ছত্রখান: ছৌ শিল্পীদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে দশেরবাঁধ এলাকায়। ছবি: সঙ্গীত নাগ
বিবেক উৎসবে যোগ দিতে ছৌ নাচের সরঞ্জাম নিয়ে ছোট গাড়িতে চড়ে পাড়া থেকে রঘুনাথপুরে যাচ্ছিলেন শিল্পীরা। পিছন থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল দু’জনের। আহত হয়েছেন গাড়ির চালক-সহ ন’জন। রবিবার সকাল ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে পাড়া থানার দশেরবাঁধ এলাকায়।
রঘুনাথপুর পুরসভার বিবেক উৎসবের শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল পাড়া থানার সড়বেড়িয়া গ্রামের ছৌ শিল্পীদের দলটির। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিল্পী তপন মাহাতোর (৫০)। তাঁর বাড়ি পাড়া থানার সুরুলিয়া গ্রামে। পরে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি থেকে আসানসোলের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় নিখিল মাহাতো (২৩) নামে আর এক শিল্পীর। তাঁর বাড়ি সরবেড়িয়া গ্রামে।
উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার খবর পৌঁছতেই অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে দেয় পুরসভা। খবর পেয়ে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহত শিল্পীদের দেখতে যান পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। তিনি আসার কিছু আগেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন এলাকার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। বেলায় হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ নেন পাড়া ও রঘুনাথপুরের দুই তৃণমূল বিধায়ক উমাপদ বাউড়ি ও পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি।
বছর কুড়ি ধরে ছৌ নাচের ওই দলটি চালাচ্ছেন সড়বেড়িয়া গ্রামের অজিতকুমার মাহাতো। তিনি জানান, নাচের অনুষ্ঠানে ৩০-৩৫ জন শিল্পী থাকেন। তাঁর নিজের একটি ছোট ট্রাক রয়েছে। তাতেই শিল্পীদের নিয়ে যান। এ বার অনুষ্ঠান ছিল না। শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তাই শুধু দশ জন শিল্পী যাচ্ছিলেন। অন্য গ্রাম থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে আনা হয়ছিল।
অজিতবাবু জানান, সকাল ছ’টা নাগাদ গ্রাম থেকে বেরিয়েছিলেন। পিছন থেকে আসা পাথর বোঝাই একটি ট্রাক জোরে ধাক্কা দেয়। অভিঘাতে গাড়িটি প্রায় উড়ে গিয়ে পড়ে পাশের মাঠে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ট্রাকের সামনের চাকা হঠাৎ ফেটে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। দুর্ঘটনার পরে রাস্তার পাশের একটি গাছে ধাক্কা দিয়ে বিকল হয়ে পড়ে সেটি। পুলিশ জানিয়েছে, চালক পলাতক।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ছৌ মুখোশ আর নাচের নানা সরঞ্জাম। এলাকার কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন, সাতসকালে বিকট শব্দ শুনে ছুটে এনে দেখেন রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে মাঠের মধ্যএ উল্টে পড়ে রয়েছে ছোট একটি গাড়ি। ভিতরে থাকা লোকজন বেরোনোর চেষ্টা করছেন। পারছেন না। স্থানীয় লোকজনই তাঁদের উদ্ধার করেন। পুলিশের সহায়তায় পাঠানো হয় রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জখমদের মধ্যে নিখিলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে আসানসোলের হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যদের চিকিৎসা চলছে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটিতেই। আহতদের মধ্যে কারও পা ভেঙেছে। কারও ভেঙেছে হাত। অনেকেই মাথা ও শরীরের অন্য জায়গায় চোট পেয়েছেন।
শিল্পীদের গাড়িটির চালক আঘানি বাউড়ি বলেন, ‘‘পিছন থেকে ট্রাকটা হটাৎ এ ভাবে এসে ধাক্কা দেবে আঁচই করতে পারিনি। হলে কিছু না কিছু করে বাঁচানোর চেষ্টা করতাম।’’ জখম শিল্পীদের মধ্যে ছ’জনই সড়বেড়িয়া গ্রামের। এখনও আতঙ্কের রেশ তাঁদের চোখেমুখে। সহদেব মাহাতো, শ্রীনিবাস মাহাতো, কৃষ্ণপদ কর্মকরেরা বলেন, ‘‘হঠাৎ ধাক্কায় আমাদের গাড়িটা যেন শূন্যে ভেসে উঠে আছড়ে পড়ল। গাড়ির ভিতর থেকে বেরোতে পারছিলাম না। পরে এলাকার লোকজন এসে উদ্ধার করেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy