বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক তৃণমূলের।
মল্লারপুরে শনিবারের কর্মী সম্মেলনে ময়ূরেশ্বর বিধানসভা এলাকায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। দুই শিবিরের ঝগড়া থামাতে মাইক হাতে নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে আবেদন করতে হয়েছিল কর্মীদের কাছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, যে নেতাকে নিয়ে সে দিন কর্মী সম্মেলন তেতে উঠেছিল, সেই ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জটিল মণ্ডলের নেতৃত্ব মানতে না চেয়ে ব্লক সভাপতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ২১ জন সদস্যের মধ্যে ১৮ জনই দলের জেলা সভাপতির কাছে লিখিত ভাবে ইস্তফা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। জটিলের বিরুদ্ধে এক তরফা ভাবে পঞ্চায়েত সমিতি চালানোর অভিযোগ তুলেছে বিক্ষুব্ধ শিবির।
ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকে দলের কোন্দল হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে রবিবার রাতে বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক করে তৃণমূল। বৈঠকে জেলা সভাপতি অনুব্রত ছাড়াও ছিলেন দলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। ময়ূরেশ্বরে বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর নেতা ময়ূরেশ্বর ২ ব্লক সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল এবং জটিলও বৈঠকে ছিলেন। জটিল দল ও পঞ্চায়েত সমিতির কাজ থেকে ‘সরকারি’ ভাবে ছুটি চাইবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমবার অভিজিৎবাবু জানান, জটিল মণ্ডল দীর্ঘ দু’মাস অসুস্থ থাকার জন্য পঞ্চায়েত সমিতিতে আসতে পারেননি। বাড়ি ফিরলেও এখনও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ নন। সেই কারণে তাঁর পক্ষে পঞ্চায়েত সমিতিতে গিয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। সহ-সভাপতির সংযোজন, ‘‘সেই কারণে আমরা দল থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং তিনিও (জটিল) দলকে বলেছেন, তাঁকে যেন ছুটি দেওয়া হয়। সেই মতো তিনিও সরকারি ভাবে ছুটির আবেদন করবেন। আপাতত পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সভাপতির কাজ চালাবেন।’’
এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে ওই এলাকায় জটিলের ক্ষমতা খর্ব করা হল বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বড় অংশ। যদিও জটিল মণ্ডলের দাবি, ‘‘আমি সকলকেই নিয়ে চলে এসেছি। কেউ আমার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ কিনা, তা আমার জানা নেই।’’ ছুটি প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দলের কাছে আমার অসুস্থতার জন্য ছুটি চেয়েছিলাম। দল সে ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
অন্য দিকে, ময়ূরেশ্বর বিধানসভা এলাকায় নেতাদের একাংশকে নিয়ে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ সামাল দিতে রবিবারের বৈঠকে বেশ কিছু অঞ্চল দেখভাল করার জন্য ৫ জনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিজিৎবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নয়, যেখানে যেখানে অঞ্চল সভাপতি বয়স্ক বা অসুস্থ, সেখানে সংগঠন দেখার জন্য ওই কমিটি হয়েছে।’’ তিনি জানান, বৈঠকে ষাটপলসা ও ময়ূরেশ্বর, এই দু’টি অঞ্চলে ৫ জনের কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিকাশবাবু ও চন্দ্রনাথবাবুকে কমিটি গঠন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দল সূত্রের খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পাওয়া নিয়ে জটিল মণ্ডলের সঙ্গে ময়ূরেশ্বরের বর্তমান বিধায়ক অভিজিৎ রায়ের বিরোধ বাধে। টিকিটের দাবিদার ছিলেন জটিল। তা না হওয়ায় তাঁর অনুগামীরা ষাটপলসায় অভিজিতের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের দাবিতে মিছিল করেন। কিন্তু অভিজিৎই প্রার্থী হন। দলের চাপে জটিলকেও প্রচারে নামতে হয়।
বিধানসভা ভোটের পরে জটিলের সঙ্গে বিরোধ বাধে অভিজিৎ-অনুগামী হিসেবে পরিচিত ব্লক সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডলের। পঞ্চায়েত, লোকসভা— দু’টি নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরেও সেই বিরোধ মেটেনি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে জটিলের নেতৃত্ব মানতে না চেয়ে ব্লক সভাপতির প্যাডে ব্লক সভাপতি নারায়ণবাবু-সহ অনেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানান। একই সঙ্গে ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ৭টি অঞ্চলের মধ্যে ৬টির প্রধান, ব্লকের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি জয়নাল আবেদিনও ইস্তফা দেওয়ার কথা লিখিত ভাবে জানান অনুব্রতকে। এক মাত্র ষাটপলসা পঞ্চায়েত, যেখানে জটিলের প্রভাব বেশি, সেখানকার কর্মীরা তাঁর পক্ষে থেকে যান। নারায়ণবাবু এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। অভিজিৎবাবুর দাবি, ‘‘ইস্তফা দেওয়ার খবর নেই। সরকারি ভাবেও কেউ ইস্তফা দেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy