শোকস্তব্ধ নিহতের স্ত্রী ও পরিজন। শনিবার ইলামবাজারের মুরানডিহি গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
এলাকার উন্নয়নে কী করা যায়, তা নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন নেতৃত্ব। আর সেই আলোচনাতে যোগ দিয়েই দুষ্কৃতীদের হামলায় প্রাণ গেল শাসকদলের এক গ্রাম কমিটির সভাপতির। জখম আরও তিন জন।
শুক্রবার বিকেলে ইলামবাজার থানার মান্দারবুনি গ্রামের ওই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে এলাকার প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি-সহ দলেরই নেতা-কর্মীদের একাংশের। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম জাকির হোসেন (৩৪)। বাড়ি স্থানীয় মুরানডিহি গ্রামে। তাঁকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যে তিন জনকে (যাঁদের মধ্যে মান্দারবুনি সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হাফিজা বিবির স্বামী আবদুল হালিমও রয়েছেন) আটক করেছে পুলিশ, প্রত্যেকেই এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। খুনের পরে অভিযুক্ত গোষ্ঠীর লোক জনের বাড়িতে পাল্টা হামলা চালানোরও অভিযোগ উঠেছে। যদিও গোটা ঘটনায় কোনও পক্ষই এখনও পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে, উত্তেজনা থাকায় শনিবার সকাল থেকে এলাকায় টহলদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। অন্য দিকে, জাকিরের খুনের ঘটনার সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব।
দল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ইলামবাজারের বিলাতি পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার বিকেলের সময় ধার্য করেছিলেন শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব। পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, দলের বিলাতি অঞ্চল সভাপতি নিয়ামত শেখ, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ মোল্লা এবং অন্যান্য দলীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে অঞ্চলের ১৫ সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক শুরুও হয়। বৈঠকে উপস্থিতদের দাবি, তখনই কেন তাঁদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে মান্দারবুনি গ্রামে বৈঠক হচ্ছে, সঙ্গীদের নিয়ে এসে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি তথা বিলাতি পঞ্চায়েতের শালডাঙা সংসদের নির্বাচিত সদস্য ফুলবাবু মণ্ডল। এর পরেই বর্তমান অঞ্চল নেতৃত্বের সঙ্গে প্রবল বচলায় জড়িয়ে পড়ে ফুলবাবুরা।
নিহত জাকির হোসেন।
নিয়ামতের অভিযোগ, ‘‘কোনও রকম প্ররোচনা ছাড়াই পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আচমকাই বৈঠকে উপস্থিতদের উপরে লাঠি, রড নিয়ে হামলা চালায় ফুলবাবু এবং ওঁর সঙ্গীরা। ওদের পিটুনিতেই গুরুতর জখম হন জাকির-সহ দলের চার জন।’’ জখমদের প্রথমে ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং পরে সেখান থেকে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় জাকিরের। এ দিকে, ঘটনার খবর চাউর হতেই এ দিন সকাল থেকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পাল্টা হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বর্তমান অঞ্চল সভাপতির লোক জনের বিরুদ্ধেও। ফুলবাবু গোষ্ঠীর অভিযোগ, গোলটিকুরি, সাহাপাড়ায় চার জনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাধা দিতে গিয়ে পুতুল বিবি নামে এক মহিলা জখম হন বলেও দাবি। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ঘটনার খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে জাকিরের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন আত্মীয়-স্বজন। বছর সাতেকের ছেলেকে কোলে নিয়ে সমানে কেঁদে চলেছেন নিহতের অন্ত্বঃসত্তা স্ত্রী ফতেমা বিবি। কোনও রকমে বললেন, ‘‘দুপুর ৩টে নাগাদ মিটিং আছে বলে বেরিয়েছিল। ভাল করে কথাও বলিনি। সব সময় দলের জন্য ভাবত। আর সেই দলের মিটিংয়ে গিয়েই আমার স্বামীকে খুন হতে হল!’’ অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ফতেমা। নিহতের বাবা নজরুল হকের প্রশ্ন, “দলের মিটিংয়ে গিয়ে ছেলে মরে গেল। এটা পরিকল্পনা করে খুন নয়তো কি?’’ দলের লোকেদের হাতেই জাকিরকে খুন হতে হয়েছে বলে অভিযোগ ফতেমা, নজরুলদের।
যদিও গোটা ঘটনায় ইলামবাজারে শাসকদলের প্রাক্তন ও বর্তমান অঞ্চল নেতৃত্বের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দলীয় সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন ধরে নিয়ামতের সঙ্গে ফুলবাবুর ঝামেলা চলছিল। বার কয়েক উভয়ের মধ্যে বচসাও হয়েছে। যদিও সেই দ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। পুলিশ-প্রশাসন ঘটনার তদন্ত করছে। যারা দোষী, তারা শাস্তি পাবেই।’’ একই দাবি করেছেন তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামও। তবে, ঘটনায় দলের কারও জড়িয়ে থাকার কথা উড়িয়েও দেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, “ঘটনাটি দুঃখজনক। নিহতের পরিবারের পাশে দল আছে। কারা এই খুনে জড়িত, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। দলীয় স্তরেও ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ফুলবাবুর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy