প্রশাসনিক কাজে অনলাইন পরিষেবা চালু করে জাতীয় স্তরে ইনাম জিতেছিল পশ্চিমবঙ্গের অর্থ দফতর। আর সেই রাজ্যেরই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কিনা নিজেদের ওয়েবসাইটে ইন্টারভিউয়ের প্রার্থী-তালিকা প্রকাশে নারাজ!
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) নিয়ে এমন খবর চাউর হতেই তাজ্জব বনে গিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের প্রশ্ন, রাজ্য জুড়ে এই নিয়োগে প্রার্থী-তালিকা ঘোষণার সব চেয়ে স্বচ্ছ আর সুবিধাজনক মাধ্যম তো ওয়েবসাইটই। আর তাতেই কিনা টেট নেই! কেন? খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনে ই-পরিষেবা চালু করতে সব থেকে তৎপর। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এমন মনোভাব কি মুখ্যমন্ত্রীর অভিপ্রায়েরই বিরোধিতা নয়? পর্ষদের তরফে এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য শুক্রবারেও দাবি করেছেন, ‘‘যা করা হয়েছে, নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।’’
গত বছর পর্ষদের ওয়েবসাইট জাল হয়েছিল। সেই জাল ওয়েবসাইটের খপ্পরে প়ড়ে প্রতারিত হন কয়েক জন পরীক্ষার্থী। টেট-উত্তীর্ণ যে-সব প্রার্থীকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হবে, তাঁদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করলে ফের পরীক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হতে পারেন— এই যুক্তি দেখিয়েই অনলাইন ব্যবস্থা থেকে সরে গিয়েছে পর্ষদ। এসএমএস এবং ই-মেলে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হচ্ছে।
এই ঘোষণার পরে অনেকেরই আশঙ্কা, ওয়েবসাইটকে এ ভাবে এড়িয়ে যাওয়ায় পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই অস্বচ্ছতা আসতে পারে। ‘‘জালিয়াতির ভূত দেখিয়ে ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ হয়নি। কিন্তু বকলমে নিয়োগে ভূতেরাই খেল্ দেখাবে,’’ আশঙ্কা এক টেট পরীক্ষার্থীর। তাঁর মতে, তালিকা সামনে না-এলে যোগ্য প্রার্থীদের টপকে তুলনায় কম নম্বর পেয়েও অনেকে ডাক পেয়ে যেতে পারেন। প্রযুক্তিকে দূরে রাখার এই সিদ্ধান্তের দূরপ্রসারী বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন টেট-উত্তীর্ণ অন্য এক প্রার্থী। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য প্রশাসন যখন প্রযুক্তির অগ্রগতিকে উন্নয়নের অবলম্বন করতে চাইছে, সেই সময়েই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এ ভাবে সাইট-বিমুখ হওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তির উপরে আমজনতার ভরসা টলে যেতে পারে।
অস্বচ্ছতার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ নিয়ে কিছুটা সুর নরম হয়েছে পর্ষদের। তবে এ দিন তালিকা প্রকাশের দায় কার্যত জেলা সংসদগুলির উপরেই চাপিয়ে দিয়েছে তারা। পর্ষদের এক পদাধিকারী বলেন, ‘‘জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদগুলি চাইলে তালিকা প্রকাশ করা হবে। তার আগে খতিয়ে দেখা হবে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা।’’ এই আশ্বাসে কোনও কাজ হবে বলে মনে করছে না পর্ষদের একটি বড় অংশ। সেখানকার এক কর্তার বক্তব্য, জেলা সংসদের কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে যে, পর্ষদ-প্রধানের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রার্থী-তালিকা ওয়েবসাইটে দেওয়ার কথা বলবে! সাইট-সুরক্ষার প্রশ্নেই সব শিকেয় তুলে রাখা হতে পারে বলে ওই কর্তার ধারণা।
অস্বচ্ছতার অভিযোগে পর্ষদ কান না-দিলেও প্রার্থীদের ক্ষোভ কমছে না। টেট পাশ করার পরেও প্রশিক্ষিত পরীক্ষার্থীরা ডাক পাচ্ছেন না, এই অভিযোগ তুলে এ দিন সল্টলেকে পর্ষদের মূল অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। সবই যদি স্বচ্ছ থেকে থাকে, তা হলে এমন বিক্ষোভ কেন? সরাসরি জবাব না-দিয়ে পর্ষদ-প্রধান মানিকবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ওঁরা যে প্রশিক্ষিত, কে বলল? আপনারা (সাংবাদিকেরা) কি ওঁদের সার্টিফিকেট দেখেছেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy