Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নরেশকে কটাক্ষ বিরোধীদের, পাশে তৃণমূল নেতৃত্ব
Naresh Chandra Bauri

নিজের কেন্দ্রে ভাড়া বাড়ি খুঁজছেন বিধায়কই

শাসকদল সূত্রে খবর, এলাকাবাসীর সঙ্গে যাতে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে উঠে, সে জন্য বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশেই বাড়ি ভাড়ার খোঁজ করছেন বিধায়ক।

নরেশ বাউরি। 

নরেশ বাউরি। 

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০৩:৪০
Share: Save:

বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন ২০১৬ সালে। ’২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পেতে পারেন, এমন ইঙ্গিত মিলেছে দলের তরফে। অথচ নিজের এলাকায় এত দিন কোনও স্থায়ী ঠিকানা ছিল না তাঁর। বিধায়ক হওয়ার চার বছর পরে তাঁর বিধানসভা এলাকা দুবরাজপুরে ভাড়া বাড়ি খুঁজতে শুরু করেছেন নরেশচন্দ্র বাউড়ি।

শাসকদল সূত্রে খবর, এলাকাবাসীর সঙ্গে যাতে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে উঠে, সে জন্য বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশেই বাড়ি ভাড়ার খোঁজ করছেন বিধায়ক। শনিবার খয়রাশোলের কর্মিসভা থেকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন অনুব্রত।

কিন্তু, এত দিন পর হঠাৎ বিধায়কের জনসংযোগ বৃদ্ধির তৎপরতা নিয়ে দলের মধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। দলের নিচুতলার নেতা কর্মীদের একাংশের মতে, নিয়মিত এলাকায় না আসা, প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েও সে-সব পূরণ করতে না-পারা সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে নরেশবাবুর বিরুদ্ধে। দুবরাজপুর, খয়রাশোলের অনেক মানুষই তাঁর উপরে ক্ষুব্ধ। তাই এখন বাড়ি ভাড়া করে থেকে ক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা।

বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী শিবিরও। বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের টিপ্পনী, ‘‘মরণকালে হরিনাম বলে একটা কথা আছে। শাসকদলের এখন সেই হাল। মানুষের সঙ্গে থাকার প্রয়োজন নেই, শুধু নিজের আখের গুছিয়ে নাও। তৃণমূলের এই ফন্দি মানুষ ধরে ফেলেছেন। মানুষই এর জবাব দেবেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘ঘর ভাঙছে, মানুষ সরেছে অনুভব করেই জোড়াতালি দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে শাসকদল। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হবে না।’’

অভিযোগ উড়িয়ে নরেশবাবুর দাবি, ‘‘আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি দায়িত্ব পালন করতে। নিয়মিত এলাকায় এসেছি। ফাঁকা প্রতিশ্রুতিও কাউকে দিইনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার গ্রামের বাড়িই তো দুবরাজপুরের হেতমপুরে। সেখানে মাত্র দু’টি মাটির বাড়ি। ওখানে সকলেকে ডাকা সম্ভব হবে না জেনে দুবরাজপুর শহরে বাড়ি নিচ্ছি।’’ বিধায়কের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘নরেশবাবু বিধায়ক হিসাবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। এলাকার রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াও মানুষের সমস্যায় হাজির থাকেন। বাম আমলে বিধায়ক কী, সেটাই তো লোকে জানত না। এখন বর্ষায় যাতায়াতে অসুবিধার
জন্যই ওঁকে দুবরাজপুরে বাড়ি ভাড়া নিতে বলা হয়েছে।’’ যা শুনে বিরোধীদের বক্তব্য, গত তিন বছরে কি বর্ষা হয়নি জেলায়?

তৃণমূল সূত্রে খবর, ’১৬ সালের নির্বাচনে ছ’বারের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক বিজয় বাগদিকে হারিয়ে জয়ী হওয়ার পরে তৃণমূল বিধায়ককে নিয়ে প্রত্যাশা যথেষ্টই ছিল। কিন্তু সেটা পূরণে নরেশবাবু ব্যর্থ বলে দলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। মরেশবাবু একাধারে বোলপুর
পুরসভার বিদায়ী উপ-পুরপ্রধানও। শাসকদলের নেতা-কর্মীরা আড়ালে বলছেন, স্থানীয় ঠিকানা না থাকায় নিয়মিত বোলপুর থেকে ৪৫ কিমি দূরত্বের দুবরাজপুর বিধানসভা নিয়মিত পৌঁছনো এবং কাজ করা সহজ হয়নি। প্রথম দিকে
নিয়মিত আসা-যাওয়া করলেও পরের দিকে সেটা অনেক কমে যায়। করোনা আবহেও এলাকায় খুব কম দেখা গিয়েছে তাঁকে। এর সঙ্গে যু্ক্ত হয়েছে খয়রাশোলে যযুধান দুই গোষ্ঠীর লোকেদের নিয়ে চলার ক্ষেত্রে সমস্যা, দুবরাজপুরের এলাকায় নেতাদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই।

মানুষের সঙ্গে মৌখিক ভাল ব্যবহার বজায় রাখালেও হুট করে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেওয়া কার্যত রেওয়াজে পরিণত করলেও সেটা পূরণ বিধায়ক ব্যর্থ হয়েছেন বলেই অভিযোগ। দলের অনেকে ভাবছিসেন, এ বার হয়তো অন্য মুখের কথা ভাববে দল। কিন্তু, দুবরাজপুরে বাড়ি ভাড়া নিতে বলার মাধ্যমে নরেশবাবুর উপরেই তৃণমূল নেতৃত্ব আস্থা রাখছেন বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল।

অন্য বিষয়গুলি:

Naresh Chandra Bauri TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy