Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Unnatural Death

কীটনাশক খেয়ে মৃত্যু আলুচাষির

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আলু চাষ করতে হৃদয় ঋণ নিয়েছিলেন। পাওনাদারেরা মাঝেমাঝেই বাড়িতে এসে তাগাদা দিচ্ছিল। 

শোক: মৃত চাষির বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

শোক: মৃত চাষির বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নলহাটি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক আলু চাষির। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম হৃদয় লেট (৪৯)। নলহাটির হরিপুরের বাসিন্দা ওই আলুচাষির স্ত্রী হাসিদেবীর অভিযোগ, ‘‘বর্ষার সময় ভাগ চাষে ধানের ফলন মার খেয়েছে। প্রচুর ক্ষতি হয়েছে কিন্তু কৃষিবিমার কোনও সহায়তা পাইনি। এ বার অনেক ধার দেনা করে এক বিঘা জমিতে ভাগে আলু চাষ করেছিল। কিন্তু গাছ ভাল হয়নি। তার উপর এই মেঘলা আবহাওয়ায় নাবিধসা রোগে আলু গাছ নষ্ট হচ্ছিল। এবারও সাহায্য মিলবে না এই আশঙ্কা চেপে ধরেছিল ওঁকে।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আলু চাষ করতে হৃদয় ঋণ নিয়েছিলেন। পাওনাদারেরা মাঝেমাঝেই বাড়িতে এসে তাগাদা দিচ্ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর সঙ্গে বসে চা খাওয়ার পরেই আলুর খেত দেখতে যাচ্ছেন বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। সেখান থেকে ফেরার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠতে থাকে। শনিবার ভোরে মারা যান। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, অবসাদ থেকেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই চাষি। দেহটি শনিবার ময়না তদন্তে পাঠানো হয়।

বীরভূমে শীতকালীন বৃষ্টি ছিটেফোঁটা হলেও মেঘলা আবহাওয়ায় এই মরসুমে আলুর ক্ষতির কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন চাষি। হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয়ন ফুলমালি, মুকুল ফুলমালিরা বলেন, ‘‘১৭০০ টাকা থেকে ১৯০০ টাকা কুইন্টাল দরে আলুর বীজের দাম। এর পরে সার, সেচ, কীটনাশক, শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে প্রায় ১০হাজার টাকা খরচ হয়। এ বার বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার ফলে আলুতে নাবিধসা রোগ ধরেছে। অনেকে রোগ প্রতিষেধক কীটনাশক স্প্রে করে ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু হৃদয়ের সেই সামর্থ্যটুকুও ছিল না।’’ এমনিতেও খরিফ মরসুমে এই বছর জেলায় চাষে ভাল ফলন হয়নি আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায়। কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষি মেলা থেকে চাষিদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালায় রাজ্যে কৃষিবিমার সাফল্যের খতিয়ান দিয়েছেন। কিন্তু এবার খোদ মন্ত্রীর জেলাতেই বিমার টাকা না মেলায় কৃষকের বিপন্নতার অভিযোগ উঠল। নলহাটি ১ ব্লকের বড়লা, কলিঠা, কুরুমগ্রাম, কয়থা ১, বাউটিয়া, হরিদাসপুর এই ৬টি অঞ্চলে বিঘার পর বিঘা জমিতে আলু চাষ হয়েছে। সেখান চাষিদের অধিকাংশেরই অভিযোগ, বর্ষার মরসুমে আর্থিক ক্ষতির বোঝা মাথায় নিয়েই এ বার আলু চাষ করেছেন তাঁরা। কিন্তু টানা মেঘলা আবহাওয়ায় নাবিধসা রোগ ছড়াচ্ছে। এখনও অবধি কোনও সরকারি সহায়তা বা পরামর্শও মেলেনি বলে তাঁদের দাবি। বিষয়টি মন্ত্রীর নজরে আনতে চান তাঁরা। যদিও কৃষিমন্ত্রীর পাল্টা দাবি, ‘‘কৃষকদের জন্য রাজ্য সরকার নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। কৃষক বন্ধু প্রকল্প আছে। বীরভূম জেলাতে ওই প্রকল্পের অগ্রগতি ভালই। চাষের ক্ষতিতে কোনও চাষি আত্মহত্যা করেছেন এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। হরিপুরে আলু চাষির মৃত্যুর ঘটনায় পারিবারিক বিবাদ বা অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে।”

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বছর নলহাটি ১ ব্লকে ২,৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু এলাকা থেকে আলুর নাবিধসা রোগের খবর এসেছে। দফতরের পক্ষ থেকে রোগ প্রতিষেধকের বিষয়ে চাষিদের জন্য লিফলেট বিলি করা হয়েছে। নলহাটি ১ ব্লকের সহকারী কৃষি আধিকারিক অরিন্দম ডানা বলেন, ‘‘সম্প্রতি মেঘলা আবহাওয়ায় আলুর নাবিধসা রোগ দেখা দিয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিষেধকের জন্য ওই এলাকায় আলু চাষিদের সতর্কীকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লিফলেট বিলি করা হয়েছে। হরিপুর গ্রামে কি হয়েছে খোঁজ নেব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Unnatural Death Potato Farmer Nalhati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE