সিউড়িতে ব্যাঙ্কের মূল শাখায় সমবায় সমিতির ম্যানেজারদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র
প্রায় দেড় মাস হতে চলল বীরভূম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক নিয়ে জটিলতা কাটেনি। বরং দিন দিন সঙ্কট যে আরও বাড়ছে, তার প্রমাণ মিলল সোমবার। ব্যাঙ্ক অবিলম্বে খোলার দাবিতে সিউড়িতে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের মূল শাখায় অবস্থান বিক্ষোভ করলেন জেলার বিভিন্ন সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির কর্মীরা। শুধু অবস্থান বিক্ষোভই নয়, ব্যাঙ্ক খোলার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে তাঁরা একযোগে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ, জেলাশাসক ও জেলা সমবায় দফতরে স্মারকলিপিও দিলেন।
প্রসঙ্গত, বিপুল অনাদায়ী খেলাপি ঋণের জন্য গত ১৫ মে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করেছে। তার পর থেকেই জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের ১৭টি শাখাতেই সব ধরনের লেনদেন বন্ধ রয়েছে। নিজেদের জমানো টাকা তুলতে না পারায় জেলাজুড়ে ওই ব্যাঙ্কের প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি আমানতকারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। তাঁদের গচ্ছিত মোট ৩৫০ কোটি টাকার ভবিষ্যত কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমস্যার আঁচ এসে পড়েছে ওই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত জেলার কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিগুলিও। প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও জেলার সাড়ে তিনশো কৃষি উন্নয়ন সমিতির মধ্যে অন্তত ৯৫টি সমবায়ে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেই সব সমিতির অধিকাংশেরই ৭০ শতাংশের বেশি অমানত কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় গচ্ছিত রয়েছে। ফলে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমানতকারীদের টাকাপয়সা ফেরানোর ক্ষেত্রে একই রকম সমস্যায় পড়েছে ওই সমবায় সমিতিগুলিও।
এ দিন বিক্ষোভ সমাবেশে সামিল হন নলহাটি ১ ব্লকের বুজুং কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার ডালিমকুমার পাল, নলহাটি ২ ব্লকের জেষ্টা হাঁসনপুর কৃষি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক আতিকুর রহমান, লাভপুর কুরুন্নাহার কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার মিহির চৌধুরী, দুবরাজপুরের কুখুটিয়া-চণ্ডীপুর কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার শ্যামল রুজ বা মুরারইয়ের কৈথা কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার আব্দুস সালেম। তাঁরা বলছেন, “আমাদের প্রত্যেক সমবায় সমিতির অধিকাংশ টাকাই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় মজুত রয়েছে। টাকার অঙ্ক কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি টাকা। যার একটা বড় অংশই গ্রামের প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট করে জমানো টাকা।” বর্তমানে সেই টাকা ফেরত দিতে না পেরে বেকায়দায় পড়েছে সমবায় সমিতিগুলি। কবেই বা সেই টাকা গ্রাহকেরা ফেরত পাবেন, সেই প্রশ্নের উত্তরও সমিতির কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভাবে দিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা সমবায় সমিতি খোলা রাখতে পারছেন না বলেই জানিয়েছেন।
অভিযোগ, পরিস্থিতির জেরে শুধু আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর সমস্যাই নয়, ভরা চাষের মরসুমে জেলা জুড়ে যে বিপুল সংখ্যক প্রান্তিক ক্ষুদ্র চাষি বীজ, সার কেনার জন্য কৃষি ঋণ নিয়ে থাকেন, তাও এবার দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কৃষি ঋণ দেয় সমবায় ব্যাঙ্ক। অন্য দিকে, নেওয়া কৃষিঋণও আদায় হচ্ছে না। অবিলম্বে সমস্যা না মিটলে যে, ওই সমবায় সমিতিগুলি অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সমবায় সমিতিগুলির ম্যানেজারেরা। ওই অবস্থান বিক্ষোভের আহ্বায়ক সাধন ঘোষ (যিনি জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও বটে) বলেন, “ব্যাঙ্ক বাঁচাতে রাজ্য সরকার সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করুক। সমবায় ব্যাঙ্ক নিয়ে অতীতেও বিভিন্ন রাজ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তা মেটাতে সেখানকার রাজ্য সরকার সচেষ্ট হয়েছে। প্রয়োজনীয় টাকা দিয়ে সমস্যা মিটিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি ব্যাঙ্কের লাইসেন্স ফেরত পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়, তা হলে জেলার অসংখ্য মানুষ বেঁচে যাবেন।” এ দিন স্মারকলিপি নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সিইও অজয় রাম উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর বদলে স্মারকলিপি নেন ব্যাঙ্কের অপর এক আধিকারিক মনসুর হক। ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের দাবি, “ইতিমধ্যেই আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষার্থে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। রাজ্য সরকারও সমস্যা মেটাতে বদ্ধ পরিকর।” তবে, সমস্যা কখন এবং কীভাবে মিটবে তাঁর কোনও দিশা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এখনও দেখাতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy