Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শক্তি-স্মৃতিতে ডুব দিল গোপবান্দি

তাঁর কাহিনি থেকেই শক্তি সামন্ত তৈরি করেছিলেন ‘অমানুষ’, ‘অনুসন্ধান’, ‘অন্যায় অবিচার’-এর মতো পুরোদস্তুর জনপ্রিয় বাণিজ্যিক বাংলা ছবি। যার প্রতিটিই সেই সময়কার মেগা হিট! আবার তাঁর কাহিনি থেকেই ঋত্বিক ঘটক তৈরি করেছিলেন ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র মতো কালজয়ী ছবি। জীবিত কালেই উত্তর কলকাতার সিঁথিতে তাঁর বসতবাড়ির সামনের রাস্তার নাম রাখা হয়েছে তাঁরই নামে!

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০০:৩৭
Share: Save:

তাঁর কাহিনি থেকেই শক্তি সামন্ত তৈরি করেছিলেন ‘অমানুষ’, ‘অনুসন্ধান’, ‘অন্যায় অবিচার’-এর মতো পুরোদস্তুর জনপ্রিয় বাণিজ্যিক বাংলা ছবি। যার প্রতিটিই সেই সময়কার মেগা হিট! আবার তাঁর কাহিনি থেকেই ঋত্বিক ঘটক তৈরি করেছিলেন ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র মতো কালজয়ী ছবি। জীবিত কালেই উত্তর কলকাতার সিঁথিতে তাঁর বসতবাড়ির সামনের রাস্তার নাম রাখা হয়েছে তাঁরই নামে!
এ হেন শক্তিশালী কাহিনিকার শক্তিপদ রাজগুরু কিন্তু বাঁকুড়ায় নিজের গ্রাম গোপবান্দিতে ফিরলে হয়ে যেতেন একেবারে গ্রামের মানুষ! ভুলে যেতেন কাজের ক্ষেত্র মুম্বই ও কলকাতাকে। বুড়ো বয়সেও গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে গরুর গাড়ি চেপে খেলা দেখতে যেতেন। আবার বড়জোড়ার সাহারজোড়ায় গ্রামের দুর্গাপুজোয় ঢাকের তালে নাচাও ছিল ‘মাস্ট’। গ্রামে এলে ‘নব মিলন সমিতি’র গ্রন্থাগারে বই জোগানোর কথাটাও ভুলতেন না কখনও। বৃহস্পতিবার কলকাতায় শক্তিপদ রাজগুরুর প্রয়াণের খবর শুনে এমনই সব স্মৃতিতে ডুব দিলেন গোপবান্দি গ্রামের বাসিন্দা, প্রয়াত লেখকের বড় ছেলের বাল্যবন্ধু স্বদেশ ভট্টাচার্য। বললেন, “গ্রামের মানুষের সঙ্গে এমন সাদামাটা মেলামেশা করতেন, তখন মনেই হত না ইনিই বাংলার ৩০০টি বইয়ের লেখক, হিন্দি ও বাংলা মিলিয়ে ৪২টি জনপ্রিয় ছবির কাহিনীকার!”
বস্তুত, বৃহস্পতিবার সারা দিন বাঁকুড়া জেলা জুড়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি মহলে একটাই চর্চা, শক্তিপদ রাজগুরু নেই। এ বছর ফেব্রুয়ারিতেই যিনি পা দিয়েছিলেন ৯৩ বছরে। ছেলেবেলায় পড়েছেন গ্রাম লাগোয়া দধিমুখা হাইস্কুলে। সহপাঠীরা কেউ বেঁচে নেই। ওই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথ করের সঙ্গে শক্তিপদর ছিল বিশেষ হৃদ্যতা। নিজের জেলা বাঁকুড়ার খবর জানতে তাঁর কাছ থেকেই সংগ্রহ করতেন এই জেলার পত্র-পত্রিকা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথবাবু বলছিলেন, “চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যেও ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। আর বাঁকুড়ায় কোনও অনুষ্ঠানে এলে দেখা তো হতই।” নিজের গ্রামের প্রতি বিশেষ টানের কথা বলতে গিয়ে বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের বাংলার শিক্ষক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় শোনালেন আর এক গল্প। “এক বার কলেজে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় শতবর্ষ স্মরণে বক্তা হিসেবে এনেছিলাম শক্তিপদ রাজগুরুকে। রেখেছিলাম নামি হোটেলে। কিন্তু, সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বললেন, ‘বাঁকুড়ায় এসেছি, নিজের গ্রামে যাব না!’ এই বলে গাড়ি হাঁকিয়ে সোজা ছুটলেন গ্রামে। ফিরলেন দু-দিন কাটানোর পর।”বললেন অরবিন্দবাবু।
জেলার সাহিত্যচর্চার খবর জানতে বাঁকুড়ায় এলেই ডাক পড়ত অবনী নাগের। ‘আনন্দ বিপণি’র দোকানে বসে চোখের জল চেপে রাখতে পারছেন না অবনীবাবু। “মাঝে মাঝে কলকাতা যাওয়া হত আনন্দ বাগচী আর শক্তিপদদা-র সঙ্গে দেখা করার জন্য। আনন্দদা-র পরে শক্তিপদ রাজগুরুও চলে গেলেন। কলকাতার সব আড্ডাই ভেঙে গেল। কে আর জানতে চাইবেন, কে কেমন লিখছেন এখন?”আক্ষেপ ঝরে পড়ল প্রৌঢ় অবনীবাবুর গলায়।

অন্য বিষয়গুলি:

swapan bandopadhyay gopbandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE