এ-ভাবেই: বিষ্ণুপুরের বালিগুমা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
কয়েকটা বাঁশ পুঁতে তার উপরে তালপাতার ছাউনি। দেওয়াল বলতেও এখানে সেখানে কয়েকটা তালপাতা। দেখলে মনে হবে ‘আবোল তাবোল’-এর সেই বুড়ির বাড়ি— ‘বাঁকাচোরা ঘরদোর ফাঁকা ফাঁকা কত, ঝাঁট দিলে ঝরে পড়ে কাঠকুটো কত’। কিন্তু না! বাড়িটা বিষ্ণুপুরের বালিগুমা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের। এ দিকে, প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বাড়ি তৈরির জন্য টাকা এসে গিয়েছে ব্লকে। কিন্তু লাল ফিতের ফাঁসের ভয়ে ঠিকাদাররা দরপত্র জমা করছেন না।
বিষ্ণুপুর ব্লকের বাঁকাদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপরধবনি, ঘোষপাড়া এবং বালিগুমার শিশুদের জন্য ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে বালিগুমা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চালু হয়। এখন সেখান থেকে খাবার পায় ৩৪ জন পড়ুয়া এবং চার জন প্রসূতি ও পাঁচজন গর্ভবতী। কিন্তু ক্লাসঘর তো দূরের কথা, সুষম খাবার রান্না করার স্বাস্থকর পরিবেশটুকুও নেই। সম্প্রতি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, বাঁশের মধ্যে তালপাতা গুঁজে হাওয়া আড়াল করে উনুন ধরাচ্ছেন কেন্দ্রের সহায়িকা সামসুনিহার খান। হাওয়ার মতোই পোকামাকড় ঠেকাতেও ভরসা ওই তালপাতাটুকুই। তিনি বলেন, ‘‘দু’কিলোমিটার দূর থেকে খাবার জল বয়ে আনতে হয়। সব সময় ভয় হয়, এই বুঝি বাচ্চাগুলো উনুনের কাছে চলে গেল।’’ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী রেখা শিকারি বলেন, ‘‘আকাশে কালো মেঘ দেখলেই ভয় হয়। ঝড় উঠলে বাচ্চাগুলোকে সামলাব, না ছাউনিটা?’’
এই ধরনের পরিস্থিতি হলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভরসা পাশের একটি ক্লাব। ওই ক্লাবের সম্পাদক মাখন মান্ডি বলেন, ‘‘বৃষ্টির সময়ে আমরা ক্লাব খুলে দিই। দিদিমণিরা বাচ্চাগুলোকে নিয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করেন। ওই দিনগুলোয় রান্নাও হয় না।’’ ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারাও। সবিতা হাজারি, বাসন্তী হেমব্রম, মালতি হাঁসদারা বলেন, ‘‘বাচ্চাগুলো কী ভাবে পড়াশোনা করে, খেতে বসে— দেখলে চোখে জল আসে। একটা পাকা ঘর কি করে দেওয়া যায় না?’’
সমস্ত কথা শুনে সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের ওই অঞ্চলের সুপারভাইজার রীনা নন্দী বলেন, ‘‘কেন, আমি তো ছয় মাস আগে একটা ত্রিপল দিয়ে এসেছি!’’ কিন্তু এখন কী অবস্থা? রীনাদেবীর বক্তব্য, ‘‘আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি।’’ সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের বিষ্ণুপুরের আধিকারিক দেবরঞ্জন রাজ জানান, এখনও ওই কেন্দ্রের জন্য স্থায়ী কিছু করা যায়নি। একটা ত্রিপল দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেটা ঝড়ে উড়ে গিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরির জন্য বিষ্ণুপুর ব্লকে টাকা এসেছে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৭ লক্ষ টাকা। ওই টাকায় চারটি চারটি কেন্দ্র তৈরি হয়েও গিয়েছে। কিন্তু তার পরেই থমকে রয়েছে কাজ।
কেন?
বিডিও (বিষ্ণুপুর) জয়তী চক্রবর্তীর দাবি, ই-টেন্ডার করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও ঠিকাদার আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনা এবং সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের টাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি তৈরি হচ্ছে। বিষ্ণুপুর কনট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক অরুণকান্তি দত্ত বলেন, ‘‘কয়েকটা কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, শ্রমিকেরা ঠিক সময়ে বেতন পেলেও নির্মাণ সামগ্রী যাঁরা সরবরাহ করেন, তাঁদের টাকা পেতে জুতোর সুকতলা ক্ষয়ে যাচ্ছে। তাই ভয়ে কেউ দরপত্র জমা করছেন না।’’
জটিলতা কাটিয়ে কবে পাকা একটা বাড়ি হবে, সে দিকেই তাকিয়ে গ্রামের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy