Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
ছাত্রী ২৬৬, শিক্ষিকা ৩

শিক্ষিকা কমায় ক্ষোভ সিমলাপালের স্কুলে

সাত বছর আগে স্কুল চালুর সময় ১০০ জন পড়ুয়ার জন্য ছিলেন পাঁচ জন শিক্ষিকা। বছর-বছর স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমান শিক্ষাবর্ষে সিমলাপাল ব্লকের সেই দুবরাজপুর হাতিবাড়ি সম্মিলনী বালিকা বিদ্যামন্দিরে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৬৬। কিন্তু শিক্ষিকার সংখ্যা পাঁচ থেকে কমে হয়েছে মাত্র তিনজন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিমলাপাল শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৩
Share: Save:

সাত বছর আগে স্কুল চালুর সময় ১০০ জন পড়ুয়ার জন্য ছিলেন পাঁচ জন শিক্ষিকা।

বছর-বছর স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমান শিক্ষাবর্ষে সিমলাপাল ব্লকের সেই দুবরাজপুর হাতিবাড়ি সম্মিলনী বালিকা বিদ্যামন্দিরে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৬৬। কিন্তু শিক্ষিকার সংখ্যা পাঁচ থেকে কমে হয়েছে মাত্র তিনজন। করণিক নেই। অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষিকার অভাবে পঠনপাঠন কার্যত শিকেয় উঠেছে এই স্কুলে। কোনওরকমে দায়সারা ভাবে চলছে স্কুল। পড়াশোনার মান ক্রমশ নামছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।

অভিভাবকদের ক্ষোভ, শিক্ষিকার অভাবের জন্য অধিকাংশ দিনই সব ক্লাস হয় না। প্রশাসনের সর্বস্তরে বারবার জানানোর পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সিমলাপালের বিডিও সৌম্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “টিচার ইনচার্জ-সহ ওই স্কুলে ৫ জন শিক্ষিকা ছিলেন। বর্তমানে টিচার ইনচার্জ-সহ মাত্র তিনজন রয়েছেন। তারমধ্যে আরও একজন ছুটিতে যাবেন। ফলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।” তিনি জানান, বিষয়টি অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে জানিয়ে নতুন শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য বলেছেন।

এলাকায় মেয়েদের জন্য একটি হাইস্কুলের দাবি দীর্ঘদিন ধরে ছিল সিমলাপালের দুবরাজপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। ২০০৭ সালে এলাকার মানুষের দান করা জমিতে গড়ে ওঠে দুবরাজপুর হাতবাড়ি সম্মিলনী বালিকা বিদ্যামন্দির। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শুরু হয়। দুবরাজপুর, খয়েরগেড়িয়া, রায়বাঁধ, দোমোহানি, কুড়চিডাঙা, হাতিবাড়ি, শুশুনিয়া-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মেয়েরা এই স্কুলে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবক দীপক রায়, তুষার মণ্ডলদের অভিযোগ, “চারটে ক্লাস, আর দিদিমণি মোটে তিনজন। তাও কোনওদিন থাকেন মাত্র দু’জন। পড়াশোনা আর হবে কী করে? ছাত্রীদের সামলাতেই তো দিন কাবার হয়ে যাচ্ছে দিদিমণিদের!”

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সীমা সেন, সঙ্গীতা মর্দন্যা, সোমা মৌরি জানায়, অঙ্কের দিদিমণি নেই। সব ক্লাস নিয়মিত হয় না। তাই স্কুলে যেতেও ভালো লাগে না।

অভিভাবক তথা বিজেপি-র দুবরাজপুর অঞ্চল সভাপতি দিলীপকুমার ঘোষের অভিযোগ, “আশপাশের গ্রামের বহু মেয়ে এই স্কুলে পড়তে আসছে। দিন দিন ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছেও। কিন্তু শিক্ষিকার অভাবে পঠনপাঠন যে ভাবে ব্যাহত হচ্ছে তাতে অনেকেই আগামীদিনে আর এই স্কুলে তাঁদের মেয়েদের ভর্তি করবেন না। প্রশাসন এ দিকে নজর না দেওয়ায় জঙ্গলমহলের এই স্কুলের পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট হতে বসেছে।” রাজনৈতিক ভাবে বিরোধী হলেও দিলীপবাবুর সঙ্গেই গলা মিলিয়েছেন তৃণমূলের দুবরাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মুক্তা লোহার। তিনিও বলেন, “শিক্ষিকার অভাবে ওই স্কুলে পঠন পাঠন তো লাটে উঠতে বসেছে। স্কুলের একদিকের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা, নতুন শিক্ষিকা, করণিক নিয়োগ করার পাশপাশি স্কুলটিকে মাধ্যমিকে উন্নীত করার দাবি জানানো হয়েছে শিক্ষা দফতরের কাছে।”

স্কুলের টিচার ইনচার্জ অর্চনা হেমব্রমের আক্ষেপ, “স্কুলে করণিক নেই, একজন পিওন রয়েছেন। সীমানা প্রাচীর নেই, দিনভর ছাত্রীদের সামলাতেই সময় চলে যায়। ছাত্রীদের পড়ানো থেকে প্রশাসনিক যাবতীয় কাজকর্ম আমাদেরই করতে হয়। পদে পদে নাজেহাল হচ্ছি আমরা।” তিনি জানান, নতুন শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দরবার করেছি। কিন্তু কিছুই হয়নি। সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেখানেই রয়ে গিয়েছে। সিমলাপাল চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সঞ্জয় পান্ডা বলেন, “ওই বালিকা বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষিকা কম রয়েছে জানি। এতে পড়ুয়া থেকে শিক্ষিকা সকলের অসুবিধা হচ্ছে এটাও সত্যি। অন্য স্কুল থেকে শিক্ষিকা এনে অসুবিধা দূর করার চেষ্টা চলছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

teacher simlapal school agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE