নেতাজি মোড়ে গাছ কাটায় ক্ষোভ বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ির যাতায়াত বেড়েছে কোতুলপুরে। কিন্তু রাস্তাজুড়ে বাস দাঁড়িয়ে থাকায় সমস্যায় পড়ছিলেন পথচারীরা। অন্য গাড়ি চলাচলেও অসুবিধা হচ্ছিল। এ বার কোতুলপুরের অন্যতম জনবহুল এলাকা নেতাজি মোড় আরও চওড়া করার কাজ শুরু করেছে পূর্ত দফতর। সেই সঙ্গে ওই এলাকা সাজানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই কাজের জন্য এলাকার বহু প্রাচীন বড়বড় গাছ কেটে ফেলায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। এর মধ্যে বন দফতর জানিয়ে দিয়েছে, গাছ কাটার জন্য তাদের অনুমতিই নেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে গাছ কেটে বিতর্কে জড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। যদিও পূর্ত দফতরের দাবি, গাছ কাটার বিষয়টি বন দফতরকে জানানো হয়েছে।
বাঁকুড়া জেলার সীমানার এই জনপদের ব্যবসায়িক গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। তার উপরে কৃষিক্ষেত্রেও এই এলাকা বেশ সমৃদ্ধ। জনসংখ্যাও কয়েক বছরে বেশ বেড়েছে। কিন্তু এলাকায় বাসস্ট্যান্ড না থাকায় বাসিন্দাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। রাস্তার পাশে ঠায় রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই বাসের অপেক্ষায় থাকতে হয় যাত্রীদের। পাশাপাশি রাস্তার পাশে অনেক গাড়ি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। এর জেরে এলাকায় যানজট লেগে থাকে। যাত্রীরাও বাসে ওঠা-নামা করতে সমস্যায় পড়েন।
সম্প্রতি নেতাজি মোড় চওড়া করার কাজে নেমেছে পূর্ত দফতর। পূর্ত দফতরের (সড়ক) অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণপদ মাহাতো জানান, নেতাজি মোড়ে রাস্তার পাশে বাস বেশিক্ষণ যাতে দাঁড়াতে পারে এবং রাস্তা দিয়ে অন্য গাড়িও যাতে সহজে চলাচল করতে পারে, সে জন্য ওই এলাকা চওড়া করা হচ্ছে। এলাকাটিকে সাজানোও হবে। একই সঙ্গে রাজগ্রাম থেকে বেঙ্গাই এবং কোতুলপুরের নেতাজি মোড় থেকে জয়রামবাটি মোট প্রায় ৩৬ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে।”
নেতাজি মোড়ে বেশ কিছু বড় গাছ ছিল। পূর্ত দফতর কাজে নেমে ওই সব গাছ কেটে সাফ করে দিচ্ছে বলে এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, “বিষ্ণুপুর, আরামবাগ ও জয়রামবাটি যাওয়ার বাস ধরবার জন্য নেতাজি মোড়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। তীব্র গরমে গাছগুলি ছিল মাথার ছায়া। কিন্তু গাছ এ ভাবে কেটে ফেলায় আমরা হতবাক।” তাঁদেরও ক্ষোভ, গাছগুলিকে বাঁচিয়ে রেখেই কাজটি করা যেত।
তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি নিমাই ঘোষেরও দাবি, “প্রথমে রাতের অন্ধকারে ও পরে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে গাছগুলি কাটা হয়। প্রায় ২১টি গাছ কাটা হয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েও গাছ কাটা আটকানো যায়নি।” আসরে নেমেছে বিজেপিও। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক শিবদাস ঘোষ বলেন, “বট, অশ্বথ, শিরিষের মতো বহু প্রাচীন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ওই গাছগুলি না কেটেও পূর্ত দফতর কাজ করতে পারত।” তিনি বিষয়টি প্রশাসন ও বন দফতরকে জানিয়েছেন।
এ দিকে বিতর্ক বাড়িয়ে দিয়েছেন বন দফতরের জয়পুরের রেঞ্জ অফিসার মনোজ যশ। তাঁর দাবি, “বিজেপির তরফ থেকে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের না জানিয়েই গাছগুলি কেটে ফেলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।” যদিও পূর্ত দফতরের আধিকারিক কৃষ্ণপদ মাহাতো দাবি করেছেন, “বন দফতরকে জানিয়েই আমরা কাজ শুরু করেছি। নিয়ম মেনে গাছও লাগিয়ে দেওয়া হবে। ওই গাছগুলি না কেটে কাজ করা যেত না। তাই বাধ্য হয়ে গাছগুলি কাটতে হয়েছে।”
কোতুলপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহদেব কোটালও বলেন, “গাছগুলি না কাটলে উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। সে জন্যই গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে আমরা কোনও অন্যায় দেখছি না।” তাঁর অভিযোগ, বিজেপি বিরোধিতার নামে উন্নয়নমূলক কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy