Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

চুরির দোসর ছিনতাইও! এ বার হানা পুলিশকর্মীর বাড়িতেও

বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পুলিশ নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। সিসি ক্যামেরা, টহলদারি এগুলোর আগে থানার পিসি পার্টির অনেক বেশি সক্রিয় হওয়া উচিৎ বলেও প্রশাসনিক মহলের একাংশ মনে করছেন।

কী ভাবে হল ছিনতাই, দেখাচ্ছেন বৃদ্ধ। (ইনসেটে) পুলিশ আধিকারিকের বাড়িতে তালা ভেঙেছে চোরেরা। নিজস্ব চিত্র

কী ভাবে হল ছিনতাই, দেখাচ্ছেন বৃদ্ধ। (ইনসেটে) পুলিশ আধিকারিকের বাড়িতে তালা ভেঙেছে চোরেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১২
Share: Save:

চুরি এ বার খোদ পুলিশ আধিকারিকের ঘরেই। বোলপুরে চুরি নিয়ে এমনিতেই ঘুম ছুটেছিল বাসিন্দা থেকে পুলিশ প্রশাসনের। বুধবার রাতে চুরি ও ছিনতাই দুটোই ঘটল সরকারি তকমা অনুযায়ী ‘আন্তর্জাতিক মানের শহরে’। রাতের অন্ধকারে অশীতিপর ব্যবসায়ীর মুখ চেপে রাস্তায় ফেলে টাকা নিয়ে চম্পট দেওয়ার পাশাপাশি এক পুলিশ অফিসারের ঘরে চুরির ঘটনায় বোলপুর শহরের নিরাপত্তার হালটা আরও স্পষ্ট হল।

বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পুলিশ নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। সিসি ক্যামেরা, টহলদারি এগুলোর আগে থানার পিসি পার্টির অনেক বেশি সক্রিয় হওয়া উচিৎ বলেও প্রশাসনিক মহলের একাংশ মনে করছেন। যারা অপরাধ করছে তারা এতকিছুর পরেও অবাধে এলাকায় বিচরণ করছে বলেই বারবার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্তপল্লিতে সপরিবারে থাকেন দুর্গাপুর আদালতের জিআরও বাসুদেব মণ্ডল। দিন কয়েকের জন্য তাঁরা বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বাড়িটি ফাঁকা ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসুদেববাবুরা বাড়ি ফিরে দেখতে পান ঘরের দরজা হাট খোলা। ভাঙা তালা মাটিতে পড়ে আছে। বাড়ির ভিতরে সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আলমারি ভাঙা। দেরাজ খোলা। বিছানাও এলোমেলো। বাসুদেববাবুর অভিযোগ, ‘‘বেশ কয়েক হাজার টাকা, কিছু সোনার গয়না, একটি বড় টিভি-সহ, আসবাবপত্র এবং জামা-কাপড় নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।’’ ওই পুলিশ আধিকারিকের প্রতিবেশীরা বলেন, ‘‘খোদ পুলিশের ঘরই যদি এভাবে ফাঁকা করে দিয়ে যায় তাহলে সাধারণ মানুষকে তো মেরেধরে কেড়ে নিয়ে যাবে এ বার!’’

সেই ঘটনাও অবশ্য ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের সুরুল গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় ছিনতাইবাজের হাতে আক্রান্ত হন বৃদ্ধ দ্বিজপদ দাস। সুরুলে তাঁর একটি হার্ডওয়ারের দোকান আছে। সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় গলির মধ্যে দুই দুষ্কৃতী তাঁর উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। রাস্তায় আলো কম থাকায় দ্বিজপদবাবু প্রথমে বুঝতে পারেননি কি হতে চলেছে তাঁর সঙ্গে। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘হঠাৎই অন্ধকার ফুঁড়ে দু’জন এল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার মুখ চেপে ধরে পকেটে থাকা পাঁচ হাজার টাকার বান্ডিল কেড়ে নিতে চাইল। বাধা দিতে গেলে মারধর করে রাস্তায় ফেলে দিল। টাকাগুলো ততক্ষণে ওরা নিয়ে নিয়েছিল।’’

আহত বৃদ্ধের চিৎকারে এলাকার লোকজন জড়ো হন। তাঁকে উদ্ধার করে বোলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান, ধস্তাধস্তিতে তাঁর মাথায় সামান্য আঘাত লেগেছে। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। যদিও পুলিশ দ্বিজপদবাবুর মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনে ওই রাতেই একজনকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে খোওয়া যাওয়া টাকাও উদ্ধার হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘চুরির ঘটনায় ইতিমধ্যেই অনেককেই ধরা হয়েছে। পুলিশ কর্মীর বাড়িতে চুরির ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ ইতিমধ্যেই বোলপুরে চুরি আটকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা, নাকা চেকিং, টহলদারি বাড়ানো ও পাড়ায় পাড়ায় আরজি পার্টি গড়ে তোলার কথা জানানো হয়েছে। স্কুলগুলোতে রাত পাহারা রাখা হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও চুরি থামাতে পারছে না পুলিশ। পরিসংখ্যান বলছে গত ছ’মাসে বোলপুর ও শান্তিনিকেতন থানা মিলিয়ে ১২টি বাড়িতে চুরি হয়েছে। এছাড়াও পুলিশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একই স্কুলে পরপর তিনবার চুরি হয়েছে। পুলিশ ধরপাকড় চালিয়ে ৪২জনকে গ্রেফতার করলেও চুরি থামেনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে যারা ধরা পড়ছে তারাই কি আসলে পরপর চুরির সঙ্গে যুক্ত নাকি আসল চোরেরা অধরাই থেকে যাচ্ছে?

অন্য বিষয়গুলি:

Bolpur Snatching Theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy