Advertisement
E-Paper

বাজির বর্জ্য নিয়ে প্রশাসন সতর্ক হবে কবে? এখনও পুকুরে ভাসছে মরা মাছ

পরিবেশকর্মী থেকে চিকিৎসকদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, বাজির সবই বাজে। বাজি ফাটানো যতটা খারাপ, ততটাই খারাপ ফাটা বাজির খোল বা বারুদের অংশ যেখানে-সেখানে পড়ে থাকার বিষয়টি।

An image of Dattapukur Blast

বাজির বর্জ্য নিয়ে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু শোনা যায় না। —ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৫
Share
Save

বিস্ফোরণে মৃত্যু হলেই বাজির বিপদ নিয়ে আলোচনা হয়। দায় কার, তা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে ঠোকাঠুকিও চলতে থাকে। কিছু ধরপাকড়ও হয়। কিন্তু এ সবের মধ্যে বাজির বর্জ্য নিয়ে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু শোনা যায় না। দত্তপুকুরের মোচপোলে বিস্ফোরণে ন’জনের মৃত্যুর পরেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। উদ্ধার হওয়া বাজি ভেজানো জল পুলিশ ভবন চত্বরে প্রকাশ্যে জমে থাকার দৃশ্যই হোক বা পুকুরে ভাসতে থাকা মরা মাছ— বাজির বর্জ্য নিয়ে সার্বিক অবহেলার দিকে আঙুল তুললেও সে ভাবে কারও হেলদোল নেই। অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনও এ ব্যাপারে নির্বিকার।

পরিবেশকর্মী থেকে চিকিৎসকদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, বাজির সবই বাজে। বাজি ফাটানো যতটা খারাপ, ততটাই খারাপ ফাটা বাজির খোল বা বারুদের অংশ যেখানে-সেখানে পড়ে থাকার বিষয়টি। বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটলে যা আরও চরম আকার নেয়। তখন ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জায়গা বিষিয়ে যায়। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জীবজগতের উপরে। দ্রুত ভারী বৃষ্টি হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই প্রভাব অর্ধেক বছরেরও বেশি সময় ধরে থেকে যেতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। বৃষ্টি না হলে বিপদ আরও বাড়ে। প্রভাব থেকে যেতে পারে এক বছরেরও বেশি সময়!


মোচপোলে এখনও ঘটনাস্থলের আশপাশে বারুদের চাপা গন্ধ। কিছু কিছু জায়গায় আবার রাসায়নিকের এমনই প্রভাব যে, নাকে রুমাল ছাড়া চলা যায় না। আশপাশের অন্তত ছ’টি এমন পুকুর বা জলাশয় চোখে পড়ল, যেখানে মরা মাছ ভাসছে। কয়েকটি পুকুরের জলের রংই বদলে গিয়েছে। মরা মাছ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হলেও প্রতিদিনই নতুন করে মাছ মরে ভেসে উঠছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘বাজি মহল্লায় জলাশয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ঘটনা ঘটলে এই জলাশয়ের জল যেমন ব্যবহার করার চেষ্টা হয়, তেমনই প্রয়োজন পড়লে এই জলেই বারুদের বস্তা থেকে রাসায়নিকের পাত্র ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বিস্ফোরণের পরে হাজার হাজার বস্তা জলাশয়ে ফেলা হয়েছে। এখনও ধরপাকড় এড়াতে বহু গুদাম থেকে বস্তা বস্তা বাজি আর বাজি তৈরির উপকরণ লোক লাগিয়ে পুকুরে ফেলা হচ্ছে।’’

বিস্ফোরণস্থলের কাছেই আর একটি বাড়ির বাসিন্দা সইদা বিবি বললেন, ‘‘বিস্ফোরণে ছাদ উড়ে এসে পড়ায় আমাদের একটা গরু মারা গিয়েছে। আরও দুটো গরু অসুস্থ। এই বিষাক্ত পরিবেশে কত দিন বাঁচবে, জানি না।’’ পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এমন পরিবেশ যে কোনও প্রাণীর পক্ষেই ক্ষতিকর। যে হেতু এই ধরনের প্রাণীরা মাটি থেকে বা পাত্রে মুখ দিয়ে খাবার খায়, তাই এদের শরীরেই বারুদের বিষ যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। এক পশু চিকিৎসক বললেন, ‘‘সব চেয়ে বেশি সমস্যা কুকুরদের ক্ষেত্রে। কুকুরের ইন্দ্রিয় বেশি সজাগ, বারুদের গন্ধ আছে, এমন এলাকায় তারা আসতে চায় না। মোচপোলের ওই বিস্ফোরণস্থলের সব কুকুরই নিশ্চয়ই এলাকাছাড়া! কোনও ভাবে রাসায়নিক পেটে গেলে কোনও কুকুর-বেড়ালকেই বাঁচানো সম্ভব নয়।’’

পরিবেশকর্মী নব দত্ত বললেন, ‘‘বাজির খোলের সব চেয়ে বড় বিপদ, জলের সঙ্গে সেগুলি পুরো মেশে না। ওই সব বর্জ্য নিকাশির মুখ বন্ধ করে জল জমার সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। তা ছাড়া, যা হচ্ছে, তাতে শুধু বিস্ফোরণস্থলের কাছের বাসিন্দাদের উপরে তাৎক্ষণিক প্রভাব নয়, জীবজগতের উপরেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যে ভাবে কাজ করা দরকার ছিল, তা করা হয়নি।’’

অভিযোগ, বারাসতের পুলিশ ভবনের বাইরে দেখা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া বাজিতে প্রকাশ্যেই দমকলের গাড়ি থেকে জল ঢালা হচ্ছে। তার পরে বারুদ মেশা সেই জলই ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের রাস্তায়। দীর্ঘক্ষণ সেই জল জমে থাকতেও দেখা গিয়েছে। জনস্বাস্থ্যের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বললেন, ‘‘ওই জায়গার আশপাশে যদি বাজার বসে, তা হলে সেটা কতটা ক্ষতিকর, ভেবে দেখুন। সে ক্ষেত্রে সরাসরি মানুষের শরীরেই ঢুকবে বাজির বর্জ্য। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাজি তৈরি হয় যেখানে, সেই চত্বরের বাসিন্দাদের শরীরে ক্ষতিকর যৌগ বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। কিন্তু দ্রুত এ সব ব্যাপারে সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ না করলে বড় সমস্যা তৈরি হতে বাধ্য।’’
পদক্ষেপ কি করা হবে? বারুদের তদন্তের মতোই উত্তর ধোঁয়াশাপূর্ণ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dattapukur Blast police investigation Firecrackers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}