Advertisement
E-Paper

ঝাড়খণ্ডের রাজ্য ভলিবল দলে সিউড়ির শুভজিৎ

আদতে বীরভূমের বাসিন্দা হলেও গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শুভজিৎ ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে মোঙ্গিয়া ন্যাশনাল ভলিবল অ্যাকাডেমির ছাত্র।

ঝাড়খণ্ড রাজ্য ভলিবল দলে সুযোগ পেয়েছেন বীরভূমের তরুণ শুভজিৎ ভান্ডারী।

ঝাড়খণ্ড রাজ্য ভলিবল দলে সুযোগ পেয়েছেন বীরভূমের তরুণ শুভজিৎ ভান্ডারী। —ফাইল চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৮
Share
Save

ভলিবলের কোর্টে সহ খেলোয়াড়দের তুলে দেওয়া বলটিকে প্রতিপক্ষের কোর্টের মাটিতে ছুঁইয়ে পয়েন্ট নেওয়াই রীতি। বিপক্ষ শিবিরের যে খেলোয়াড় অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় সেটা করতে বাধা দেন, তাঁকে ভলিবলের পরিভাষায় ‘ব্লকার’ বলে। সেই ‘ব্লকার হিসেবেই ঝাড়খণ্ড রাজ্য ভলিবল দলে নিজের নাম তুলে ফেললেন সিউড়ি ১ ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রামের উনিশ বছরের তরুণ শুভজিৎ ভান্ডারী। মঙ্গলবার বছরের শেষ দিন ঝাড়খণ্ডের সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রক সিনিয়র ন্যাশনাল ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য যে ১৪ জনের দলের তালিকা সামনে এনেছে, সেই তালিকায় রয়েছেন সিউড়ির ছ ফুট চার ইঞ্চির ওই তরুণ। এই খবর পেতেই উচ্ছ্বসিত শুভজিৎ ও তাঁর পরিবার। শুভজিৎ জানিয়েছেন, ভীষণ তৃপ্তি পেয়েছি। পরিশ্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আর বাবা সুধাময় এবং মা মানসী ভান্ডারীরা বলছেন, ‘‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই।’’ খুশি তাঁর শিক্ষকেরা। বুধবার বছরের প্রথম দিনই রাঁচীতে নির্বাচিত দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শুভজিৎ।

আদতে বীরভূমের বাসিন্দা হলেও গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শুভজিৎ ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে মোঙ্গিয়া ন্যাশনাল ভলিবল অ্যাকাডেমির ছাত্র। তাঁর কোচ শুভঙ্কর চক্রবর্তী। পাশাপাশি বিনোবা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের পড়ুয়াও তিনি। তবে শুভজিৎকে খুঁজে বের করা এবং ভলিবলে হাতেখড়ি দেওয়ার কাজটি করেছেন সিউড়ি রক্ষাকালী ক্লাবের ভলিবল কোচ অনুপ খাণ্ডাইত। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ভলিবল কোচিং করাচ্ছেন অতনু। ওই ক্লাবের ভলিবল চর্চার কথা জানে গোটা জেলা।

শুনলে চমকে যেতে হয়, ২০২২ সালের দুর্গাপুজোর আগে ভলিবল ছুঁয়েও দেখেননি শুভজিৎ। আসলে শুভজিতের উচ্চতাই অনুপবাবুর নজর টানে। শুভজিৎ বলছিলেন, ‘‘পুজোর আগে বাজার করতে সিউড়ি গিয়েছিলাম। তখন এক ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞাসা করেন বাড়ি কোথায়, খেলাধুলো করি কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। তখনই তিনি প্রস্তাব দেন ভলিবল প্রশিক্ষণ নেওয়ার।’’

শুভজিতেরর কথায়, ‘‘আমি তো তখন ভলিবলটা ছুঁয়েও দেখি নি। তাই প্রথমটা আসতে চাইনি। স্যর (অনুপ) ফোন করে বাড়িতে লোক পাঠিয়ে আমাকে বারবার অনুরোধ করার পর আমি ওঁর কাছে ভলিবল শেখা শুরু করি।’’ একই কথা বলছেন শুভজিতের প্রথম গুরু অনুপও। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেটির উচ্চতা দেখে আমার কেন জানিনা মনে হয়েছিল এই ছেলের মধ্যে ভলিবল প্লেয়ার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা যে ভুল নয় সেটা প্রমাণ হয়ে গেল।’’

সে বার জেলা ক্রীড়া সংস্থা একটি ভবিবল শিবিরের আয়োজন করেছিল। ভাবনায় ছিল উচ্চতা সম্পন্ন তরুণের। তখনই উচ্চ-মাধ্যমিকের পড়ুয়া শুভজিৎকে দেখেন অনুপ। প্রতিদিন ভলি শিখতে বাড়ি থেকে ৬কিমি দূরে সাইকেলে করে সিউড়ি আসতেন শুভজিৎ। দ্রুত রপ্ত করতে থাকেন খেলার কৌশল। পাশে ছিলেন রক্ষাকালী ক্লাব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিদ্যাসার সাউ।

শুভজিতের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অনুপবাবুর আরও এক কৃতী ছাত্র, বর্তমানে বাংলা ভলি দলের খেলোয়াড় প্রিয়তনু ঘোষাল। বেশ কয়েক মাস শেখার পর গিরিডিতে ভলি অ্যাকাডেমির সন্ধান শুভজিৎকে প্রিয়তনুই দিয়েছিলেন। কারণ সেই সময় তাঁর অন্যতম কোচ শুভঙ্কর চক্রবর্তী সেখানকার দায়িত্বে ছিলেন। ট্রায়ালে ছটি রাজ্যের বহু সংখ্যক ছেলের মধ্যে ভলিবল অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পান শুভজিৎ। মঙ্গলবারের খবরে খুশি বিদ্যাসাগর সাউ এবং প্রিয়তনু দু’জনেই।

গোবিন্দপুর গ্রামে শুভজিতের বাবা সুধাময় একটি ছোট মুদিখানার দোকান চালান। মা মানসী বাড়ি সামলান। ছোট ছেলেকে ঝাড়খণ্ডে পাঠালে যে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে, তাঁদের তা বোঝান সকলে। পরিবার রাজি হতেই উচ্চ-মাধ্যমিক দিয়েই ঝাড়খণ্ডের গিরিডির ওই অ্যাকাডেমিতে যান শুভজিৎ। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দক্ষ প্রশিক্ষদের নজরে দেড় বছরেই তৈরি করে ফেলেছেন নিজেকে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভোঁতা করতে সিদ্ধহস্ত তিনি। সেই গুণেই রাজ্য দলে এসেছেন।

কোচ শুভঙ্কর চক্রবর্তী শুভজিৎ সম্পর্কে বলছেন, ‘‘অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। দেড় বছরের মধ্যে এত খেলোয়াড়দের মধ্যে লড়ে যে রাজ্য সিনিয়র দলের সুযোগ পায়, সে আশা করছি দ্রুত জাতীয় দলেও খেলবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jharkhand Suri

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}