নিস্পন্দ: নিহতের দেহের পাশে পরিজনেরা। নানুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বচসা থেকে মারধর, পাল্টা মারধরের পরে চলল গুলি। তাতে নিহত হলেন এক মহিলা। সোমবার দুপুরে নানুরের হাটসেরান্দী গ্রামের সেই ঘটনায় শুরু হল রাজনৈতিক তরজাও।
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম শঙ্করী বাগদি (৫০)। সোমবার বেলা দুটো নাগাদ গ্রামের বাগদিপাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগদিপাড়ার এক বধূকে উত্ত্যক্ত করত ওই পাড়ারই এক বিবাহিত যুবক। এর আগেও তা নিয়ে একাধিক বার অশান্তি হয়েছে। বহু বার সাবধান করার পরেও ওই যুবক শোধরাননি বলেও অভিযোগ। পরিবার সূত্রের দাবি, এ দিন যখন ওই বধূ মাঠে ঘাস কাটতে যান তখন যুবকও তাঁর পিছু নেয়। তখনও গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত করা হয় বলে অভিযোগ।
গ্রামবাসীর একাংশ জানিয়েছেন, এ দিন ওই বধূর বাড়ির লোকেরা ওই ঘটনা জানতে পেরে যুবকের বাড়িতে চড়াও হয়। মারধর করা হয়। যুবকের পরিবারের লোকেরাও পাল্টা মারধর করে। সেই সময় ওই বধূর পরিবারের লোকেরা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। তখনই অভিযুক্ত যুবকের মায়ের বুকে গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই শঙ্করীদেবীর মৃত্যু হয়। ওই যুবকের এক ভাইয়ের স্ত্রীর দাবি, ‘‘উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওরা মিথ্যে সন্দেহ করত। আজ আমার ভাসুর পুকুর দেখতে গিয়েছিল। ওরা সন্দেহ করে এসে বাড়িতে চড়াও হয়। আচমকা গুলি চালিয়ে দেয়। শাশুড়ি মায়ের বুকে গুলি লেগে মৃত্যু হয়।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে বধূর শ্বশুরের পাল্টা দাবি, ‘‘নিষেধ করার পরেও ছেলেটি আমার বৌমাকে উত্ত্যক্ত করত। আজও মাঠে গিয়ে উত্ত্যক্ত করে। বৌমার কাছে জানার পরে আমরা প্রতিবাদ করতে ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম। তখন ওরা আমাদের উপরে চড়াও হয়। তবে কে গুলি চালিয়েছে বলতে পারব না।’’
ঘটনায় লেগেছে রাজনৈতিক রং। এই হাটসেরান্দীতেই জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি। যদিও দীর্ঘ দিন তিনি বোলপুরের বাসিন্দা। বিজেপি-র নানুর মণ্ডল কমিটির সভাপতি বিনয় ঘোষের দাবি, ‘‘নিহত মহিলা আমাদের দলের সমর্থক। সেই আক্রোশে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে খুন করেছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য জানান, দু’পক্ষই তৃণমূলের সমর্থক। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। দুটি পরিবারের বিবাদের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে।’’ নিহতের ছেলে বোলপুর হাসপাতালে অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমরা তৃণমূল করি। গ্রামের মালপাড়ার তৃণমূলের কিছু লোকই বাড়িতে চড়াও হয়েছিল। ওরা মাকে গুলি করে মেরেছে।’’ পুলিশ জানায়, বুকে গুলি লেগেছে। এ দিকে, দেহ তুলে গেলে প্রথমে বাধা পায় পুলিশ। নিহতের পরিজনেরা দাবি করেন, তৃণমূলের লোকেরা বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে হামলা করেছে। তাদের গ্রেফতার করা না হলে দেহ তুলতে দেওয়া হবে না। পরে অবশ্য পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নিহতদের পরিবারের আরও দাবি, চার রাউন্ড গুলির সঙ্গে তিনটি বোমাও ফাটানো হয়েছে।
এ দিন বিকেলে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তখন টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। বধূর বাড়িতে কেউ নেই। শঙ্করীর বাড়িতে অবশ্য অনেক ভিড়। আচমকা দুর্ঘটনার পরে তেতে রয়েছে এলাকা। পুলিশ জানিয়েছে, শঙ্করী বাগদির পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে রাত পর্যন্ত কোনও আটক বা গ্রেফতারের খবর নেই। কোথা থেকে বোমা, বন্ধুক এল তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy