Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রঙিন ছবিতে সাজছে শহরের দেওয়াল

ছবির জগৎকে আর্ট গ্যালারির চৌহদ্দির বাইরে এনে পথচারীদের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন জেলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তথা শিল্পী প্রয়াত সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সময় তিনি ও তাঁর সংস্থা ‘রং-বেরং’ প্রতি বছর রাস্তার পাশের দেওয়ালে ছবি লাগিয়ে পথ-চিত্র প্রদর্শনী করতেন।

রংবেরং: ছবিতে সাজছে সরকারি দফতরের দেওয়াল। মঙ্গলবার সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

রংবেরং: ছবিতে সাজছে সরকারি দফতরের দেওয়াল। মঙ্গলবার সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

ছবির জগৎকে আর্ট গ্যালারির চৌহদ্দির বাইরে এনে পথচারীদের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন জেলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তথা শিল্পী প্রয়াত সুবীর
বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সময় তিনি ও তাঁর সংস্থা ‘রং-বেরং’ প্রতি বছর রাস্তার পাশের দেওয়ালে ছবি লাগিয়ে পথ-চিত্র প্রদর্শনী করতেন।

সেই পরম্পরা ফিরিয়ে আনতে এ বার উদ্যোগী হলেন তাঁর ছাত্র, শিল্পী পিন্টু কর্মকার। সিউড়ি শহরের বিভিন্ন দেওয়াল ছবির রঙে রঙীনকরছে তিনি। পিণ্টুবাবু বলেন, ‘‘১৯৯৩ সালে আমি আঁকা শেখানো শুরু করি কলাকেন্দ্রম স্কুলে। এ বছর ওই প্রতিষ্ঠান ২৫ বছরে পা দিয়েছে। তা উদ্‌যাপনেই শহর সাজানোর পরিকল্পনা করেছি।’’ তিনি জানিয়েছেন, এখন বিভিন্ন সরকারি দফতরের দেওয়ালে ছবি আঁকার কাজ শুরু হয়েছে। জেলার এসপি নীলকান্তম সুধীরকুমারের কাছে মহিলা থানার পাশাপাশি পুলিশ লাইনের দেওয়ালে ছবি আঁকার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন ওই শিল্পী। সেই অনুমতি মিলেছে। পিণ্টুবাবু জানান, তাঁর শিক্ষক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ই এই ভাবনার পিছনে রয়েছি। সঙ্গে রয়েছেন ওই শিক্ষাকেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীরা। স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পুরনো ছাত্রদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। অনেকেরই সাড়া মিলেছে।

সিউড়ি মহাবিদ্যালয় কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৈকত ধীবরও রয়েছেন শিল্পীদের ওই দলে। তিনি বলেন, ‘‘শীত থাকতে থাকতে আমরা শহরের কয়েকটি সরকারি দফতরের দেওয়ালে আঁকার কাজ শেষ করার চেষ্টা করবো।’’ তিনি জানান, রবিবার কাজ শুরু হয়েছে মহিলা থানায়। এরপর ছবি আঁকা হবে সেচ কলোনির দেওয়ালে। শহরের কয়েকটি রাস্তার সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে, সে সব সড়কের লাগোয়া কিছু দেওয়ালেও ওই কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ওই অঙ্কন প্রতিষ্ঠান সূত্রে খবর, দেওয়াল সাজানোর কাজ শেষ হলে কয়েকটি রাস্তায় ত্রিমাত্রিক ছবি, আলপনা আঁকা হবে। একেবারে শেষ পর্যায়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হবে কয়েকটি ভাস্কর্য।

হাতে রংয়ের কৌটো, ব্রাস নিয়ে সাদা দেওয়ালে রঙিন চকে আঁকা ছবিতে ১০-১২ জন শিল্পী দিচ্ছেন লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, গোলাপির ছোঁয়া। ছবির বিষয়বস্তু শিক্ষামূলক— কন্যাভ্রূণ হত্যা, শিশুশ্রম, ছোটদের পছন্দের ছবিও।

সিউড়ির উপ-পুরপ্রধান বিকেকানন্দ সাও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘শহর সাজানোর কাজে প্রশাসনের পাশে রয়েছে পুরসভাও। ওই শিল্পীরা চাইলে আমাদেরও ওই উদ্যোগে সামিল করতে পারে। তাঁদের প্রয়াসকে সার্থক করে তুলতে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’’ কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্র স্বপন কর্মকারের পরামর্শ, ‘‘দেওয়ালে ছবি এঁকে শহর সাজানোর পরিকল্পনা খুবই ভাল। তবে শিল্পীরা যেন রং নির্বাচনে সাবধানী হন। চড়া রং যেন বেশি ব্যবহার করা না হয়। আর খুব ঘিঞ্জি এলাকায় ছবি না এঁকে, একটু ফাঁকা জায়গায় আঁকলে তা আরও বেশি নান্দনিক হবে।’’ সে সব মেনেই সগুপ্তা, মানসী, বর্ষা, সুস্মিতা, শান্তনুরা তাঁদের প্রিয় শহরকে স্বপ্নের সাতরংয়ে সাজাতে ব্যস্ত। আর্ট গ্যালারি না থাকলেও গোটা শহরকেই ছবিতে ভরিয়ে দিতে চান তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Wall Painting Art Gallery Decoration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE