নির্বাচনের মুখে পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল সদস্যকে গ্রেফতার করায় উত্তেজনার পারদ চড়ছে খয়রাশোলে। ঘটনাকে ঘিরে ফের একবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব সামনে আসা নয়, ওই ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে নির্বাচনী প্রচারেও— এমনই হুমকি দিয়ে রেখেছেন খয়রাশোলে শাসক দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারা। স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, ‘‘বিরোধী গোষ্ঠীর কথা শুনে কোনও তদন্ত ছাড়াই জেলা নেতৃত্বের ‘নির্দেশ’ মেনে ‘নিরাপরাধ’ পঞ্চায়েত সদস্যকে শুধু গ্রেফতার কার নয়, তাঁকে বেধড়ক মারধরও করেছে পুলিশ। এ ভাবে চলতে থাকলে দলের নির্বাচনী কর্মসূচি থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখব।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম চণ্ডীচরণ মণ্ডল। মঙ্গলবার গভীর রাতে বাবুইজোড় পঞ্চায়েত এলাকার বাড়ি থেকে তাঁকে ধরে কাঁকরতলা থানার পুলিশ। শুধু পঞ্চায়েত সমিতির ওই সদস্য নয়, ধরা পড়েছেন আরও দু’জন। ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২২ তারিখ এলাকার এক মহিলার বাড়িতে অস্ত্র-সহ চড়াও হওয়া ও তাঁকে মারধর করা। ২৬ তারিখে হওয়া ওই অভিযোগের পরেই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা ও অস্ত্র আইন সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার তিন জনকে দুবরাজপুর আদালতে তুলে শুধু চণ্ডীচরণকেই সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ। সরকারি আইনজীবী রাজেন্দ্রপ্রসাদ দে বলেন, ‘‘সকলকেই জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। পুলিশের এই আবেদনের শুনানি হবে ২৯ তারিখ।’’ খয়রাশোলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের ক্ষোভ ঠিক এই জায়গায়। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, প্রথমত ঘটনাটি মিথ্যে। দুই, যে ঘটনা ২২ তারিখ ঘটেছে, সেই অভিযোগ কেন ২৬ তারিখ হবে? তিন জনের মধ্যে এক জনের হেফজত চাওয়া থেকে স্পষ্ট বিরোধী গোষ্ঠীকে খুশি করতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘ইচ্ছেয়’ ওই নেতাকে গ্রেফতার করানো হয়েছে। আদালতে একই অভিযোগ তুলেছেন ধৃত নেতাও। তিনি বলেছেন, ‘‘এই অসম্মানের পর দল ও পদ দুটোই ছাড়ব।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানেনি। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলছেন, ‘‘পদ বিবেচ্য নয়। আইন আইনের পথে চলেছে।’’ দলের কিছু নেতার তোলা অভিযোগ মানেননি খয়রাশোলে দলের অবজার্ভার তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ থাকলে গ্রেফতার হবে। সেখানে বলার কিছু নেই। তবে ওঁর দ্রুত জামিন করানোর চেষ্টা হবে।’’
ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারা ঘনিষ্ঠমহলে অভিযোগ করছেন, শীর্ষ নেতৃত্ব দু’পক্ষকে ‘তুষ্ট’ করতে কখনও এ পক্ষের, কখনও অন্য পক্ষের কাউকে গ্রেফতার করাচ্ছেন। দলের ব্লক সভাপতি খুনেরও কিনারা হয়নি। খয়রাশোলে ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ খুনের পরে ১১ জনের একটি কমিটি দল চালাচ্ছে। ওই খুনে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের অনেকেই জড়িয়ে গিয়েছিলেন। ব্লকের এক নেতার মনে হয়েছে, ‘‘এই আবহে নির্বাচনে সকলের সক্রিয় সাহায্য পাবে না জেনেই চলতি মাসের প্রথম দিকে খয়রাশোলের কর্মিসভা থেকে একসঙ্গে চলার বার্তা দেওয়া হয়েছিল। পরামর্শ ছিল নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নিন। তার পরে সিউড়ির সভা থেকে দীপক ঘোষ খুনে গ্রেফতার হওয়া উজ্জ্বল হক কাদেরিকে জামিন করিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়। যেহেতু তাঁর জামিন হয়নি। এবং অনেক অভিযুক্ত জামিন পেলেও আদালতের নির্দেশেই এলাকায় থাকতে পারছেন না। তাই এই এ পক্ষের একজনকে তুলে নিয়ে একটা সমতা ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে মাত্র।’’
এই প্রক্রিয়া আদতে দলের ক্ষতি করেছে বলেই এলাকার তৃণমূল নেতাদের অনেকের মত। বিকাশবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘কেউ এটা অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে। এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য গ্রেফতার হওয়ায় সকলে হাত গুটিয়ে নেবেন, খয়রাশোলে এত দুর্বল সংগঠন আমাদের নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy