Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
আড়ালে বলছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ

একটা মাছি না গলে, অলিখিত ‘নির্দেশ’

বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের বাইরে যাতে কেউ মনোনয়নপত্র তুলতে বা জমা দিতে না পারেন, সে জন্য গোটা জেলা জুড়ে প্রতিটি ব্লক অফিসের সামনে সমাজবিরোধীদের ‘মোতায়েন’ করেছিল শাসক দল। তাদের হাতেই চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের।

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:১৩
Share: Save:

মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা বিরোধী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ খাতিরের ব্যবস্থা থাকছে— পঞ্চায়েত ভোটের তারিখ ঘোষণার আগে একাধিক সভায় এমনই বলেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। হেয়ালির সুরে বলেছিলেন ‘জল-বাতাসা’, ‘গুড় বাতাসায়’ আপ্যায়নের কথাও। সেই খাতির-পর্ব কেমন, তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন-পর্ব শুরুর প্রথম দিনই টের পেল বিরোধী শিবির।

বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের বাইরে যাতে কেউ মনোনয়নপত্র তুলতে বা জমা দিতে না পারেন, সে জন্য গোটা জেলা জুড়ে প্রতিটি ব্লক অফিসের সামনে সমাজবিরোধীদের ‘মোতায়েন’ করেছিল শাসক দল। তাদের হাতেই চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের। বিরোধীরা যে অভিযোগ করছে সেটা কী সত্যি? তৃণমূল নেতাদের একাংশ আড়ালে মানছেন, ২-৯ এপ্রিল ‘একটা মাছিও’ যাতে ব্লক অফিসে গলতে না পারে সেটা দেখার জন্য অলিখিত নির্দেশ রয়েছে।

সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের দাবি— প্রতিটি জায়গায় মনোনয়নপত্র তোলায় বাধা দিয়েছে শাসক দল আশ্রিত সমাজবিরোধীরা। মারধরও করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন ছিল নীরব দর্শক। এমনকী নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি তথা বিডিওদের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েও মার খেতে হয়েছে বিপক্ষের নেতাদের। কেন এ ভাবে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে, ফোন করে বা লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষকর্তাদের তা জানিয়েছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, যেখানে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, সেখানে কেন এত লোক জমায়েত করবে শাসক দল। এটা প্রশাসনের প্রশ্রয় ছাড়া সম্ভব নয়। ব্লকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের অধিকাংশই দুষ্কৃতী। বিরোধীদের চিনিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন তৃণমূলে স্থানীয় নেতারা।

সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন কোথাও তাদের দলের তরফে মনোনয়নপত্র তোলার চেষ্টা করা হয়নি। কিন্তু যাঁরা সংরক্ষিত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী হবেন, তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিলের দন্য জাতিগত শংসাপত্র আবশ্যক। সেই শংসাপত্র নিতে গিয়ে বা সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়ে বেরনোর পথে শাসক দলের লোকেদের হাতে মারধর খেয়েছেন দলের নেতা কর্মীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়ে বেরনোর সময়ে খয়রাশোল ব্লক অফিসের মধ্যেই আমাদের আঞ্চলিক কমিটির সদস্য দিলীপ গোপ-সহ চারজনকে বেধড়ক মারধর করেছে তৃণমূলের লোকেরা। বিডিও যিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিও, তিনি থাকতে এমন কেন হবে?’’ তাঁর নালিশ, সিউড়ি ২, নলহাটি ১ ব্লক, রামপুরহাট ১ ব্লকেও সিপিএম নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়।

বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘প্রতিটি ব্লকে শয়ে শয়ে তৃণমূলের সমাজবিরোধীদের ভিড় জমেছিল। প্রতিটি এলাকায় আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, দুবরাজপুর ব্লক অফিসে পুলিশের সামনেই বিজেপির ব্লক সভাপতি, শহর সভাপতিকে মারধর করে তৃণমূলের লোকজন। তিনি জানান, সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক করতে বিডিও বনমালী রায় তাঁদের ডেকেছিলেন। সময়মতো ব্লক অফিসে পৌঁছলে বিজেপি প্রতিনিধিদের বলা হয়, বৈঠকের সময় পরিবর্তন করে বেলা ১১টা হয়েছে। শহর সভাপতি সন্দীপ অগ্রবাল এবং ব্লক সভাপতি জয়ন্ত আচার্য বলেন, ‘‘তা শুনে ওখান থেকে সরে এসেছিলাম। সেই সময়ই বাইরে প্রচুর লোক জমায়েত করেছিল তৃণমূল। পরে ওসিকে ফোন করে বিডিও অফিসের সামনে গিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই মারতে শুরু করে তৃণমূলের গুণ্ডারা।’’ তাঁদের অভিযোগ, প্রথম দিকে পুলিশ দাঁড়িয়ে সব দেখেছে। লাঠি নিয়ে আক্রমণ করা হয়। ছিল আগ্নেয়াস্ত্রও। পরে ব্লকের বাইরে বেরোতে সাহায্য করে পুলিশ।

দুবরাজপুরের বিডিও অবশ্য বলেন, ‘‘সর্বদলীয় বৈঠকের সময় পরিবর্তিত হয়নি। বিজেপি ছাড়া সব দলই এসেছিল। বাইরে ওদের সঙ্গে কী হয়েছে জানা নেই। সদাইপুর ও দুবরাজপুর থানার ওসিকে বলা হয়েছে বিষয়টি দেখতে।’’ এ সব অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কেউ নয়, শুনেছি সাধারণ মানুষই ওদের আটকেছিলেন।’’

বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও পুলিশ সুপার বা জেলাশাসক কেউ-ই ফোন ধরেননি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE