Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রাস্তায় বেনিয়ম, মন্ত্রীকে চিঠি সভাধিপতির

সরকারি টাকায় নির্মীয়মাণ রাস্তার গুণগত মান নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মী থেকে এলাকাবাসীকে। এ বার সেই প্রশ্ন তুললেন খোদ জেলা সভাধিপতি। পূর্ত দফতরের গড়া রাস্তার মান খারাপ ও প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ তুলে দফতরের মন্ত্রীকে ঘটনার তদন্ত করার আর্জি জানালেন বাঁকুড়ার সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী।

এই সেই রাস্তা। বাঁকুড়ার শালবনির যমুনাজোড়ে চলছে সেতু তৈরির কাজ।—নিজস্ব চিত্র

এই সেই রাস্তা। বাঁকুড়ার শালবনির যমুনাজোড়ে চলছে সেতু তৈরির কাজ।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৮
Share: Save:

সরকারি টাকায় নির্মীয়মাণ রাস্তার গুণগত মান নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মী থেকে এলাকাবাসীকে। এ বার সেই প্রশ্ন তুললেন খোদ জেলা সভাধিপতি। পূর্ত দফতরের গড়া রাস্তার মান খারাপ ও প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ তুলে দফতরের মন্ত্রীকে ঘটনার তদন্ত করার আর্জি জানালেন বাঁকুড়ার সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার জেলা পরিষদে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রকাশ্যেই সেই অভিযোগের কথা জানালেন। এও জানালেন, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য থেকে তদন্তকারী দল রাস্তার কাজ খতিয়ে দেখতে আসবে।

বাঁকুড়া জেলার দু’টি রাস্তার কাজ নিয়ে এ দিন অভিযোগ তুলেছেন অরূপবাবু। তার মধ্যে একটি শালতোড়া-বাঁকুড়া রাস্তা। সেই রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করেছে পূর্ত দফতর। এই কাজটি প্রায় শেষের মুখে। অন্যটি বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তা। শেষবার জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাস্তা সংস্কার কাজের শিলান্যাস করে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর’ তৈরি করা হবে। রাস্তাটি তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।

অরূপবাবুর অভিযোগ, “বাঁকুড়া-শালতোড়া রাস্তায় মূলত শালতোড়া থেকে ছাতনা পর্যন্ত অংশেই কাজে ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। জনবসতি কম থাকায় রাস্তার ওই অংশে দুর্নীতি হয়েছে।” টেন্ডারে যে সব কাঁচামাল দিয়ে রাস্তা গড়ার কথা ছিল, রাস্তা তৈরির সময় তা ব্যবহার করা হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, “টেন্ডারে বলা ছিল পুরনো পিচ উঠিয়ে ইঁট, বালি, পাথর দিয়ে রাস্তাটি গড়তে হবে। কিন্তু বাস্তবে ইঁট দেওয়া হয়নি। শুধু বালি ও পাথর দিয়ে কাজ সারা হয়েছে। পুরনো পিচও তোলা হয়নি।” রাস্তা যতটা পুরু করার কথা ছিল ততটা হয়নি বলেও অভিযোগ তাঁর।

এই ঘটনার পিছনে ঠিকা সংস্থা ও একশ্রেণির আধিকারিকের আঁতাত রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। সভাধিপতির বক্তব্য, “প্রায় ৮১ কোটি টাকা এই রাস্তার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। কিছু আধিকারিক ও ঠিকা সংস্থার জোটই ঘটনার জন্য দায়ী। আমি চাই তদন্ত করা হোক। রাজ্য দ্রুত তদন্ত দল পাঠাচ্ছে বলে আমাকে দফতরের মন্ত্রী জানিয়েছেন।”

অন্য দিকে, বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তাতেও টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, কথা ছিল ওই রাস্তার খানা খন্দ ডিভিসির ছাই ও বালি দিয়ে ভরানো হবে। কিন্তু বাস্তবে শুধু ছাই দিয়ে রাস্তার গর্ত ভরাট করা হচ্ছে। এতে রাস্তার গুণগত মান খারাপ হবে।” দু’টি রাস্তা সম্পর্কে অভিযোগ কয়েক সপ্তাহ আগেই তিনি রাজ্যের পূর্ত মন্ত্রীকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন। এ দিন লিখিত ভাবে মন্ত্রীর দফতরে তিনি কিছু তথ্য পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অরূপবাবু।

যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ পূর্ত দফতরের জেলার আধিকারিকরা। এক আধিকারিক বলেন, “সভাধিপতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু মন্তব্য করা যাবে না। তবে তদন্ত হলে হোক। আপত্তি নেই।” তবে প্রশাসনের কিছু আধিকারিকের মন্তব্য, জেলার কত রাস্তা তৈরি নিয়েই তো কত অভিযোগ ওঠে। তার মধ্যে জেলা পরিষদের নিজস্ব রাস্তাও থাকে। সে সব নিয়ে তো এত জলঘোলা হয় না। ওই দু’টি রাস্তা নিয়ে জেলা পরিষদের হঠাৎ এত তৎপরতার কারণ কী? ঠিকাদার সংক্রান্ত গোলমালের দিকেই তাঁরা ইঙ্গিত করেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

shalbani jamunajor arup chakrabarty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE