শ্রমিক ধর্মঘটের পক্ষে এবং বিপক্ষে শুক্রবার সিমলাপালের পার্শ্বলা বাজারে প্রচার চালাচ্ছিলেন সিপিএম এবং তৃণমূলের কর্মীরা। অভিযোগ, এক সিপিএম নেতার উপরে হামলা চালিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন কিছু তৃণমূল কর্মী। কিন্তু রাজনৈতিক হিংসার জল এরপরে গড়ায় সম্পূর্ণ অন্য দিকে।
ঘটনার পরে এলাকার সিপিএম নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রতিবাদে সরব হন ব্লকের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও। যাঁর উপরে হামলার অভিযোগ, সেই বিশ্বজিৎ লোহার সিপিএমের পার্শ্বলা লোকাল কমিটির সদস্য তথা সিমলাপাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি। বাসিন্দারা জানান, জখম অবস্থায় তাঁকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, তাঁর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা, পরিবারের পাশে দাঁড়ানো— সমস্ত কিছুতেই সামনের সারিতে ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, হামলাকারীদের এক জনকে হাতের নাগালে পেয়ে ধরা তো দূরের কথা, পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে পার্শ্বলার নামোপাড়া বাজারে ধর্মঘটের প্রচারে গিয়েছিলেন বিশ্বজিৎবাবু-সহ এলাকার বাম নেতা কর্মীরা। একই সময় সেখানে তৃণমূলের পক্ষ থেকেও এলাকার দোকানপাট খোলা রাখার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছিল। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, ফেরার পথে বিশ্বজিৎবাবুর উপরে চ়ড়াও হন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী আশিস রজক, তুষার সিংহ মহাপাত্র, সমীর রায় এবং বাবলু মহাপাত্র। লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হলে বিশ্বজিৎবাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেই অবস্থাতেই চলে মারধর। বিশ্বজিৎবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন সিপিএমের পার্শ্বলা অঞ্চল সম্পাদক গোপাল হেমব্রম। আশেপাশের লোকজনের বাধায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তাড়া খেয়ে সমীর রায় নামে এক অভিযুক্ত অন্য অভিযুক্ত আশিস রজকের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। সেই বাড়ি ঘেরাও করে শুরু হয় বিক্ষোভ। খবর যায় পুলিশের কাছে।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, পুলিশ এসে সমীরবাবুকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ দাবি করেছে, ওই বাড়িতে গিয়ে কোনও অভিযুক্তকেই পাওয়া যায়নি। পরে ওই চার জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গোপালবাবু। এ দিন বিকেল পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি।
পুলিশের দাবি, অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ করেছেন পার্শ্বলার তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে তা মানতে নারাজ তৃণমূলের পার্শ্বলা অঞ্চল সভাপতি বিবেকানন্দ সিংহ মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘কে অভিযোগ করেছে জানা নেই। অভিযোগ হলেও দলীয় ভাবে সমর্থন করি না।’’ তৃণমূলের সিমলাপাল ব্লক সভাপতি সনৎ দাসও বলেন, “রাজনীতির রং না দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে পুলিশের কাছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয় ভাবেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিন ঘটনার পরে বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে। সেই পোস্টারে কোনও রাজনৈতিক দলেরই নাম ছিল না। সিপিএমের সিমলাপাল জোনাল সম্পাদক সুবীর পাত্র বলেন, “ঘটনার পরে তৃণমূল নেতারা যে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটাই এখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু তারপরেও পুলিশ কেন এক জন হামলাকারীকে হাতে পেয়ে ছেড়ে দিল সেটাই বুঝতে পারছি না।’’
পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘দু’পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে।’’
ধর্মঘটকে কেন্দ্র বাঁকুড়া জেলার অন্যত্রও শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু সংঘর্ষের অভিযোগ উঠে এসেছে। শুক্রবার সকালে বাঁকুড়ার লালবাজারে ধর্মঘটের সমর্থনে বামপন্থীদের সভায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিপিএমের বাঁকুড়া জোনাল সম্পাদক প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা পুলিশের অনুমতি নিয়েই সভা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূলের এসে বচসা বাধানোয় মাঝ পথে বন্ধ করতে বাধ্য হই।’’
বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়ার একটি কারখানার সামনে ওই কারখানার কর্মী তথা সিটু নেতা মানিক মণ্ডল দলের কর্মীদের নিয়ে কারখানার ফটকের পাশে অবস্থানে বসেছিলেন। অভিযোগ, সেই অবস্থান তুলতে গিয়ে আইএনটিটিইউসি-র মোটরবাইক বাহিনী তাঁদের মারধর করে। পরে ঘটনাটি নিয়ে সিপিএমের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বড়জোড়ার আইএনটিটিইউসি নেতা অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই সিটু নেতা কোনও শ্রমিককেই কারখানায় ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। আমাদের কর্মীরা শুধু তাঁকে সরিয়ে দিয়েছেন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy