বোরোর হাটতলায় মানস ভুঁইয়া। (ডান দিকে) হুড়ার অনুষ্ঠানে সন্ধ্যারানি টুডু ও সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
এক দিকে কর্মীদের এক সঙ্গে চলার বার্তা, অন্য দিকে দলের বিজয়া সম্মিলনীর পাল্টা অনুষ্ঠান। জেলার দু’প্রান্তে রাজ্য মন্ত্রীসভার দুই সদস্য মানস ভুঁইয়া ও সন্ধ্যারানি টুডুর উপস্থিতিতে পৃথক সম্মেলন মঞ্চে হাজির থাকলেন জেলার প্রথম সারির একাধিক নেতৃত্ব। দুই মন্ত্রী-সহ নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করার কথা বললেও পাল্টা অনুষ্ঠান ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই।
জেলা নেতৃত্বের তরফে ব্লকে ব্লকে যে বিজয়া সম্মিলনী হচ্ছে, শনিবার হুড়া কমিউনিটি হলে তার আয়োজন করা হয়েছিল। রবিবার তার পাল্টা বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান হয় ব্লকের লালপুর কমিউনিটি হলে। দলের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল দলের ওই ব্লকের কয়েকটি শাখা সংগঠন।
হুড়ার এ দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, প্রাক্তন জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডু, পুঞ্চার সদ্য অপসারিত ব্লক সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতো প্রমুখ। সন্ধ্যারানি বলেন, “কর্মীরাই দলের সম্পদ। তাঁদের ডাকে আমাদের সাড়া দিতেই হবে।” সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “গত কালের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলাম। এ দিনও কর্মীরা ডেকেছেন। কী ভাবে না এসে পারি!” তাঁর কথায়, “এখানে সাংগঠনিক কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে দলের স্বার্থে দু’পক্ষকে নিয়ে মধ্যস্থতায় রাজি।” শনিবারের দলীয় অনুষ্ঠানেও সন্ধ্যারানি ছিলেন।
শনিবার দলীয় অনুষ্ঠানে গরহাজির থাকা সদ্য অপসারিত ব্লক সভাপতি সুভাষ মাহাতো ও হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা পশ্চিমবঙ্গ কিসান ও খেতমজদুর তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ মাহাতো এ দিন অনুষ্ঠানে কার্যত নেতৃত্ব দেন। ভিড়ের নিরিখেও তা আগের দিনের অনুষ্ঠানকে টেক্কা দিয়েছে বলে দাবি। সুভাষের দাবি, “শনিবারের অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। কর্মীরাও একই কথা বলছেন। তাঁদের আগ্রহেই এই আয়োজন।”
পাশাপাশি, কাশীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার নাম না করেও তাঁর প্রতি সুভাষের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “দলেরই এক নেতা বিভাজন তৈরি করছেন। ২০১১-র আগে তিনি তো হুড়ার সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন না। আর এখন বিধানসভা ভোটের পরে বলছেন, হুড়ার কিছু লোক তাঁকে হারিয়েছেন। আমরা ও হুড়ার নিচুতলার কর্মীরা এক সঙ্গেই চলতে চাই। তা নেতৃত্বকে জানানো হবে।”
এ দিনের পাল্টা অনুষ্ঠান ঘিরে গোষ্ঠিদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ ওঠা নিয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব কি না জানি না, তবে হুড়া ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের একটা বড় অংশ ও কর্মীরা শনিবারের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি। তাঁরাই এ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। আমাদের আমন্ত্রণ জানানোয় আমরা এসেছি। আমরা বা দলের নিচুতলার কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। তবে বিরোধীদের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।” তাঁর সংযোজন, “দলের অন্দরে কিছু সমস্যা রয়েছে। আলোচনায় তা এক দিন মিটেও যাবে। তবে দলীয় সাংগঠনিক নীতির প্রশ্নে সব কর্মীই যে সমান, তা নেতৃত্বকে দেখতে হবে।”
আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ তবে মানেননি দলের ব্লক সভাপতি শ্যামনারায়ণ মাহাতো।
এ দিকে, এ দিন মানবাজার ২ ও বরাবাজার ব্লকের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান থেকে কর্মীদের এক সঙ্গে চলার পরামর্শ দেন মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, “মানুষকে ভালবাসুন। শ্রদ্ধা করুন। সম্মান করুন। অন্তর দিয়ে সেবা করুন। দেখবেন মানুষও আপনাকে কাছে টেনে নেবে।” গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় দলের খারাপ ফলের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আমাদের নিশ্চয় কোনও ত্রুটি ছিল। মানুষ তাই আমাদের শাস্তি দিয়েছেন। ত্রুটিমুক্ত হন। বাড়িতে বসে রাজনীতি বন্ধ করুন। মাইক ধরে মানুষকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা বলুন।” সন্ধ্যায় ঝালদাতেও বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
এ দিন মানবাজার ২ ব্লকের পুরনো কর্মীদের বোরো হাটতলার অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা জানানো হয়। বরাবাজার ও বোরোর অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন, মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী সুমিতা সিংহ মল্ল, জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের জেলা চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো প্রমুখ। সৌমেন বলেন, “কর্মীরাই দলের সব। তাঁরা এক হয়ে লড়াই করে আগেও সাফল্য এনেছেন। আগামী দিনেও আনবেন।”
তবে বরাবাজারের অনুষ্ঠানে প্রতুল মাহাতো, চন্দন সিংহ মল্ল-সহ কয়েক জনের নেতাকে দেখা যায়নি। তাঁদের অভিযোগ, দলের দীর্ঘদিনের নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করে বিরোধী দল থেকে আসা লোকজনকে দলের বিভিন্ন পদে বসানো হচ্ছে। অভিযোগ মানেননি দলের স্থানীয় নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy