মায়ের গর্ভে রয়েছে ভ্রূণ। সেই ভ্রূণের পেটের ভিতর নড়াচড়া করছে আরও একটি ভ্রূণ!
মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার সরকারি হাসপাতালে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে এসেছিলেন ন’মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা। সেখানেই ঘটেছে এমন বিস্ময়কর ঘটনা। যদিও সেই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এমন ঘটনা বিরল হলেও অস্বাভাবিক নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘ফিটাস ইন ফিটু’ বলা হয়। কিন্তু কেন এমনটা হয়? কারা এই বিরল পরিস্থিতির স্বীকার হতে পারেন?
আরও পড়ুন:
‘ফিটাস ইন ফিটু’ বা অন্তঃসত্ত্বা মহিলার গর্ভে যে ভ্রূণ বড় হচ্ছে তার ভিতর আর একটি ভ্রূণের বেড়ে ওঠা! শুনলে অবাক হওয়ারই কথা। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত এমন ঘটনার নজির রয়েছে মাত্র ২০০টি। ভারতে তার সংখ্যা মাত্র ১৫ থেকে ২০টি। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আসলে ভ্রূণের পেট বা পাকস্থলীর ভিতরে নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভ্রূণটি প্রোথিত হয় আসল ভ্রূণ বা মায়ের গর্ভে যে ভ্রূণটি বেড়ে উঠছে তার নাড়িভুঁড়ি বা পাকস্থলীর দেওয়ালে। আল্ট্রাসাউন্ডে যা দেখলে মনে হয়, দ্বিতীয় ভ্রুণটি প্রথমটির পেটের ভিতরে রয়েছে। আমরা যেটিকে ‘ফিটু’ বা দ্বিতীয় ভ্রূণ বলে দাগিয়ে দিচ্ছি, তা আসলে রক্তপিণ্ড।”
এমন পরিস্থিতি কখন হতে পারে?
ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলনে তৈরি হয় নতুন একটি কোষ। তার পরে কোষটি প্রতিস্থাপিত হয় জরায়ুতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কোষ বা জাইগোট ক্রমশ বিভাজিত হতে থাকে। ভ্রূণের গঠনেও ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। মল্লিনাথের মতে, “অন্তঃসত্ত্বা মহিলার গর্ভে যমজ ভ্রূণ থাকলে অনেক সময়ে এমনটা হতে পারে। কোষ ক্রমশ বিভাজন প্রক্রিয়ার সময়ে কোনও ভাবে একটি বড় কোষের ভিতর আর একটি ছোট কোষ প্রবেশ করে যায়। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। স্বাভাবিক নিয়মে নির্দিষ্ট সময়ে বড় কোষটি ভ্রূণের আকার নিতে শুরু করে। কিন্তু ছোট কোষ বা জাইগোটটি বড়টির ভিতরে থেকে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আসল ভ্রূণটি বড় হতে থাকে। তবে ভিতরে থাকা কোষটি আদৌ ভ্রূণের আকার নেবে কি না, তা আগে থেকে বলা মুশকিল।”
আরও পড়ুন:
এ ক্ষেত্রে ভ্রূণ বা হবু মায়ের জীবনের ঝুঁকি কতটা? প্রসবের সময়ে কোনও সমস্যা হতে পারে কি?
মহারাষ্ট্রের বুলধানা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, এই ধরনের সমস্যায় অন্তঃসত্ত্বার বিশেষ কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। শারীরিক তেমন কোনও সমস্যা না থাকলে হবু মা স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানপ্রসব করতে পারেন। তবে প্রসব করার পর সদ্যোজাতটির শারীরিক অবস্থা কেমন থাকে সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর রাখা প্রয়োজন। মল্লিনাথের বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে ন’মাস ধরে মায়ের গর্ভে যে ভ্রূণটি আসলে বেড়ে উঠল, দেখতে হবে ভূমিষ্ট হওয়ার পর তার গঠনগত কোনও সমস্যা রয়েছে কি না। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে সদ্যোজাতটির পেট থেকে অবাঞ্ছিত কোষটি বার করে ফেলাই বাঞ্ছনীয়।”