অমিত কুম্ভকার।
অর্থের অভাবে প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডিও পার করতে পারেনি অমিতের দুই দিদি। সেই অর্থনৈতিক বাধা কাটিয়ে মানবাজারের সিন্দরি গ্রামের বাসিন্দা অমিত কুম্ভকার মাধ্যমিকে ৬১৭ নম্বর পেয়েছে। সিন্দরি হাইস্কুলের এই ছাত্র সব বাধা কাটিয়ে মাধ্যমিকে প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর তুলে হইচই ফেলে দিয়েছে।
মানবাজার-বরাবাজার রাস্তা ঘেঁষে রয়েছে অমিতদের টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি। এক কামরার ঘরের ভিতরে খাটিয়ায় মুড়ির চাল শুকোচ্ছে। বিদ্যুত্ নেই। মা-ছেলে দু’জনে ওই ঘরে মাথা গুঁজে থাকেন। অমিতের মা প্রমীলাদেবী বলেন, “আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। কোনও ক্রমে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। পয়সার অভাবে ওরা পড়াশোনা করতে পারেনি। আমার স্বামী টাটায় এক দোকানে অস্থায়ী কর্মীর কাজ করেন। কিন্তু সামান্য টাকায় সংসার চলে না। তাই আমি মুড়ি ভেজে ছেলেকে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে যাই। মুড়ি বিক্রির টাকায় মা-ছেলের চলে যায়।” স্থানীয় চিকিত্সক শ্যামাপদ হেমব্রম, পড়শি দুঃখভঞ্জন পরামানিক বলেন, “অমিতের বাবা চেয়েছিলেন ছেলে কোনও দোকানে কাজ করুক। তা হলে সংসারে দুটো পয়সা আসবে। নিজের জেদ ও অধ্যাবসায় অমিত এতদূর উঠে এসেছে। কয়েকজন স্কুল শিক্ষক ওর বই কেনার খরচ জুগিয়েছেন। কয়েকজন বিনা খরচে টিউশন পড়িয়েছেন।”
কিন্তু এর পর? প্রমীলাদেবী বলেন, “ছেলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। আমার তো তেমন আয় নেই। কী হবে জানি না।” আপাতত একটা ভাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার অমিত ও তার দু’তিন জন বন্ধু কিছু টাকা দিয়েছেন বরাবাজারের বাসিন্দা তথা পরিষদ সদস্য সুমিতা সিংহ মল্ল। তিনি বলেন, “এই টাকায় আপাতত ভাল স্কুল দেখে ওদের ভর্তি হতে বলেছি। বইপত্র ও পড়ার খরচ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করব।” সিন্দরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিয় মাহাতো বলেন, “অমিতদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। আমাদের স্কুলে থেকে উচ্চমাধ্যমিক পড়তে চাইলে সবরকম সহযোগিতা পাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy