জাতীয় পরিবেশ আদালতের জেরে আজ থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য তারাপীঠের সমস্ত হোটেল-লজ বন্ধ থাকবে। সোমবার প্রশাসনকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ‘তারাপীঠ লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। পাশাপাশি সাম্প্রতিক তৈরি হওয়া পরিস্থিতির দায় জেলা প্রশাসনের ঘাড়েই চাপিয়েছে ওই সংগঠন। তাদের দাবি, দ্বারকার দূষণের নেপথ্যে রয়েছে প্রশাসনিক ব্যর্থতা। একই সঙ্গে ছাড়পত্র না মেলার জন্য সংগঠন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিরুদ্ধে ঢিলেমির অভিযোগ তুলেছে।
এ দিন সংগঠনের সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র নিয়ে যত দিন না ফয়সালা হচ্ছে, তত দিন আমরা তারাপীঠ এলাকায় লজ ব্যবসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মহকুমাশাসক থেকে পুলিশ-প্রশাসনের সর্ব স্তরে সিদ্ধান্তের কথা লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।” এ দিন সন্ধ্যায় তারাপীঠের সমস্ত হোটেল-লজ মালিকেরা একটি বৈঠক করেছেন। সেখানে প্রসঙ্গত, তারাপীঠ শ্মশান লাগোয়া দ্বারকা নদীর জল দূষণ রুখতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। সমস্যা খতিয়ে দেখে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। গত ডিসেম্বর মাসে পর্ষদ রিপোর্ট দাখিল করে জানায়, তারাপীঠের হোটেল, লজ বা রেস্তোরাঁ থেকে বর্জ্য সরাসরি দ্বারকায় ফেলা হয়। ওই সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই নিকাশি বা বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। তারাপীঠ মন্দিরের ফুল বা পুজোর কাজে ব্যবহৃত অন্য সব জিনিসও সরাসরি নদীর জলে মেশে। এ ছাড়া তারাপীঠ শ্মশানের আধ পোড়া শব, পোড়া কাঠ বা দাহ কার্যে ব্যবহৃত জিনিসপত্রও সরাসরি ওই নদীতে ফেলা হয় বলে জানানো হয়। তার জেরেই মজতে বসেছে দ্বারকা। গত ৮ জানুয়ারি মামলার শুনানিতে পর্ষদের আইনজীবী আদালতে আরও জানান, বর্তমানে তারাপীঠে মাত্র ৫-৭ শতাংশের হোটেল, লজ বা রেস্তোরাঁর পর্ষদের ছাড়পত্র রয়েছে। বেশির ভাগেরই ছাড়পত্র পুনর্নবীকরণ হয়নি। অনেকেই ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যাপারে কোনও দিন আবেদনই করেনি!
শুক্রবার মামলার শুনানিতে পর্ষদের ছাড়পত্র না থাকা তারাপীঠের সমস্ত হোটেল, লজ বা রেস্তোরাঁ অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে তারাপীঠের যে সব হোটেল, লজ বা রেস্তোরাঁ ওই ছাড়পত্র পুনর্নবীকরণ করেনি বা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে, যথাযথ পরিদর্শন করে তবেই তাদের ছাড়পত্র দেওয়া যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত। তারই জেরে রবিবার থেকে হোটেল-লজ বন্ধ হওয়া শুরু হয়েছিল তারাপীঠে। এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে সোমবার থেকে সমস্ত হোটেল-লজ অনিদির্ষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করল ‘তারাপীঠ লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। তার আগে রামপুরহাটে গিয়ে সংগঠনের পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস এবং এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়।
এ দিকে, তারাপীঠে দ্বারকা নদীর দূষণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন সংগঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। তাঁদের দাবি, তারাপীঠ এলাকার হোটেল-লজ থেকে নির্গত জল পরিস্রুত ভাবে নদীতে ফেলার জন্য ২০০৪ সালে বীরভূম জেলা পরিষদ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। তা দেখে অনেক লজ মালিক তারাপীঠে ব্যবসা করতে শুরু করেন। কিন্তু, সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, সেই ব্যবস্থা অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। এমনকী, তার পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাও এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাঁদের দাবি, ওই ব্যবস্থা কার্যকর করতে লজ মালিকেরা এখনও প্রস্তুত। ওই সদস্যদের আরও দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পর্ষদের কাছে আবেদন করা হলেও ছাড়পত্র মেলেনি। এ নিয়ে পর্ষদের যদিও কোনও বক্তব্য মেলেনি।
অন্য দিকে, বর্তমান জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, আদালতের সমস্ত নির্দেশ এখনও ভাল করে দেখা হয়নি। আদালতকে রিপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে জেলা পরিষদ আইনজীবির সঙ্গে কথা বলছে। তবে, বিকাশবাবুর বক্তব্য, “অতীতে কী হয়েছিল, সে ফাইল এখন খুঁজে বের করা মুশকিল। হোটেল-লজ মালিকদেরও নদী বক্ষ সাফ রেখে ব্যবসা করতে হবে। এটা তাঁদেরও দায়িত্ব। ওঁরা অন্তত এমন দাবি করতে পারবেন না যে, একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় তাঁরা জঞ্জাল ফেলছেন।” তাঁর আরও সংযোজন, “আদালত যেহেতু জেলাপরিষদের উপর দায় চাপিয়েছে। তাই আমাদেরও কিছু একটা করতে হবে। তা না হলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হবে।” এ দিনই রামপুরহাটের মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, জট কাটাতে প্রশাসনের তরফে পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy