ঘটনাস্থল: বিষ্ণুপুর থানার চৌবেটা গ্রামের কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। রবিবার সকালে। ছবি: শুভ্র মিত্র
মসৃণ চওড়া জাতীয় সড়ক হঠাৎ সরু হয়ে গিয়েছে জীর্ণ সেতুর সামনে এসে। না আছে গার্ড ওয়াল, না সতর্ক করে দেওয়া কোনও বোর্ড। সেই সেতুতেই একটি পাথরকুচি বোঝাই ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারল আরেকটি ট্রাক। উল্টে গিয়ে দু’টিই পড়ল শুকনো খালে। মৃত্যু হল শ্যামল সরকার (২৯) নামে এক ট্রাক চালকের। আহত হয়েছেন অন্য ট্রাক চালক এবং দু’জন খালাসিও। রবিবার সকালে বিষ্ণুপুর থানার চৌবেটা গ্রামের কাছে বিষ্ণুপুর-মেদিনীপুর (৬০ নম্বর) জাতীয় সড়কের ঘটনা।
এ দিন ভোরে খেতে চাষের কাজ করতে গিয়েছিলেন চৌবেটা গ্রামের ভানুপদ দে। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ বিকট আওয়াজ। দেখি, বড় খালের সাঁকোর উপর থেকে দু’টো ট্রাক নীচে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সাদা পাথরের ধুলোয় চারদিক আবছা।’’ শব্দ পেয়ে আশপাশের মিত্তিশোল, ধানশোল, বরামারা, বাঁকাদহ গ্রামের অনেক বাসিন্দাই ছুটে এসে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, চৌবেটার তাপস দে, কলাবাগানের নুরউদ্দিন মণ্ডল, বাঁকাদহের সুকুর আলি খানের মতো অনেকেই কোমর বেঁধে পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করছেন। জাতীয় সড়কে প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে গাড়ির লাইন। বেলা ১১টার পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দুর্ঘটনার ফলে একটি ট্রাকের পিছনে অন্য ট্রাক প্রায় সেঁটে গিয়েছিল। গ্যাসকাটার দিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাওয়া লোহার স্তূপ কেটে পিছনের ট্রাকের ড্রাইভার ও খালাসিকে বের করা হয়। ওই ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন সোনামুখীর পূর্ব নবাসন পঞ্চায়েতের করিমপুর গ্রামের শ্যামল সরকার। চিকিৎসক জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। খালাসি বছর ছাব্বিশের তন্ময় বারুইও করিমপুরেরই বাসিন্দা। তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়।
অন্য ট্রাকের চালক পানাগড়ের শেখ পাড়ার বাসিন্দা শেখ বুলবুল ও খালাসি শেখ আজিম বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পায়ে চোট লেগেছে তাঁদের। জানালেন, শনিবার বীরভূমের পাঁচামি থেকে পাথরকুচি বোঝাই গাড়ি নিয়ে চন্দ্রকোনা রওনা হয়েছিলেন তাঁরা। তখন সকাল ৬টা। তাঁরা বলেন, ‘‘সেতুটার কাছে এসে দেখি, উল্টো দিক থেকে একটা ট্রাক আসছে। পাশ কাটাতে অল্প ধারে চেপেছি, অমনি পিছন থেকে একটা ট্রাক সজোরে ধাক্কা মারল।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম চালক ও খালাসিদের অবস্থা স্থিতিশীল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আহত খালাসি তন্ময়ের দাদা প্রবীর বারুই হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি জানান, গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রবীর বলেন, ‘‘সংসারে শ্যামল একাই রোজগেরে ছিল। ওর মৃত্যু তে পরিবারটাই পথে বসে গেল।’’
স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন দত্ত, সুখলাল হেমব্রমরা বলেন, ‘‘প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। জাতীয় সড়টা হঠাৎ করে এখানটায় এসে যেন গলি হয়ে গিয়েছে। দুর্বল উঁচু সেতু। এ দিকে গার্ড ওয়াল নেই। বিপদ সংকেতও নেই। রাতে চালকদের আরও সমস্যা হয়।’’ যানজটে আটকে ছিলেন রোড চন্দ্রকোনার ট্রাক চালক রবীন্দ্র সিংহ। তিনিও বলেন, ‘‘এই জায়গাটা আমাদের খুব সজাগ থাকতে হয়।’’
বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, শ্যামলের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রুজু হয়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা। পুলিশ আধিকারিকদের একাংশও মেনে নিয়েছেন, সরু সেতুর জন্যই জাতীয় সড়কের ওই এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ।
রানিগঞ্জ থেকে বাঁকুড়া এবং বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার সময়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে একাধিক সঙ্কীর্ণ এবং জীর্ণ সেতু পেরোতে হয়। বিশেষ করে বলা যেতে পারে গঙ্গাজলঘাটির অমরকানন সংলগ্ন বিড়াই নদীর উপরের সেতুর কথা। সেটির অবস্থা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। একটি গাড়ি যাওয়ার সময় অন্য গাড়ি পাশ দিয়ে যেতে পারে না। এর জেরে প্রায়ই ওই রাস্তায় যানজটও হয়। ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা বাসের চালকদের আশঙ্কা, যে কোনও সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ দিনের দুর্ঘটনার পরে তাঁরা আতঙ্কিত।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কয়েকটি সরু সেতু চওড়া করার কাজ শুরু হয়েছে। মেদিনীপুর থেকে বিষ্ণুপুর ও বিষ্ণুপুর থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার রাস্তায় বেশ কয়েকটি জায়গায় কাজ চলছে। সেই পথে যে সমস্ত সরু সেতু রয়েছে, তা চওড়া করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy