ফাঁকা: গত বছর ইদের আগে এমন সময় ভিড়ে ভরা থাকত রামপুরহাট শহরের রাস্তা। এ বছর ফাঁকা। মঙ্গলবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
একের পর এক উৎসব, পরব, অনুষ্ঠান আসছে, পেরিয়েও যাচ্ছে স্রোতের টানে ঢেউ ভাঙার মতো করে। করোনাভাইরাস দূরে সরিয়ে দিয়েছে সামাজিক সমস্ত বন্ধনকে। মাঝে আর তিনটে দিন, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে ত্যাগের জন্য কোরবানির পরব ইদুজ্জোহার প্রস্তুতিতে যে সময় বাজার সরগরম থাকার কথা লকডাউনের ধাক্কায় সেই বাজারে বিক্রিবাটা কার্য়ত শিকেয় উঠেছে। গত মে মাসে ইদ-উল-ফিতরের সময়ও একই অবস্থায় ছিলেন বিক্রেতা ও ক্রেতারা। আশা ছিল, ইদুজ্জোহাতে বাজার হয়তো ফিরবে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ দ্রুতহারে বাড়তে থাকাই অশনি সংকেত ছিল এবার কোরবানির ইদের আগে।
এমনিতে রাজ্যে সাপ্তাহিক লকডাউনের আওতায় ইদের আগে আজ বুধবার ছাড়া আর কোনও দিন না পড়লেও বীরভূম জেলা জুড়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আংশিক লকডাউন জারি আছে। এর ফলে বাজার বা হাটগুলোতে বিক্রেতারা চাপে পড়েছেন বলে ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে। কারণ বহু ক্ষেত্রেই দূর থেকে অনেকে তাঁদের সামগ্রী নিয়ে আসেন, কিন্তু ১২টা বাজার আগেই তা গুটিয়ে নিতে হয়। মুরারই লাগোয়া হাটগুলির বিক্রেতারা জানান, এমনিতেই ভিড় থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় হাটে ক্রেতার সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। তারমধ্যেও বিভিন্ন গ্রাম থেকে ক্রেতাদের হাটে আসতে আসতে সকাল ১০টা বেজে যায়। এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রিবাটা সেরে ফেলতে হয়, ফলে লাভের বদলে লোকসানের বোঝা বাড়ছে তাঁদের। গরুর হাটগুলোতে ব্যবসায়ীরা লোকসানেও রোরবানির গরু বিক্রি করতে হিমসিম খাচ্ছেন বলে তাঁদের দাবি। পাইকরের এক হাট মালিক খোকন শেখ তো বলেই ফেললেন, ‘‘লকডাউনের ফলে গরুর হাট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। কোরবানির দিন কী হবে জানি না। এমনিতেও এতদিন লকডাউনের ফলে মানুষজনের হাতে টাকা নেই। অর্ধেক দামেও গরু, খাসি বিক্রি হচ্ছে না।’’
শুধু তো হাট নয়, বাজারগুলোতেও একই অবস্থা। নলহাটি হোক বা মুরারই, বোলপুর থেকে সিউড়ি সর্বত্রই পোশাকের দোকানগুলো ফাঁকা। সেই চৈত্র সেলের সময় থেকে বস্ত্র ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। তারপরেও ইদের কথা মাথায় রেখে অনেকেই নতুন পোশাক সাজিয়েছিলেন দোকানে। মুরারইয়ের বস্ত্র ব্যবসায়ী সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘ইদুজ্জোহার জন্য শাড়ি, জামা, ছোটদের পোশাক কিনে মজুত করছিলাম। ইদ-উল-ফিতরের সময়ও বন্ধ ছিল। এবারও ক্রেতা নেই। এভাবে লকডাউনের ফলে ব্যবসা করতে পারছি না। কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের সময় বেশি লাগে। কিন্তু ১২টার পরে লকডাউনের ফলে মানুষজন আর বেরোতে চাইছেন না।’’
বোলপুরেও পোশাক থেকে খাবারের দোকান, সেমাই, লাচ্ছার বিক্রেতারা সবাই হতাশ এই পরিস্থিতিতে। ইলামবাজারের বাসিন্দা নয়ন শেখ বলেন, ‘‘অনেকে মিলে কোরবানির সামগ্রী কিনতাম। একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এবার বোধহয় অন্যরকম ইদ কাটবে।’’ স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘করোনা প্রতিরোধে সব মানতে রাজি, ব্যবসা করার সুযোগ যাতে পাই সেটিও দেখা দরকার।’’
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় গোষ্ঠী সংক্রমণের ছায়া ফেলছে কোভিড। বীরভূমও তার বাইরে নয়। এই সময় বাজারে ভিড় হলে সেই আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই গোষ্ঠী সংক্রমণের ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন করতে একটা নির্দিষ্ট সময় পারস্পারিক মেলামেশার জায়গাগুলি বন্ধ রাখা প্রয়োজন। সে কারণেই বাজার-দোকান, গণপরিবহণ, জনসমাবেশ বন্ধ রেখে মেলামেশার সুযোগ ছিন্ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy