Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বিনা কর্ষণে গম চাষ হচ্ছে বীরভূমে

বিনা কর্ষণ, বা ‘জিরো টিলেজ’ পদ্ধতিতে চাষ জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, বর্ধমানে চাষিরা শুরু করেছেন। কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ চাষির কাছে এই পদ্ধতি এখনও অপরিচিত। এ বার শীতে বীরভূমে এই পদ্ধতি গম চাষ শুরু করলেন চাষিরা।

ময়ূরেশ্বর-২ নম্বর ব্লকে চলছে বিনা কর্ষণে গম চাষ। ছবি-দয়াল সেনগুপ্ত।

ময়ূরেশ্বর-২ নম্বর ব্লকে চলছে বিনা কর্ষণে গম চাষ। ছবি-দয়াল সেনগুপ্ত।

দয়াল সেনগুপ্ত
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৬:২২
Share: Save:

বিনা কর্ষণ, বা ‘জিরো টিলেজ’ পদ্ধতিতে চাষ জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, বর্ধমানে চাষিরা শুরু করেছেন। কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ চাষির কাছে এই পদ্ধতি এখনও অপরিচিত। এ বার শীতে বীরভূমে এই পদ্ধতি গম চাষ শুরু করলেন চাষিরা। সম্প্রতি খয়রাশোলের পরাতিয়া গ্রামে বিনা কর্ষণে গম চাষ করছেন ১০জন চাষি। পাশের গ্রাম ফমতোড়ের চাষিরাও কৃষি দফতরের পরামর্শে নিজেদের জমিতে এই পদ্ধতিতে গম লাগিয়েছেন।

খয়রাশোল ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা দেবব্রত আচার্য বলেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে গম চাষের প্রধান সুবিধা, ধান তোলার পরে চাষিকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। জমিতে আর্দ্রতা থাকতে থাকতেই চাষি গম চাষ করতে পারবেন।’’ তিনি জানান, এ রাজ্যে শীত আসে অল্প সময়ের জন্য। মাঠ থেকে ধান তোলার পরেই গম চাষ করতে হয়। নতুন এই পদ্ধতিতে ধান তুলে প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই জমিতে গম লাগানো যায়। জমি তৈরির সময় বাঁচে।

পরাতিয়া গ্রামের অরুণ পাল, কামাখ্যাচরণ নাথ, বুদ্ধদেব পাতর, বিশ্বজিৎ দত্ত এ বার এই পদ্ধতিতে গম লাগিয়েছেন। তাঁরা জানান, বিঘা প্রতি ৫ কিলো বীজ ও সার কম লেগেছে। শ্রমিকও কম লাগছে। এখন ফলন কেমন হয়, তা-ই দেখতে চান তাঁরা। ‘‘ফলন ভাল হলে পরের বার পুরো জমিতেই এ ভাবে চাষ করব,’’ বলেন তাঁরা।

পদ্ধতিটি ঠিক কেমন?

ট্রাক্টরের সঙ্গে লাগানো ‘জিরো-টিলেজ’ যন্ত্রের নীচের দিকে আকার অনুযায়ী ৬-১১টি ফাল যুক্ত থাকে। উপরের দিকে থাকে দু’টি বাক্স বা ‘চেম্বার’। তার একটিতে ধান বা গমের বীজ, অন্যটিতে সার। প্রতিটি বাক্স থেকে ফালের গা বারাবর দু’টি পাইপ যুক্ত থাকে। ট্রাক্টর জমিতে চলতে শুরু করলেই ফালগুলি মাটি খুঁড়ে একটা গভীর দাগ দিয়ে যায়, আর সেই সঙ্গে পাইপ বেয়ে প্রয়োজনীয় বীজ ও সার জমিতে পড়তে থাকে। ট্রাক্টর এক বার জমির সর্বত্র ঘুরে এলেই চাষ শেষ।

গম চাষে এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধে সময় বাঁচানো। আর ধান চাষের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধে, বীজতলা তৈরি করতে হয় না। প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে প্রথমে বীজতলা করতে হয়। তার পরে জমি প্রস্তুত করে ফের সেই বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে জমিতে লাগাতে হয়। জিরো টিলেজ যন্ত্র ব্যবহার করলে বীজতলার প্রয়োজন পড়ে না। বিলম্বিত বর্ষাতেও চাষ সম্ভব। ফসল পাকতে সময় কম লাগে, খরচও কমে যায়।

সবচেয়ে বড় সুবিধে, কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন প্রায় হয়ই না। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক বিঘা জমি চাষ করতে যেখানে কমপক্ষে ১৬ জন শ্রমিকের প্রয়োজন, সেখানে এক জন ট্রাক্টর-চালক ও একজন সহকারী দিয়ে এক বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব।

সমস্যা একটাই, বেশি বৃষ্টিতে যন্ত্রটি কাজে লাগানো যায় না। কৃষিকর্তাদের ইচ্ছে ছিল, এ বার বর্ষায় জেলা জুড়ে চাষিদের মধ্যে ওই পদ্ধতি জনপ্রিয় করা। কিন্তু, অতিবৃষ্টিতে তা সম্ভব হয়নি। এ বার গম চাষে তা প্রয়োগ করতে চাইছেন তাঁরা। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘চাষিরা আমাদের কাছ থেকে নিখরচায় যন্ত্রটি নিয়ে গম চাষ করতে পারবেন। এ বার বিনা কর্ষণে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ২০০ হেক্টর।’’ তবে প্রদীপবাবু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কৃষি দফতরের ১০টি যন্ত্রের মধ্যে সাতটি ১১ ফাল-যুক্ত। সেগুলি টানতে উচ্চক্ষমতার ট্রাক্টর (৪৫ অশ্বশক্তি) দরকার। ছয় থেকে নয় ফালের যন্ত্র থাকলে কম ক্ষমতার ট্রাক্টরও টানতে পারে। ছোট জায়গায় সেগুলির ঘুরতেও অসুবিধা হয় না। তাঁরা রাজ্যের কাছে এমন ছোট যন্ত্র আরও চেয়েছেন বলেও তিনি জানান। তবে কৃষি দফতরের মতে, এই পদ্ধতির জনপ্রিয় হলে চাষিরা নিজেরাই যন্ত্র কিনে বা ভাড়ায় ওই যন্ত্র ব্যবহার করে চাষ করতে চাইবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

wheat production in birbhum water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy