Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ramananda College Bishnupur

অনুষ্ঠানে ডাক না পেয়ে, ‘চোর অধ্যক্ষ’ স্লোগান

মঙ্গলবার কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানের খরচের নজরদারিতে কেন শাসকদলের ছাত্রনেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, এই অভিযোগেই এ দিন তোলাপাড় করা হয় কলেজ।

রমানন্দ কলেজে তালা।

রমানন্দ কলেজে তালা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
 বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:১৯
Share: Save:

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে কলেজে ছাত্র সংগঠনের পতাকা তুলে কয়েক বছর আগে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজের সেই অধ্যক্ষাকেই এ বার ‘চোর অধ্যক্ষ’ বলে অপবাদ দিয়ে স্লোগান দিল টিএমসিপি-রই কিছু ছাত্র নেতা। সোমবারের এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল।

কলেজের প্রধান দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে, ছাত্র সংগঠনের পতাকা বেঁধে আধ ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলে। সেই সময় এক শিক্ষক এবং কিছু পড়ুয়া কলেজে ঢুকতে বাধা পান বলে অভিযোগ। দফায় দফায় স্লোগান চলায় পড়াশোনা ব্যাহত হয় বলেও অভিযোগ। পরে কলেজের অধ্যক্ষা সেখানে গেলে বিক্ষোভ উঠে যায়।

আজ, মঙ্গলবার কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানের খরচের নজরদারিতে কেন শাসকদলের ছাত্রনেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, এই অভিযোগেই এ দিন তোলাপাড় করা হয় কলেজ।

বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা টিএমসিপি সদস্য সুমন মণ্ডল, শেখ সুমন হোসেনদের অভিযোগ, ‘‘আমরা কলেজের ছাত্র। অথচ কলেজের কোনও অনুষ্ঠানে আমাদের ডাকা হয় না। ছাত্রছাত্রীদের তহবিল থেকে কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে, অথচ আমাদেরই অন্ধকারে রাখা হচ্ছে! অধ্যক্ষা ছাত্রছাত্রীদের টাকা নয়ছয় করছেন। তারই প্রতিবাদে আমরা কলেজের গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।”

কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্না ঘড়ুই বলেন, ‘‘কলেজ পরিচালন সমিতির জরুরি বৈঠকে থাকায় বাইরে কী হয়েছে জানি না। বৈঠক শেষে সেখানে গিয়ে শুনলাম, দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।’’

তহবিল তছনছ করার অভিযোগ উড়িয়ে অধ্যক্ষা দাবি করেন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কলেজের ছেলেমেয়েরা রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় সুযোগ পায়। তাই তড়িঘড়ি তা সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ পরিচালন সমিতি।

অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘কলেজে দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র সংগঠন নেই। তাই বিভিন্ন সিমেস্টার থেকে ২০ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কমিটিতে রাখা হয়েছে। তাঁদের কে, কোন ছাত্র সংগঠনের অনুগামী তা জানার দরকার হয়নি। কলেজ পরিচালন সমিতির অনুমতি ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের তহবিল থেকে একটি টাকাও খরচ করা হয় না।তবে জানতে পারলাম যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা বহিরাগত ছাত্র।’’

বিক্ষোভকারীদের অন্যতম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তথা টিএমসিপি সদস্য শেখ আলতাব আলি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আমন্ত্রণপত্রে বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ ও পুরপ্রধান গৌতম গোস্বামীর নাম না থাকায় উষ্মাপ্রকাশ করেন। তবে বিধায়ক তন্ময় বলেন, ‘‘কলেজের অনুষ্ঠানে থাকতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু তারা যোগাযোগ করেনি। তবে কলেজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকুক, সেটাই চাই।’’ পুরপ্রধান গৌতমের দাবি, ‘‘বিষ্ণুপুর শহরের কলেজের অনুষ্ঠানেই ডাক পেলাম না! অনেকেই ফোন করে প্রশ্ন করছেন। কী জবাব দেব?’’

যদিও অধ্যক্ষার দাবি, ‘‘জানুয়ারির মধ্যেই কলেজের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ করার তাড়া ছিল। তাই অল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে ওঁদের অনুমতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আমন্ত্রণপত্রে তাঁদের নাম দেওয়া যায়নি।’’

তবে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “তৃণমূলের নেতা ও বিধায়ককে পাশে নিয়ে টিএমসিপি-র পতাকা তুলেছিলেন কলেজের অধ্যক্ষা। এখন তাঁকেই চোর স্লোগান দিল টিএমসিপি! এটাই ওদের সংস্কৃতি।’’

তবে একটি সূত্রের দাবি, অতীতে বেশ কয়েকবার নানা ঘটনায় তৃণমূলের একাংশের কার্যকলাপের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাই এ বার কলেজের এই অনুষ্ঠানে রাজনীতির ছোঁয়া বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তাতেও জলঘোলা।

যদিও কলেজে তালা ঝুলিয়ে দলীয় পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোকে সমর্থন করেননি তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কী হয়েছে জানি না। টিএমসিপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছি। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখানো তৃণমূল কখনই সমর্থন করে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

TMCP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy