Advertisement
E-Paper

ব্লুটুথ যন্ত্রের ফরেন্সিক পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, বাজেয়াপ্ত হওয়া ব্লুটুথ সংযোগকারী ডিভাইসটি কখন সঞ্জয়ের ফোনের সংযোগে এসেছিল, তা তো ফরেন্সিক পরীক্ষাতেই স্পষ্ট হওয়ার কথা। তদন্তকারীরা এ বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:২৩
Share
Save

আর জি কর মেডিক‍্যাল কলেজের চিকিৎসক-পড়ুয়া খুন-ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের আইনজীবীরা তেমন কঠিন প্রশ্ন না করায় তদন্তকারীরা পার পেয়ে গিয়েছেন বলে তাঁর রায়ে মন্তব্য করেছেন বিচারক অনির্বাণ দাস। তা বিশ্লেষণ করে রাজ‍্যের প্রবীণ পুলিশকর্তা বা আইনজীবীরাও মনে করছেন, কয়েকটি বিষয়ে তলিয়ে প্রশ্ন করলেই বিচারপর্বে আর জি কর-কাণ্ডের রহস‍্যভেদের জরুরি সূত্র উঠে আসত।

যেমন, সঞ্জয়ের মোবাইলের ব্লুটুথের ইয়ারপ্লাগটি নিয়ে বিতর্ক ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট বিশ্লেষণে এড়ানো যেত বলে প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের অভিমত। সঞ্জয়ের মোবাইল ফোনের ব্লুটুথ সংযোগকারী ডিভাইসটি নির্যাতিতার চাদরের তলা থেকে উদ্ধার হয়েছিল বলে দাবি কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীদের। সঞ্জয়ের পাল্টা দাবি, ওই ব্লুটুথ ডিভাইসটি তার নয়। একই রঙের অন‍্য একটি ব্লুটুথ ডিভাইস।

প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, বাজেয়াপ্ত হওয়া ব্লুটুথ সংযোগকারী ডিভাইসটি কখন সঞ্জয়ের ফোনের সংযোগে এসেছিল, তা তো ফরেন্সিক পরীক্ষাতেই স্পষ্ট হওয়ার কথা। তদন্তকারীরা এ বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। অভিযুক্তের আইনজীবীরাও আদালতে তদন্তকারীদের এ বিষয়ে তেমন চেপে ধরেননি। চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃত্যুর আগে, না পরে ওই সরঞ্জামে মোবাইল ফোনের সঙ্গে ব্লুটুথের সংযোগ করা হয়েছিল, তা স্পষ্ট হলে সঞ্জয়ের জড়িত থাকার একটি প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারত বলে ওই পুলিশকর্তা ও কয়েক জন প্রবীণ আইনজীবীর অভিমত।

সঞ্জয়কে গ্রেফতারের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে, ৯ অগস্ট রাতে জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই তার মোবাইলটি পুলিশের তদন্তকারী মহিলা অফিসার নিয়ে নেন। পর দিন সকালে সেটি ফিরিয়েও দেন। গ্রেফতারের পরে তা ফের বাজেয়াপ্ত দেখানো হয়েছে। আদালতের সাক্ষ্যগ্রহণের সময় ওই মহিলা অফিসারের যুক্তি, মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই মোবাইলটি রেখে দেওয়া হয়। তবে প্রবীণ আইনজ্ঞ ও পুলিশকর্তাদের মতে, তদন্তের আচরণ বিধি অনুযায়ী, গ্রেফতারের আগে মোবাইল ফোন রেখে দেওয়াও অত‍্যন্ত গর্হিত কাজ। সিবিআইয়ের সূত্র মারফতও ওই মোবাইল ফোন থেকে তথ‍্য মুছে ফেলা বা রদবদল করা হয়ে থাকতে পারে বলে দাবি।

ধন্দ ও প্রশ্ন রয়েছে টালা থানার এক তদন্তকারী অফিসারের জেনারেল ডায়েরিতে ‘এন্ট্রির’ সময় এবং তাঁর থানায় থাকার সময় নিয়েও। যা নিয়ে বিচারকও বিস্ময় প্রকাশ করেন। আইনজীবী ও প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের একাংশও মনে করছে, এ ক্ষেত্রে তথ্য বিকৃতির আশঙ্কা থেকেই যায়। সিবিআইয়ের এক কর্তাও বলেন, ‘‘ওই অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে আমরাও উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম।’’ তাঁর মতে, পুলিশের আচরণে যে গোলমাল আছে, তা বিচারকের পর্যবেক্ষণে ও মন্তব্যেও উঠে এসেছে।

তবে পুলিশি তদন্তের পরে সিবিআই কার্যত নতুন করে কোনও তদন্তই করেনি বলে বিচারকের পর্যবেক্ষণও রায়ে উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের কর্তাদের সূত্রে দাবি, তথ্য বিকৃতির অভিযোগ থাকায় টালা থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিয়ো রেকর্ডার) বাজেয়াপ্ত করে তা তিন দফায় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। সে কথা নিম্ন আদালতে কেস ডায়েরি ও লিখিত রিপোর্টের মাধ্যমে পেশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বন্ধ খামের স্টেটাস রিপোর্টেও বিষয়টি জানানো হয়। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ডিভিআর অনেকাংশে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলেও তিন ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। নষ্ট করার বিষয়টি এখনও তদন্তের আওতায় রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Case Verdict

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}