—প্রতীকী চিত্র।
তৃণমূল পরিচালিত বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে টেন্ডারে বেনিয়মের অভিযোগে সরব হলেন খোদ দলেরই সাংসদ। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে জেলা পরিষদ ও প্রশাসনের অন্দরে।
বাঁকুড়ার সাংসদ তথা বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী বর্তমানে দিল্লিতে লোকসভা অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছেন। সেখানেই বাঁকুড়া জেলা পরিষদে টেন্ডার প্রক্রিয়া ঠিকঠাক ভাবে করা হচ্ছে না বলে তাঁর কাছে অভিযোগ যায়। শুক্রবার দিল্লি থেকে অরূপ ফোনে বলেন, “জেলা পরিষদে টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের তথ্য নিয়ম মেনে সময় মতো পোটালে তোলা (আপলোড) হচ্ছে না বলে অভিযোগ শুনেছি। এটা মেনে নেওয়া হবে না। জেলা প্রশাসনকে সব দিক খতিয়ে পদক্ষেপ করতে বলছি।” বাঁকুড়ার জেলা শাসক সিয়াদ বলেন, “প্রশাসনিক কোনও কাজে অস্বচ্ছ্বতা মেনে নেওয়া হবে না।”
অভিযোগ অস্বীকার করে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায় দাবি করেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। নিয়ম মতোই টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। তারপরেও কেন এই ধরনের কথাবার্তা বলা হচ্ছে জানি না।”
জেলায় বরাদ্দ পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষদের একাংশের অভিযোগ, ১৫ দিন আগেই পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের প্রায় ৬৯টি প্রকল্পের টেন্ডারে অংশগ্রহণের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও নির্দিষ্ট পোর্টালে ঠিকাদারদের তথ্য ‘আপলোড’ করা হয়নি।
কোনও সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার নোটিসের পরে আগ্রহী ঠিকাদারেরা আবেদন করেন। ওই প্রকল্পে সরকার নির্ধারিত খরচের চেয়ে সব থেকে কম অর্থে যে ঠিকাদার করতে রাজি থাকেন, তাঁকেই কাজের বরাত দেওয়ার নিয়ম। দরপত্রে যোগদানের সময়সীমা পার হলে ঠিকাদারেরা কে কতটা ছাড় দিলেন, তা পোর্টালে প্রকাশ করতে হয়। এতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। তারপরেই সব থেকে কম খরচে কাজ করতে আগ্রহী ঠিকাদারকে বরাত দেওয়া হয়। পোর্টালে ওই তথ্য প্রকাশ না করায় ঠিকাদারদের একাংশ টেন্ডারে কারচুপির অভিযোগ তুলছেন।
সভাধিপতি অনুসূয়ার দাবি, দরপত্রে যোগ দেওয়া ঠিকাদারের সংখ্যা অনেক। সবার তথ্য খুঁটিয়ে দেখে আপলোড করতে হয়। এছাড়া ওই কাজে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে হচ্ছে। কর্মী সঙ্কটও রয়েছে জেলা পরিষদে। তিনি বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখে কাজ করা হচ্ছে। সে জন্য কিছুটা দেরি হতে পারে। তবে কারচুপি বা অনৈতিক কাজের অভিযোগ ঠিক নয়।’’
যদিও কর্মাধ্যক্ষদের একাংশের দাবি, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে দরপত্রে যোগ দেওয়ার সময়সীমা পার হওয়ার দু’দিনের মধ্যেই সাধারণত পোর্টালে আপলোড করা হয়। সেই নিয়মে এ বার এত দেরি হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে।
প্রশাসনের একটি বিশেষ সূত্রে খবর, সাংসদ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পরে ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন। জেলা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও প্রকাশ্যে প্রশাসনের তরফে কেউ মন্তব্য করতে চাননি।
তবে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের অভিযোগ, ‘‘বাঁকুড়া জেলা পরিষদে ভূরি ভূরি কারচুপি করছে তৃণমূল।’’ জেলা পরিষদের একমাত্র বিরোধী সদস্য বিজেপির রূম্পা ধীবরের দাবি, ‘‘কারচুপি যাতে প্রকাশ্যে না আসে, সে জন্য আমি একমাত্র বিরোধী সদস্য হলেও সাধারণ সভায় ডাকা হয় না। দেওয়া হয়নি অধ্যক্ষের পদও।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “বাঁকুড়া জেলা পরিষদে কখন টেন্ডার প্রকাশ করা হচ্ছে সেই খবরও ঠিকাদারদের জানতে দেওয়া হচ্ছে না। ঠিকাদারেরা আমাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেবল সাধারণ মানুষের সামনে দুর্নীতি বন্ধের কথা বলেন। দুর্নীতি বন্ধ করেন না।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ অরূপ বলেন, ‘‘আমরা অন্যায়কে প্রশয় দিই না। তাই প্রশাসনককে দেখতে বলা হয়েছে। এখানেই বিজেপি, সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের পার্থক্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy