Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
flood

flood: বাঁচল শহর, ডুবে বহু গ্রাম

বিভিন্ন ব্লকে প্রশাসনের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় আট হাজার মানুষ। কিছু কিছু ত্রাণ শিবিরের অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ।

ডাঙার-খোঁজে: পাত্রসায়রের বেলুট গ্রামে শালি নদীর সেতুর কাছে।

ডাঙার-খোঁজে: পাত্রসায়রের বেলুট গ্রামে শালি নদীর সেতুর কাছে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৭:০৭
Share: Save:

দুর্যোগের জেরে বাঁকুড়া জেলায় প্রাণ গেল চার জনের। নদীতে ভেসে আসা আরও একটি দেহ উদ্ধার হওয়ায়, মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। তবে বৃষ্টি থামায় বাঁকুড়া-সহ শহরাঞ্চলের জল নামলেও নদ-নদীর পাড় ছাপানো জলে জেলার বহু গ্রাম শুক্রবারও প্লাবিত থাকল। বিভিন্ন ব্লকে প্রশাসনের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় আট হাজার মানুষ। কিছু কিছু ত্রাণ শিবিরের অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ।

বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার বলেন, “জেলার পরিস্থিতি ধাপে ধাপে স্বাভাবিক হচ্ছে। ত্রাণ শিবিরের সংখ্যা কমে আসছে। তবে এখনও যে সব এলাকা জলমগ্ন, সেখানকার পরিস্থিতির উপরে নজর রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে।”

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে দুর্যোগে মৃতেরা হলেন ওন্দার দলদলি গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণী মণ্ডল (৮০), পায়ত্রসায়রের বামিরা গ্রামের বাসিন্দা অভিজিৎ বাগদি (২৭), সিমলাপালের জফলা গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ গুলিমাঝি (৪৮) ও ছাতনার জিড়রার বাহামনি সরেন (৫৯)।

শুক্রবার সকালে বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় দেওয়াল চাপা পড়েন নারায়ণীদেবী। বাসিন্দারাই তাঁকে উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। রাতে ঘরের মেঝেতে ঘুমানোর সময়ে অভিজিৎকে সাপে কাটে। তাঁকে প্রথমে পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি। বুধবার সন্ধ্যায় সিমলাপালের পাথরডাঙায় শিলাবতী নদীর জলে ডোবা কজ়ওয়ে পার হতে গিয়ে তলিয়ে যান সুভাষবাবু। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাস্তায় অন্য একটি কজ়ওয়েতে তাঁর দেহটি আটকে থাকতে দেখা যায়। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় বাহামনিদেবীর। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে রাইপুরে কংসাবতী নদীর সেতুর নীচে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দামোদর নদ তীরবর্তী সোনামুখী, বড়জোড়া, শালতোড়া, মেজিয়া ব্লকে। আংশিক ক্ষতির মুখে পড়েছে পাত্রসায়র, ইন্দাস-সহ বিভিন্ন ব্লক। প্রায় ৫৯,৩১০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩,৯৪৮টি বাড়ি পুরো বা আংশিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।

দামোদর নদ, শালি নদী ও বোদাই নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে পাত্রসায়রের নারায়ণপুর, হামিরপুর এবং বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। হামিরপুর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে এ দিন কোথাও হাঁটু-জল তো কোথাও বুক সমান জল ছিল। ব্লক সদর পাত্রসায়র থেকে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে খামারডি, আসনবুনি, জলজলে, পাঁচপাড়া, ঘোড়াডাঙা, ধোবাপাড়ার মতো বেশ কিছু গ্রাম। অনেকে এ দিনও ত্রাণ শিবিরে থাকেন। পাত্রসায়রের চাঁপাবনির কাছে শালিনদীর নিচু সেতুতে জল উঠে পাত্রসায়র-নারায়ণপুর রাস্তায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। বিডিও (পাত্রসায়র) নিবিড় মণ্ডল বলেন, “সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হামিরপুর ও নারায়ণপুর পঞ্চায়েত এলাকা। সারা ব্লকে ২৩টি ত্রাণ শিবিরে ৪,৭৬৫ জন মানুষ রয়েছেন।’’

দামোদর নদ লাগোয়া বড়জোড়ার পল্লিশ্রী মানার কিছু অংশও এ দিনও জলমগ্ন ছিল। সোনামুখী ব্লকের রাধামোহনপুর পঞ্চায়েতের উত্তর নিত্যানন্দপুর, সমিতি মানা, পান্ডেপাড়া ও ডিহিপাড়া পঞ্চায়েতের কেনেটি মানা এবং হামিরহাটি পঞ্চায়েতের পার্বতীয়ার মতো বেশ কিছু গ্রাম এখনও জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। অনেকে এ দিন ত্রাণ শিবির ছাড়লেও, কেউ কেউ রয়ে গিয়েছেন।

পার্বতীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের ত্রাণশিবির ছেড়ে গ্রামে ফিরে এ দিন নিরঞ্জন বাউড়ি, পূর্ণিমা বাউড়ি, প্রশান্ত বাউড়িরা অভিযোগ করেন, “বৃহস্পতিবার ত্রাণ শিবিরে দুপুরে গুড়-চিঁড়ে দিলেও রাতে খাবার দেওয়া হয়নি। ভোরেই গ্রামে ফিরে যাই। কিন্তু অনেকের ঘর ভেঙে গিয়েছে, জ্বালানিও ভিজে। বাধ্য হয়ে অবস্থাপন্নদের বাড়িতে চেয়েচিন্তে খেতে হচ্ছে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় হামিরহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান দীপা ঘোষ দাবি করেন, “পার্বতীয়া প্রাথমিক স্কুলের ত্রাণ শিবিরের মানুষজনের রাতের খাবারের আয়োজন সোনামুখীর অন্য একটি শিবিরে করা হয়েছিল। সেখানে তাঁদের নিয়ে যেতে গাড়ির ব্যবস্থাও করা হয়। তবে কয়েকটি পরিবার যেতে চায়নি।” বিডিও (‌সোনামুখী) দেবলীনা সর্দারেরও দাবি, “রাতে খাবার না দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy