তর দেন। বিষয়টি বেশি দূর গড়ায়নি। সতীর্থ ওপেনার উসমান খোয়াজা এসে কনস্টাসকে সরিয়ে নিয়ে যান। পাশাপাশি কোহলিকেও অনুরোধ করেন ঘটনাটি সেখানে শেষ করে দেওয়ার জন্য। ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসেন আম্পায়ারেরাও। বার বার সেই ঘটনার রিপ্লে দেখাতে থাকে সম্প্রচারকারীরা। সেখানে অবশ্য দেখা গিয়েছে, কনস্টাস মাথা নিচু করে ব্যাট হাতে যাচ্ছিলেন। কোহলিই যাওয়ার পরে দিক পরিবর্তন করে কনস্টাসের কাছে গিয়ে তাঁকে গিয়ে ধাক্কা মারেন। ধারাভাষ্যকার মাইকেল ভন বলছিলেন, কনস্টাসকে উত্তেজিত করার জন্যই এ কাজ করেছেন কোহলি। তবে এই কাজের তীব্র নিন্দা করেছেন। বলেছেন, “কোহলির মতো সিনিয়র ক্রিকেটারের এমন কাজ শোভা পায় না।” খুশি হতে পারেননি সুনীল গাওস্করও। বলেছেন, “দু’জনকেই শাস্তি দেওয়া উচিত।” রিকি পন্টিং বলেন, “কোহলির হাঁটাটা এক বার খেয়াল করুন। সোজা হাঁটতে হাঁটতে ডান দিকে এসে জোর করে ওকে ধাক্কা মারল।”

অন্য বিষয়গুলি:

BGT 2024-25 India vs Australia Sam Konstas Jasprit Bumrah Virat Kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy