বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে এ বার মুখ খুললেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেই সূত্রেই সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘সুদখোর’ এবং ‘জঙ্গিনেতা’ বলে কটাক্ষ করলেন তিনি। বললেন, “ক্ষমতায় এসেছেন একজন সুদখোর, জঙ্গিনেতা ইউনূস।”
রবিবার মধ্যরাতে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ সমাজমাধ্যমে একটি অডিয়োবার্তা প্রকাশ করে। প্রায় ৯ মিনিটের সেই অডিয়োয় হাসিনা নারী নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, নারী সুরক্ষার প্রশ্নে তো বটেই, অন্যান্য মানদণ্ডেও ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে এক সময়ের ‘মডেল’ দেশ বাংলাদেশ।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের মাগুরায় ৮ বছরের এক বালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে। ছ’মাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের হাই কোর্ট। তার পরেও অবশ্য দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে।
বক্তব্যের শুরুতেই হাসিনা বলেন, “মেয়েরা অনেকেই স্লোগান দিয়েছে আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য। আমায় বিদায় দেওয়ার পর বাংলাদেশের কী অবস্থা দেখুন। আজ মেয়েদের সম্মান নেই।” বর্তমান আমলে মেয়েরা কী পোশাক পরবে না পরবে, কিংবা বাড়ি থেকে বেরোবে কি না, তা স্থির করে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন হাসিনা। আওয়ামী লীগ আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “আমরা নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন এনেছিলাম। অপরাধীদের নাম যাতে প্রকাশ্যে আসে, তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি কঠোর সাজার বন্দোবস্ত রেখেছিলাম।”
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে আক্রমণ করে হাসিনা বলেন, “ইউনূস নারী ক্ষমতায়ণ এবং দারিদ্র বিমোচনের কথা বলছেন। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে কোথায়?” দাবি করেন যে, গত জুলাই-অগস্টে আন্দোলন চলার সময়েও তাঁর সরকার সহনশীল থেকে আন্দোলনকারীদের কথা শুনেছিল। কিন্তু ইউনূসের আমলে কেউ আন্দোলন করতে পারে না।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত কয়েক দিন ধরেই সরগরম রয়েছে সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সে দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম পুলিশ সদর দফতরের তথ্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে গড়ে ১২টি করে ধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নারী দিবসের ঠিক পরেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশানা করে হাসিনার বার্তা, “ইউনূসের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে এবং নারী জাতির সম্ভ্রম রক্ষা করতে হবে।”
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা বা সংরক্ষণ পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তার চাপেই গত ৫ অগস্ট হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তার পর থেকে তিনি ভারতে রয়েছেন।