অসুস্থতার কারণে বীরভূমে তৃণমূলের কর্মিসভায় নেই অনুব্রত
জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ছাড়া শেষ কবে তৃণমূলের জেলা সম্মেলন হয়েছে বীরভূমে? অনেক ভেবেও মনে করতে পারছেন না জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে নিচুতলার কর্মীদের কেউই। কর্মিসভায় ‘কেষ্টদা’ আসবেন— লোক টানতে জেলা নেতৃত্বের তরফে এমনই প্রচার করা হয়েছিল। তৃণমূল নেতাদের ওই কথায় ছুটেও এসেছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। কিন্তু ওই ভিড়ের মাঝে কোথায় অনুব্রত? দেখতে না পেয়ে ‘অসন্তুষ্ট’ কর্মীদের একাংশ।
লক্ষ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন। ১৫ মে অর্থাৎ রবিবার থেকে বীরভূমে অঞ্চল ভিত্তিক (গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকা ধরে ধরে) কর্মী সম্মেলন শুরু করল তৃণমূল। সাংগঠনিক ফাঁকফোকর ভরাট করার লক্ষ্যেই অনুব্রতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পঞ্চায়েতের নির্বাচনের বহু আগে থেকে ঘর গোছানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। বোলপুরের কসবা এলাকায় আয়োজিত ওই সম্মেলনে ছিলেন বোলপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, তৃণমূল নেতা সুদীপ্ত ঘোষ-সহ অনেকেই। অসুস্থতার কারণে ময়দানে দেখা গেল না শুধু অনুব্রতকে।
ওই কর্মিসভায় অনুব্রতকে দেখতে না পেয়ে তৃণমূলের এক নিচুতলার কর্মী তপন দাস বলেন, ‘‘কেষ্টদাকে দেখার জন্যই গিয়েছিলাম। এর আগে যত বার এখানে কর্মিসভা হয়েছে, প্রত্যেক বার কেষ্টদা এসেছেন। শুধু এ বারই এলেন না। ওঁকে ছাড়া কর্মিসভা হয়ই না। তাই চলে এলাম।’’ চুমকি দলুই নামে এক স্থানীয় বাসিন্দাও গিয়েছিলেন ওই কর্মিসভায়। তিনি বলেন, ‘‘কেষ্টদাকে দেখতে এসেছিলাম। সবাই বলেছিল, দাদা আসবেন। কিন্তু এলেন না। বলল, শরীর খারাপের জন্য আসতে পারেননি।’’
গত কয়েক মাস ধরে সিবিআইয়ের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে অনুব্রতের। কখনও গরুপাচার, কখনও কয়লাপাচার ও কখনও আবার সন্ত্রাস মামলায় তাঁকে জেরার জন্য সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এই অবস্থায় অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছ’বার সিবিআইয়ের ডাক ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। বোলপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব সূত্রে খবর, কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গত ৫ এপ্রিল বোলপুরের বাড়ি ছেড়েছিলেন অনুব্রত। তার পর থেকে আর তাঁর দেখা নেই। তখন থেকে বন্ধ রয়েছে সমস্ত দলীয় কর্মসূচিও। এর জেরে জেলায় দলের সাংগঠনিক দিকটি যে মার খাচ্ছে, তা একান্তে আলোচনায় মেনেও নিচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ।
এক নেতার কথায়, ‘‘আসলে শুধু কেষ্টদাকে দেখতেই বহু মানুষ ছুটে আসেন দলের কর্মিসভায়। আজও অনেকেই এসেছিলেন ওঁকে দেখতে।’’ অনুব্রতের এই অনুপস্থিতি পঞ্চায়েত ভোটে খানিক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। আর এক নেতার কথায়, ‘‘সত্যি কথা বলতে সংগঠন মার খাচ্ছে। ক্ষতি তো হচ্ছেই।’’ দলের ক্ষতি হচ্ছে মেনে নিলেও এক অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ নেতা বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচন এখনও দেরি আছে। সামনের বছর তো। একটু সুস্থ হয়ে উঠলেই আবার পুরনো ছন্দে দেখা যাবে ওঁকে।’’
প্রসঙ্গত, অসুস্থতার কারণেই গত ৫ মে তৃণমূল সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সাংগঠনিক বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন অনুব্রত। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুব্রতের সিবিআই তলব এড়ানো নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলীয় বৈঠকে হাজির না হওয়া অনুব্রত এবং দল দুইয়ের পক্ষেই ভাল হবে বলে মনে করছেন নেতাদের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, সিবিআইয়ের জেরা এড়িয়ে অনুব্রত হঠাৎ করে দলীয় বৈঠক বা কর্মিসভায় যাওয়া শুরু করলে জনমানসে ভুল বার্তা যেতে পারে। তাঁকে নিয়ে টানাপড়েনে জড়িয়ে যেতে পারে দলও। তাই, নেতৃত্বের নির্দেশেই হয়তো ‘কিছুটা দূরত্ব’ বজায় রাখছেন অনুব্রত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy