শ্রমিক সংগঠনের প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।
বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী হোটেল-লজ রয়েছে ৪০০-রও বেশি। অথচ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র পেয়েছে মাত্র ১১টিই!
জাতীয় পরিবেশ আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশের জেরে ছাড়পত্রহীন তারাপীঠের ওই সংখ্যাগরিষ্ঠ হোটেল-লজগুলিই বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন মালিকপক্ষ। তার জেরে এক দিকে যেমন তারাপীঠে আসা পর্যটকদের হয়রানি জারি রয়েছে। উল্টো দিকে, পরিস্থিতি সামলাতে নিজেদের দোষ ঢেকে প্রশাসনের ঘরেই বল ঠেলে ব্যবসা বন্ধের ডাক দিয়েছিল ‘তারাপীঠ লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। কিন্তু, ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে শেষমেশ বুধবারের ওই বন্ধ তুলে নিতে বাধ্য হল সংগঠন। অবশ্য যার নেপথ্যে সংগঠনের নেতারা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ‘সহযোগিতা’র আশ্বাস মেলার দাবি করেছেন।
এ দিন সকালে সংগঠনের সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে তারাপীঠের পরিবেশ দূষণ নিয়ে সমস্যার সমাধানের ভরসা পাওয়ায় এবং পর্যটকদের কথা ভেবে বন্ধ প্রত্যাহার করা হল। আমরা আইনকে সম্মান জানিয়ে আদালতের নির্দেশ মেনেই চলব।” যদিও ঘটনা হল, ওই বন্ধ প্রত্যাহার হলেও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি পর্যটকদের। কারণ আদালতের নির্দেশের জেরে তারাপীঠের সংখ্যাগরিষ্ঠ হোটেল-লজই এখন বন্ধ।
তাই মঙ্গলবার দুপুর থেকে তারাপীঠের ওই সমস্ত হোটেল-লজ থেকে পর্যটকেরা ‘চেক আউট’ করে চলে যাওয়ার পরে নতুন করে আর কাউকে ঘরভাড়া দেওয়া হয়নি। মালিকদের সংগঠন ব্যবসা বন্ধের ডাক দেওয়ায় এ দিন সকাল থেকে তারাপীঠের সমস্ত রাস্তাঘাটেও খুব কম পর্যটক নজরে পড়েছে। সকাল ১১টা পর্যন্ত তারাপীঠের ভিতর দিয়ে যাওয়া রামপুরহাট-সাঁইথিয়া রাস্তার ধারের দোকানপাটগুলি বন্ধই ছিল। পরে লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে বন্ধ প্রত্যাহারের ব্যাপারে মাইকে প্রচার করা হলে ধীরে ধীরে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। তবে, প্রায় সব হোটেল-লজই বন্ধ থাকায় পর্যটকের ভিড় কম। তাই দোকান খুললেও বিক্রিবাটা কম হচ্ছে। এ দিন মন্দিরেও মা তারার দর্শনার্থীদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। তারাপীঠ তারামাতা সেবাইত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বললেন, “সুনসান মন্দির দেখে আগেকার দিনের জঙ্গলে ঘেরা তারাপীঠের কথা মনে পড়ছে। তবে, ব্যবসা-বন্ধ উঠে যাওয়ার পরে বিকেলে তারাপীঠে কিছু পর্যটক এসেছেন।” তাঁরা অবশ্য রামপুরহাটেই কোনও হোটেল-লজে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
“ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দিষ্ট ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যাপারে বন্ধ হয়ে যাওয়া তারাপীঠের হোটেল-লজ-রেস্তোরাঁগুলির একটিও আবেদন করেনি।” —কল্যাণ রুদ্রচেয়ারম্যান, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ
এ দিনই আবার পরিস্থিতির মোকাবিলায় সংগঠন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে। পরে মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। মঙ্গলবার রাতেই যোগাযোগ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আমাকে এ কথা জানিয়েছেন। তারাপীঠে পর্যটকেরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে পুজো দিতে পারেন, থাকতে পারেন, খাওয়াদাওয়া করতে পারেন, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিন্তাভাবনা করেন। তিনি তারাপীঠে এ ধরনের বন্ধ করতে নিষেধ করেছেন।” সে কথা জানিয়ে অনুরোধ করতেই সংগঠন বন্ধ প্রত্যাহার করে নেয় বলে আশিসবাবু জানিয়েছেন। তাঁর আরও দাবি, “রাজ্য সরকার বিষয়টি দেখবার কথা ভাবছে। পরিবেশ দফতরের মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার সঙ্গে এ নিয়ে আমার কথাও হয়েছে। তিনি তারাপীঠের হোটেল-লজ-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখভাল করে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।”
এ ব্যাপারে পরিবেশ মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। পরে ফোন করুন।” পরে আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, হোটেল-লজ-রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে মূলত রান্নাঘর থেকে দূষণ ছড়ায়। এ ধরনের যে সমস্ত জায়গায় রান্না করার ব্যবস্থা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে নোংরা জল পরিশোধনের ব্যবস্থা (‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট’) না থাকলে পর্ষদ থেকে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। কল্যাণবাবু বলেন, “পরিবেশ আদালত তারাপীঠে দূষণের এই বিষয়টির উপর জোর দিয়েছে। তারাপীঠে যে সব হোটেল-লজ-রেস্তোরাঁর ওই ব্যবস্থা নেই, তাদের বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।” এ ক্ষেত্রেই তাঁর দাবি, “ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা করে নির্দিষ্ট ছাড়পত্রটি নেওয়ার ব্যাপারে ওই সমস্ত হোটেল-লজ-রেস্তোরাঁগুলির একটিও আবেদন করেনি।” ছাড়পত্র রয়েছে এমন একটি হোটেলের ম্যানেজার সুনীল গিরি অবশ্য বলছেন, “তারাপীঠে অনেক ছোট ছোট লজ ও হোটেল রয়েছে। তাদের সামর্থ কম। রাজ্য সরকারেরই তাদের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত।”
এ দিকে, এ দিন সকাল থেকেই বিজেপি-র অসংগঠিত শ্রমিক সংগঠন এবং কংগ্রেস কর্মীরা এ নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। দর্শনার্থীদের থাকা-খাওয়া ও নিরাপত্তার দাবিতে এসডিও-র (রামপুরহাট) মাধ্যমে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, “আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy