সরেজমিনে: পৌষমেলার মাঠে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
পৌষমেলায় জবরদখল করে স্টল করার অভিযোগ পেয়ে তা রুখতে মাঠে নামলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অনলাইনে বুকিং ছাড়া যে সমস্ত দোকানদার মেলা মাঠে স্টল করার জন্য জায়গা দখল করেছিলেন, সেগুলি এ দিন উপাচার্য নিজে ঘুরে দেখেন। একই সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীদের বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, অনলাইনে বুকিং ছাড়া এ বার মেলামাঠে কোনও স্টল বসানো যাবে না।
সেই মতো এ দিন মেলামাঠে ‘অবৈধ’ স্টল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বিশ্বভারতীর তরফ থেকে। বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, বিগত বছরগুলিতে পৌষমেলায় অনলাইনের মাধ্যমে স্টল বুকিং না হওয়ার ফলে পুরনো রসিদ অনুযায়ী ন্যূনতম ভাড়া দিয়েই মেলায় স্টল বসাতেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্টলের জন্য ন্যূনতম ভাড়া না দিয়েও মেলায় পসরা সাজিয়ে বসে যেতেন। তেমন নজরদারি না থাকায় ওই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্টলের ভাড়া আদায় করা সম্ভব হতো না বিশ্বভারতীর। পৌষমেলায় স্টলের ‘দুর্নীতি ’আটকাতে এ বছর প্রথম থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন উপাচার্য। তারই ফলশ্রুতি এ বারই প্রথম অনলাইনে স্টল বুকিং ব্যবস্থা।
৪ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে মেলার স্টল বুকিং শুরু হয়। পৌষমেলা নিয়ে তৈরি হওয়া জট কাটাতে ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে মেলায় স্টল বসানোর জন্য ৫৫ শতাংশ ও সিকিয়োরিটি মানি জমা রাখার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বভারতীর দাবি, এর পরেও অনলাইনের মাধ্যমে অনেক ব্যবসায়ী স্টল বুকিং না করে মেলাযমাঠে সরাসরি জায়গা দখল শুরু করে দেন। এমনকি বৈধ ভাবে স্টল নেওয়া ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, মেলায় স্টল করার জন্য তাঁদের বুকিং করা জায়গায় অন্য জন জবরদখল করে নিয়েছেন। এমন অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলা কমিটি এবং ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যদের নিয়ে মেলামাঠ পরিদর্শন করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেই সময়ই তিনি জানতে পারেন, অনলাইনে বুকিং ছাড়াই কিছু দোকানদার মাঠ দখল করেছেন।
শনিবার সকালে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, অনলাইনে বুকিং ছাড়া যাঁরা মাঠ দখল করে বসে আছেন, তাঁদের হয় অনলাইনে স্টল বুকিং করে বসতে হবে। না হলে জায়গা খালি করে দিতে হবে। সেই মতো শনিবার সকালে বিশ্বভারতীর তরফ থেকে মেলা প্রাঙ্গণে বাংলা ও হিন্দিতে মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, যাঁরা অনলাইনে স্টল বুক করেছেন, তাঁরা যেন বৈধ কাগজপত্র সঙ্গে রাখেন। এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ বিশ্বভারতীর কর্মসচিব আশা মুখোপাধ্যায়, মেলা কমিটির সদস্য ও বিশ্বভারতীর বিভিন্ন আধিকারিকদের নিয়ে মেলা মাঠে যান উপাচার্য। অনলাইন ছাড়া কারা মেলামাঠে বসেছেন, তা তাঁরা ঘুরে দেখেন।
এ দিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল, একাধিক জায়গায় গ্যাস, স্টোভ, উনুন জ্বালিয়ে রান্নার কাজ চলছে। আবার মেলামাঠের একটি জায়গায় কুড়িটিরও বেশি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে রাখা রয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের নজরে পড়তেই ব্যবসায়ীদের ওই সমস্ত সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে বলা হয়। পাশাপাশি যে সমস্ত হস্তশিল্পী অনলাইন ব্যবস্থা না জেনেই মেলায় বসে পড়েছিলেন, তাঁদের সঠিক পরিচয়পত্র নিয়ে বিশ্বভারতীর ক্যাম্প অফিসে দেখা করতে বলা হয়। তবে, হস্তশিল্পীদের দিকটি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছিলাম, কিছু ব্যবসাদার অনলাইনে স্টল বুক না করেও অন্যের জায়গা দখল করে বসে গিয়েছিলেন। উপাচার্যের নেতৃত্বে এ দিন মেলা কমিটি ও বিশ্বভারতীর আধিকারিকেরা মেলামাঠে সব কিছু খতিয়ে দেখেন। যাঁরা অন্যের জায়গায় বসে পড়েছিলেন, আমরা তাঁদের বলেছি অনলাইনের মাধ্যমেই তাঁদের স্টল নিতে হবে। এর পরেও কেউ নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে স্টল দিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মেলা কমিটি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy