সোনামুখীর বুড়ি আঙারিয়া গ্রামে শুরু হয়েছে পরিখা খোঁড়ার কাজ। ছবি: শুভ্র মিত্র।
বছরভর হাতিদের নিয়ে নাজেহাল বন দফতর এ বার বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলে পরিখা কেটে হাতিদের ঠেকানোর পথ খুঁজছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়াও দেওয়া হচ্ছে। তবে এই পদ্ধতিতে দামালদের কতটা দমন করা যাবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বন কর্মীদের একাংশের মধ্যে।
গত বছর বড়জোড়ার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া দিয়ে কিছুটা সাফল্য মিলেছে বলে বন দফতরের আধিকারিকদের দাবি। তাঁদের মতে, এতে বড়জোড়া সদর ও গ্রামাঞ্চলে হাতিদের ঢোকা অনেকটা কমেছে। বড়জোড়া থেকে দেজুড়ি এবং সাহারজোড়া থেকে মুক্তাতোড় পর্যন্ত মোট ৮ কিলোমিটার এলাকা বিদ্যুৎবাহী তার দিয়ে ঘেরা হয়েছে। সেখানে সাফল্য পাওয়ায় এ বার সোনামুখীতেও শুরু হয়েছে হাতিদের রোখার চেষ্টা। তারপর বেলিয়াতোড়েও বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের ডিএফও সুধীরচন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘‘বড়জোড়ায় বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়ায় বাধা পেয়ে হাতিদের লোকালয়ে আনাগোনা অনেকটা কমেছে। এ বার আরও কয়েকটি জায়গায় একই প্রন্থা আমরা অবলম্বন করছি।’’ তিনি জানান, বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়ার পাশাপাশি সোনামুখীতে পরিখা কাটাও শুরু হয়েছে।” ওই রেঞ্জের আধিকারিক সুভাষ সরকার বলেন, “বুড়িআঙ্গারিয়া থেকে সীতারামপুর পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার নালা কাটার কাজ চলছে। অন্যদিকে, হামিরহাটি থেকে সীতারামপুরেও ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পরিখা কাটার কাজও শুরু হয়েছে। হাতিরা যাতে ওই নালা টপকে না যেতে পারে সে জন্য নালাগুলি ৭ ফুট গভীর ও ৮ ফুট চওড়া করা হচ্ছে।’’ সেই সঙ্গে চলছে বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া দেওয়ার কাজও। সোনামুখীর রেঞ্জ অফিসার জানান, বুড়িআঙারিয়া থেকে চূড়ামণিপুর রেস্ট হাউস পর্যন্ত বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সুধীরবাবু বলেন, ‘‘টাকা বরাদ্দ হলেই কয়েক মাসের মধ্যে আরও কিছু এলাকায় আমরা কাজ শুরু করতে চাই। এতে হাতির সমস্যা কিছুটা মিটবে বলেই আমরা আশাবাদী।”
বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের পথ অনুসরণ করতে চলেছে বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগও। ওই বন বিভাগের ডিএফও অয়ন ঘোষ জানিয়েছেন, “হাতির দল সাধারণত পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা হয়ে বাঁকাদহ রেঞ্জের জঙ্গলে ঢোকে। আমরা তাই প্রথমে ওই এলাকায় বিদ্যুতের বেড়া দিয়ে ওদের রুখে দিতে চাই। তারপরেই বেড়া দেওয়া হবে জয়পুর ও আমডহরা গ্রামের জঙ্গল এলাকায়।” পাশাপাশি ওইসব এলাকার গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে গভীর নালা (পরিখা) কাটার কাজও শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অয়নবাবু বলেন, “আমরা একই সঙ্গে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে মোবাইল ভ্যান চালু করতে চলেছি। এলাকায় হাতি ঢুকলেই সেই ভ্যান থেকে হ্যান্ড মাইকে গ্রামবাসীকে সতর্ক করে প্রচার চালানো হবে।”
সম্প্রতি এ নিয়ে বাঁকুড়ায় একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি জেলায় এসে হাতি সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বলেন। তাঁর নির্দেশ পেয়ে বন দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসে দ্রুত কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।’’ সরকারি এই উদ্যোগ আশার কিছু আলো দেখতে পাচ্ছেন হাতি উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দারা। বিষ্ণুপুরের ঘুঘুমুড়া গ্রামের বাসিন্দা অমল দাস ও সোনামুখী শহরের সুভাষ বিশ্বাস বলেন, “হাতির উৎপাতে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন। বহু বাড়ি-ঘর, জমির ফসল হাতিরা তছনছ করছে। যত দ্রুত হাতিদের ঠেকাতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে ততই আমাদের মঙ্গল।’’
কিন্তু এ ভাবে কী হাতির মতো বড় প্রাণীকে রোখা যাবে? প্রশ্ন রয়েছে বনকর্মীদের মধ্যেও। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাম জমানায় নব্বুইয়ের দশকের শেষের দিকে বিদ্যুৎবাহী তারের কিছুটা বেড়া দেওয়ার কাজ হয়েছিল বিষ্ণুপুর ও জয়পুরের সীমানা লাগোয়া গ্রামগুলিতে। কিন্তু এতে হাতিরা কিছু এলাকায় আটকে পড়লেও, লাগোয়া গ্রামগুলিতে তাদের হানাদারি বেড়ে যায়। বাসিন্দারাই বেড়া ভেঙে দেন। হাতিদেরও বেড়া কতটা ভয় দেখিয়েছিলে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক বনাধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘এই চিন্তা-ভাবনা কতটা ফলপ্রসূ হবে সে নিয়ে আগের অভিজ্ঞতা আমাদের খুব ভাল নয়। বড়জোড়ায় অবশ্য ভাল ফলই পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাক এ বার কী দাঁড়ায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy