সোমবার রঘুনাথপুরে দাঁড়িয়ে ফাঁকা বাস। নিজস্ব চিত্র
পথে বাস বাড়ছে। কিন্তু বাসে যাত্রী বিশেষ বাড়ছে না। বাসমালিকদের দাবি, পরিষেবা চালু রাখতে গিয়ে লোকসান হচ্ছে তাঁদের। অফিসযাত্রীদের অনেকে আবার দাবি করছেন, সকালে বাস মিললেও দুপুরের পরে সংখ্যাটা খুবই কমে যাচ্ছে। সংক্ষেপে, ‘আনলক ১’ পর্বের এক সপ্তাহে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বাস-যোগাযোগের দশা এমনটাই।
বাসমালিক সমিতি সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুরুলিয়ার ৪৯টি রুটে ২২৫টি বেসরকারি বাস চলে। এখন ৪৫টি রুটে প্রায় ১৭২টি চলছে। সরকারি বাস চলছে আরও ১১টি। বাঁকুড়ায় প্রায় ৪৫০টি বেসরকারি বাস রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৮০টি সোমবার রাস্তায় ছিল। সঙ্গে সরকারি বাস আরও ২৫টি। সোমবার বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ মানবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে পুরুলিয়া রওনা হচ্ছিল একটি বাস। বাসের কর্মী বিশ্বজিৎ দত্ত জানান, সাত জন যাত্রী হয়েছে। এ দিনই পুন্দাগ-পুরুলিয়া রুটের একটি বাস রাস্তায় নেমেছে। সেটির কন্ডাক্টর সূর্য রায় জানান, পুরুলিয়া আসার সময়ে সাত জন যাত্রী হয়েছিল তাঁর বাসেও।
সরকারি কর্মী কল্যাণপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় পুরুলিয়া-রঘুনাথপুর রুটের নিত্যযাত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আগে বাসেই যাতায়াত করতাম। লকডাউনে যখন সব বন্ধ হযে গেল, আমরা কয়েকজন সহকর্মী মিলে একটা গাড়ি ভাড়া করি। এখনও বাস এড়িয়েই চলছি। ওই গাড়িতেই অফিস যাচ্ছি।’’ ব্যবসার কাজে নিয়মিত আসানসোল যেতে হয় কাশীপুরের বাপ্পা হালদারকে। তিনি বলেন, ‘‘আগে ট্রেনে যেতাম। বাস চালু হয়েছে বটে। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে উঠতে সাহস পাচ্ছি না। গাড়িতেই যাচ্ছি।’’
এরই পাশাপাশি, অনেকেই আছেন যাঁরা বাসে চড়ছেন। বাসের জন্য হাপিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে থাকছেন রাস্তায়। ঝালদার বাসিন্দা বিনয় স্বর্ণকার সোমবার পুরুলিয়াগামী বাসে ওঠার সময় বলেন, ‘‘সদরে কাজ রয়েছে। বাস চালু হওয়ায় খুবই সুবিধা হল।’’ মালপত্র নিয়ে পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠছিলেন হুড়ার লধুড়কার বংশী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও বলেন, ‘‘বাস থাকায় অনেক সমস্যা মিটেছে।’’ বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের শিবদাস গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘স্বাভাবিক নিয়মে বাস চলছে না। কোনও দিন আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কোনও দিন দ্রুত পেয়ে যাচ্ছি।” তালড্যাংরার সোমনাথ দত্ত বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত কাজে হামেশাই বিষ্ণুপুর যেতে হয়। সময়মতো বাস পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে মোটোরবাইক নিয়ে যাচ্ছি।”
পুরুলিয়া থেকে বান্দোয়ান আর কুইলাপালের কিছু বাসরুটের খানিকটা পড়ে ঝাড়খণ্ডের মধ্যে। ‘পুরুলিয়া বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এখন যেহেতু ঝাড়খণ্ডে ঢোকার অনুমতি নেই, তাই বান্দোয়ান বা কুইলাপাল রুটে কোনও বাস চলছে না। যে ক’টি বাস চলছে, সব মানবাজার হয়ে ঘুরে যাচ্ছে।’’ সোমবার পুরুলিয়া যাওয়ার জন্য বান্দোয়ানের শশধর মাহাতো বাসস্ট্যান্ডে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মানবাজার দিয়ে ঘুরে যেতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। ফেরার সময় আবার সমস্যা হবে। তার থেকে বাড়িই ফিরে যাব ভাবছি।’’ প্রতিভারঞ্জনবাবু জানান, পুরুলিয়ার আর ঝাড়খণ্ডের মধ্যে প্রায় ৩০টি রুটে ৭০টিরও বেশি বাস চলে। এখন সেগুলিও চলছে না।
এই পরিস্থিতিতে ‘বাঁকুড়া জেলা বাসমালিক কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “যাত্রী না হওয়ায় বেশিরভাগ বাসেই এখনও তেল খরচের টাকাটুকু উঠছে না।’’ পুরুলিয়া বাসমালিকদের সংগঠনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জনবাবুর দাবি, এক সপ্তাহে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও যাত্রী এখনও যথেষ্ট হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘তার উপরে গত পাঁচ দিনে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৩ টাকা ১৫ পয়সা বেড়েছে। এ ভাবে কত দিন টানা যাবে, কে জানে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy