Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

লালবাঁধের মাছে মজে পর্যটকেরা 

জালে ফেললেই উঠছে ৭-১২ কেজি ওজনের কাতলা, ১৯ কেজির গ্রাসকার্প। পাড়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘হট কেকে’র মতো বিকিয়ে যাচ্ছে।

নজরে: চলছে মাছধরা। হাজির পর্যটক, সাধারণ মানুষও। —নিজস্ব চিত্র।

নজরে: চলছে মাছধরা। হাজির পর্যটক, সাধারণ মানুষও। —নিজস্ব চিত্র।

শুভ্র মিত্র 
লালবাঁধ শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০০:৫৯
Share: Save:

জালে ফেললেই উঠছে ৭-১২ কেজি ওজনের কাতলা, ১৯ কেজির গ্রাসকার্প। পাড়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘হট কেকে’র মতো বিকিয়ে যাচ্ছে।

লালবাঁধ সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে প্রশাসন। বের করে দেওয়া হচ্ছে বাঁধের জল। তাতেই জালে উঠছে রুই-কাতলা, আড়, গাংতাড়, খয়রা, পুঁটি। কেজি দরে বিক্রি করে যা পয়সা উঠছে তা জমা হচ্ছে ব্যাঙ্কে। প্রশাসন জানিয়েছে, লালবাঁধকে ঘিরে পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে খরচ করা হবে সেই অর্থ। মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘লালবাঁধের মাছ বিক্রির টাকা ব্যাঙ্কে আমানত খুলে জমা রাখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সেখানে ভাসমান বাজার হবে। পর্যটনের প্রচার ও প্রয়াসের নানা পরিকল্পনা নেওয়া হবে এই জমা টাকা থেকে। ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যায়ে লালবাঁধের সংস্কারের কাজ চলছে।’’

লালবাঁধের পাড়ে এখন মাছ কেনার ধুম পড়ে গিয়েছে। জালে যে রুই-কাতলা ধরা পড়ছে, তাদের ওজন দেখে মাঝিদের চোখ কপালে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই জালে উঠেছে ১২ কেজির কাতলা ১০ কেজির বিগ্রেড, ১৯ কেজি ৭০০ গ্রামের গ্লাসকার্প। তা ছাড়া বড় সাইজের শোল আড় সারফিনাস এবং ফলুই তো রয়েইছে।

বিষ্ণুপুর শহরে প্রশাসনিক কার্যালয়ের পাশে শান্তিবাবুর চায়ের দোকান হোক বা মটুকগঞ্জের সুশান্তবাবুর খাবারের দোকান— সর্বত্রই আলোচনার বিষয এখন লালবাঁধের মাছ। গত সাত দিন ধরে নিয়মিত মাছ ধরা চলছে লালবাঁধে। ডিঙি নিয়ে জলে নামছেন ৩০ জন মাঝি।

লালবাঁধে পাহাড়ায় থাকা বিষ্ণুপুর মহকুমা অফিসের অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মী আলি হোসেন খান এবং সহরব শেখ বলেন, ‘‘গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে তিন কুইন্ট্যাল করে মাছ ধরা হচ্ছে। প্রতিদিন মাছের পরিমাণ, ছবি, কত টাকার বিক্রি হল, এই সব বিবরণ অফিসে পাঠাতে হয়। মাছ পাহারা দেওয়া থেকে ক্রেতাদের লম্বা লাইন সামলানো— সবই করতে হচ্ছে।’’

বিষ্ণুপুরের জেলেপাড়ার কার্ত্তিক ধীবর, গোবিন্দ কোটাল , সুবল ভট্ট এবং পাঁচকড়ি ধীবর বলেন, ‘‘বহু দিন পুকুর-বিলে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু ১৯ কেজি ৭০০ গ্রামের গ্লাসকার্প জালে উঠবে তা কোনও দিন ভাবিনি। ৭ থেকে ১২ কেজি ওজনের কাতলা, ৭ কেজির রুই, ১০ কেজির বিগ্রেড মাছতো অহরহ জালে পড়ছে।’’

লালবাঁধ দেখতে এসে মাছ কিনে হোটেলে ফিরছেন পর্যটকেরা। তাঁদের অনেকের কথায়, ‘‘রথ দেখা আর কলা বেচা একসঙ্গেই হয়ে গেল।’’ কলকাতার ঢাকুরিয়া থেকে এসেছেন পারমিতা লাহা। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বিষ্ণুপুর বেড়াতে নিয়ে এসে লালবাঁধ দেখেছিলাম। এবার দেখছি, সব কিছুই বদলে গিয়েছে। লালবাঁধের সংস্কার দেখে ভাল লাগছে। বাড়তি পাওনা খয়রা আর চুনো মাছ।’’ বিষ্ণুপুরের মটুকগঞ্জের বাসিন্দা উজ্জল নন্দী বলেন, ‘‘লালবাঁধের খয়রার স্বাদ ইলিশকেও হার মানায়।’’

মঙ্গলবার মাছ ব্যাবসায়ী জগন্নাথ দত্ত বলেন, ‘‘ক্রেতাদের চাপে দম ফেলতে পারছি না। জাল থেকে পাড়ে আসার পরেই মাছ নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যাচ্ছে। রবিবার ১০০ টাকা কেজি দরে চুনোমাছ বিক্রি করেছি ২২ কেজি।’’

পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও মাছ কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন জয়পুর, জয়কৃষ্ণপুর, বাঁকাদহ, পাত্রসায়ের লোকজনও।

অন্য বিষয়গুলি:

Fisheries Lalbandh Bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE