Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Kala Azar Death

মুরারইয়ে মৃত্যু কালাজ্বরে, চিন্তা

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত যুবক দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগছিলেন। ১৯ এপ্রিল রামপুরহাটে একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারে রক্ত পরীক্ষায় তাঁর কালাজ্বর ধরা পড়ে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
রামপুরহাট  শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ০৯:৪৪
Share: Save:

২০১০-এর পর ২০২৪। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় ১৪ বছর পরে কালাজ্বরে মৃত্যুর জেরে উদ্বেগের ছায়া স্বাস্থ্য দফতরে। গত ১ মে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান কালাজ্বরে আক্রান্ত মৃত্যু হয় বাবুরাম হাঁসদা নামে এক আদিবাসী যুবকের।

মুরারই থানার ঢুরিয়া গ্রামের কাপারপাড়ার বাসিন্দা বছর ছত্রিশের ওই আদিবাসী যুবকের মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তারা বৈঠকে বসেন। সূত্রের দাবি, কালাজ্বরে মৃত্যু নিয়ে বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত যুবক দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগছিলেন। ১৯ এপ্রিল রামপুরহাটে একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারে রক্ত পরীক্ষায় তাঁর কালাজ্বর ধরা পড়ে। তারপর থেকেই রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা চলাকালীন সেখানেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়। মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেন, ‘‘ওই যুবকের কালাজ্বরের সমস্ত চিকিৎসা করা হয়। তা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি। ঘটনাটি স্বাস্থ্য দফতরের কাছে খুবই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

চিকিৎসকেরা জানান, বেলেমাছির মাধ্যমে ছড়ায় কালাজ্বর। মাটিতে বাসা বাঁধে কালাজ্বরের বাহক ওই মাছি। মৃত বাবুরামের ক্ষেত্রেও মাটির বাড়িতে থাকা বেলেমাছি থেকে কালাজ্বর সংক্রমণ ছড়ায় বলে জানা গিয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই যুবক টালির চাল ও মাটির দেওয়ালের বাড়িতে বাস করতেন। মাটির দেওয়ালে কালাজ্বরের বাহক বেলেমাছি পাওয়া গিয়েছে। ওই মাছির থেকেই যুবকটির দেহে কালাজ্বরের জীবাণু ছড়িয়েছে বলে স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যের ১১টি জেলার ১২০টি ব্লকে ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের মধ্যে কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি চালু রয়েছে। তার মধ্যে মুরারই ১ ব্লকের আট-দশটি গ্রাম পড়ছে। কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি চলাকালীনই সেই রোগে মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর। এ দিন বৈঠকে তা নিয়েই আলোচনা হয়।

এ দিন বৈঠকে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী, ডিরেক্টর অফ পাবলিক হেলথ অসিত বিশ্বাস, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে, উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ রায়, রামপুরহাট মেডিক্য্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাস উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান মৈত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিকেরা ও স্বাস্থ্য দফতরের অন্য আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে কালাজ্বর প্রবণ এলাকায় আরও বেশি পরীক্ষা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির সঙ্গে কালাজ্বরের পরীক্ষা করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

কালাজ্বরের প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, ২০১০ সালের পরে রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় কালাজ্বরে মৃত্যুর এই একটি মাত্র ঘটনা ঘটেছে। তাও সতর্ক রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে জানান, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার ৮টি ব্লকই কালাজ্বর প্রবণ। ওই সমস্ত এলাকায় নিয়মিত কালাজ্বরের পরীক্ষা করা হয়। এ বছরে দু’জন কালাজ্বরের রোগী পাওয়া গিয়েছে বলে তিনি জানান। তার মধ্যেই একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, এলাকায় ১৯৭ জনের কালাজ্বরের পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে চার জনকে কালাজ্বর সন্দেহে বিভিন্ন পরীক্ষা করার পরে কালাজ্বর ধরা পড়েনি। তিনি বলেন, ‘‘মাছি নির্মূল করতে ওই এলাকায় একবার প্রতিষেধক স্প্রে করা হয়েছে। আগামী দিনে আরও প্রতিষেধক স্প্রে করা হবে। চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে রাজগ্রামে সচেতনতা শিবিরও করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat Medical college Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE