দীপক মাহাতো।—নিজস্ব চিত্র।
বাবা-মা দিনমজুর। সকাল হলে দু’জনেই কাজে বেরিয়ে যান। ফলে দিনভর বাড়ির গোটা ছ’য়েক ছাগল দেখভালের ভার এই ছোট্ট কাঁধেই নিতে হয়েছে। নিজেদেরই খাবার সব দিন সময়ে জোটে না। ছাগলের পালকে খাওয়াবে কে! ফলে পড়া বাকি রেখেই তাকে মাঠে ছাগল চড়াতে নিয়ে যেতে হত। রাতের পর রাত জেগে লণ্ঠনের আলোয় পড়াশোনা করে কেন্দার চাঁদড়া গ্রামের সেই দীপক মাহাতোই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৮০ শতাংশ নম্বর সবাইকে পিছনে ফেলেছে। গরিব পরিবারের ওই মেধাবী ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর ৪০০। তার মধ্যে সে বাংলায় ৮০, ইংরেজিতে ৮২, দর্শনে ৯০, ভূগোলে ৮২ ও ইতিহাসে ৬৬ নম্বর পেয়েছে।
গ্রামের উপর পাড়ায় টালির ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি ঘর। দীপকরা দু’ভাই, বাবা-মা ও দাদু-দিদা তাতেই আঁটাআঁটি করে থাকেন। এই গোটা সংসারটা চালার ভার দীপকের বাবা-মায়ের উপরেই। নিজেদের সামান্য আয়ে অনেক সময়ই পেট চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। ছেলের এই দুর্দান্ত ফল কিন্তু দিনমজুর ধনঞ্জয় মাহাতোর কপালে ভাঁজ ফেলেছে। আনন্দ করার পরিবর্তে একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বললেন, “বাড়ির খেয়ে, রাত জেগে পড়ে, ও না হয় ভাল ফল করল। এ বার তো কলেজে পড়তে গেলে বাইরে যেতেই হবে। কলেজে ভর্তি, বই কেনা, যাতায়াতের খরচ এ সব কী করে জোগাড় করব?” দীপকের মা জ্যোৎস্না জানান, ছেলের এত ভাল ফলের পরেও তাকে আর না পড়ালে সবাই কথা শোনাবে। এত দিন কোনও রকমে ছেলেকে পড়িয়ে গেলেও তার উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় ওই দিনমজুর দম্পত্তি।
মাধ্যমিকে ভাল করেও টাকার অভাবেই বিজ্ঞান ছেড়ে কলা বিভাগে ভর্তি হতে হয়েছিলল দীপককে। টিউশন নেওয়ার মতো সামর্থ্যও তার ছিল না। ফলে মাস দু’য়েক পরেই টিউশন ছেড়ে দিতে হয়েছে। এমনকী, রাত জেগে পড়তে গেলে কেরোসিন খরচ বাড়ার আশঙ্কায় ইচ্ছে থাকলেও মাঝেমধ্যেই পড়া থামিয়ে শুয়ে পড়তে হয়েছে দীপককে।
দীপকের স্কুল স্থানীয় রাজনোয়াগড় ডিপিএম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্বতীচরণ মাহাতো বলেন, “দীপক আমাদের স্কুলে ক্লাসে বরাবর প্রথম হয়েছে। আমরা সবাই বিভিন্ন ভাবে ওকে সাহায্য করেছি। ওদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ওর কলেজে পড়ার ক্ষেত্রে কীভাবে সাহায্য করা সম্ভব, দেখছি।” সব রকমের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেও ছাত্রটি এত ভাল ফল করেছে। কিন্তু এরপরে কী হবে, উত্তর জানে না দীপকও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy