Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মেয়ের শেষ ইচ্ছের মর্যাদা দিতেই পূর্ণ তদন্ত চান বাবা

রুমমেটদের আচার-ব্যবহারে সে যে হতাশ, জানিয়েছিল আগেও। কিন্তু তাতে আত্মহত্যা করার মতো মানসিক অবস্থা তৈরি হয়েছে, এ কথা মেয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এক বারও তাঁরা বুঝতে পারেননি মহারাষ্ট্রে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া মেয়ের শেষকৃত্য সেরে বাড়ি ফেরার পরে বলছেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিত্‌সক নয়ন মুখোপাধ্যায়।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০০:৪১
Share: Save:

রুমমেটদের আচার-ব্যবহারে সে যে হতাশ, জানিয়েছিল আগেও। কিন্তু তাতে আত্মহত্যা করার মতো মানসিক অবস্থা তৈরি হয়েছে, এ কথা মেয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এক বারও তাঁরা বুঝতে পারেননি মহারাষ্ট্রে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া মেয়ের শেষকৃত্য সেরে বাড়ি ফেরার পরে বলছেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিত্‌সক নয়ন মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, গত শনিবার রাতে মেয়ে নিশ্চয় এমন কিছু ঘটেছিল যাতে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। নয়নবাবু জানান, এই ঘটনার তদন্ত যাতে ঠিক মতো হয়, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে সে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও তা জানাবেন।

শনিবার রাতে মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে মেয়েদের হস্টেলের ঘরে মেলে পুরুলিয়ার কেতিকা এলাকার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কার ঝুলন্ত দেহ। তাঁর বিছানায় যে সুইসাইড নোট পাওয়া যায়, যাতে তিনি নিজের মৃত্যুর জন্য তিন রুমমেট প্রিয়াঙ্কা কাবরা, প্রিয়া দীপক কুমার ও স্নেহাল রমেশ মহাজনকে দায়ী করেছেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওই তিন ডাক্তারি ছাত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

নয়নবাবুর দাবি, মহারাষ্ট্রে নাসিরাবাদ থানায় পৌঁছে মেয়ের সুইসাইড নোট হাতে পেয়ে তিনি বুঝতে পারেন, সেই সন্ধ্যায় কিছু একটা ঘটেছিল, যা মেয়ে কাউকে জানাতে পারেনি বা চায়নি।

নয়নবাবু বলেন, “ওখানে গিয়ে শুনলাম, প্রিয়াঙ্কার বাকি তিন বন্ধু আগেই খেতে বেরিয়ে গিয়েছিল। ফিরে দেখে, ভিতর থেকে দরজা বন্ধ। তার পরে দরজা ভেঙে ওর দেহ উদ্ধার হয়।” নয়নবাবুর দাবি, “মেয়ে আমাকে বলত, এক সঙ্গে থেকেও কাযর্ত একঘরে করে রাখা হত। গত জানুয়ারিতে পেটে ব্যথার জন্য ওকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তখনও ও রুমমেটদের সাহায্য পায়নি। কিন্তু ও এ সব নিয়ে জলঘোলা চায়নি। কিন্তু, ও যে ভিতরে ভিতরে এতটা ভেঙে পড়েছে, বুঝতে পারিনি। সে দিন নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটেছিল যার জন্য এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।”

নয়নবাবু বলেন, “আমি চাই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। আমি ওখানে গিয়ে বুঝেছি, অনেকে আমাদের পাশে আছেন। কেউ কেউ আবার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও করছেন। তাই আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করব, তিনি যাতে বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করেন। প্রকৃত দোষীরা যেন সাজা পায়। কারণ, ভিন্‌ রাজ্যে পড়তে গিয়ে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে কোনও পড়ুয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে আর র্যাগিং প্রতিরোধ আইন রয়ে যাবে খাতায়-কলমেই, তা হতে পারে না।” রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প বিষয়ক মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”

এই ঘটনা নিয়ে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের ভিত্তিতে পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার দিল্লিতে রাজ্যের রেসিডেন্ট কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “কমিশনারের তরফে মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা আমাদের কাছে এফআইআরের কপি চেয়েছিলেন। আমরা তা পাঠিয়ে দিয়েছি।” আইএমএ-র পুরুলিয়া জেলা শাখার সভাপতি মনোজিত্‌ মণ্ডল বলেন, “সংশ্লিষ্ট কলেজে র্যাগিং প্রতিরোধ শাখার ভূমিকা কী ছিল, তা খতিয়ে দেখতে হবে। দেশের সমস্ত কলেজে র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি বা শাখাগুলি যাতে কাযর্করী ভূমিকা নেয়, তা-ও সরকারকে দেখতে হবে।”

সুইসাইড নোটে প্রিয়াঙ্কা লিখে গিয়েছে, ‘প্লিজ ফাইটব্যাক অ্যাবাউট দিস ম্যাটার’। মেয়ের সেই ইচ্ছের মর্যাদা দেওয়াই সবচেয়ে বড় লক্ষ্য নয়নবাবুর।

অন্য বিষয়গুলি:

priyanka mukhopadhay prasanta pal purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE