রঘুনাথপুরে জল প্রকল্পের উদ্বোধনে মন্ত্রী।নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়া জেলার তিনটি পুরসভাকেই ‘গ্রিন সিটি’র আওতায় আনছে রাজ্য সরকার। শনিবার রঘুনাথপুরে এক অনুষ্ঠানে এসে এ কথা জানান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
সম্প্রতি পুর দফতর রাজ্যের কোন কোন পুরসভাকে ‘গ্রিন সিটি’র আওতায় আনা হচ্ছে, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই জেলার পুরুলিয়া ও ঝালদা সেই তালিকায় ঠাঁই পেলেও, বাদ ছিল রঘুনাথপুর। তাতে ক্ষোভ ছড়িয়েছিল শাসকদলের রঘুনাথপুরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এ দিন মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি তাঁর কাছে রঘুনাথপুরকে ‘গ্রিন সিটি’র আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান। পরে মঞ্চে দাঁড়িয়েই মন্ত্রী ফিরহাদ ঘোষণা করেন, রঘুনাথপুরকেও ‘গ্রিন সিটি’ করা হচ্ছে। এ জন্য এক কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা ওই প্রকল্পে রঘুনাথপুরকে দেওয়াও হচ্ছে বলে জানিয়ে গেলেন ফিরহাদ।
ঘটনা হল, এ দিন রঘুনাথপুরে জলপ্রকল্পের উদ্বোধনে এসে কার্যত কল্পতরু হয়ে উঠেছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। বক্তৃতা করতে উঠে বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবু ও পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রীর কাছে রঘুনাথপুরের জন্য আরও একটি জলপ্রকল্প, সরকারি কর্মীদের জন্য আবাসন প্রকল্পের দরবার করেন। ফিরহাদ বক্তৃতায় আশ্বাস দেন, জল প্রকল্প ও সরকারি কর্মীদের আবাসন গড়ার বিষয়ে তাঁর দফতর উদ্যোগ নেবে। দুই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করারও আশ্বাস দেন তিনি।
বিআরজিএফ (স্পেশ্যাল) তহবিলে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা পেয়ে রঘুনাথপুর পুরসভা জল প্রকল্প তৈরি করে। বিধানসভা নির্বাচনের আগেই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখন তার উদ্বোধন করেন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবু। এ দিন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করেন ফিরহাদ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও ১২ কোটিতেই কাজ শেষ হয়েছে। পুরসভার তহবিলে এখনও সেই পাঁচ কোটি টাকা রয়েছে।
যদিও এই প্রকল্প রূপায়ণের পরেও রঘুনাথপুরের জলের সমস্যা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব নয় বলেই পুরসভার দাবি। এই প্রকল্প থেকে কম বেশি ২০০০ বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে জলের উৎসের সমস্যায় অত বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলেই মন্ত্রীর কাছে আরও একটি জলপ্রকল্পের দাবি জানিয়েছেন বিধায়ক ও পুরপ্রধান। পুরসভার দাবি, বর্তমানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নিতুড়িয়ার লক্ষ্ণণপুরের জলপ্রকল্পের উপরে ভরসা করে রঘুনাথপুরের এই জলপ্রকল্প শুরু হয়েছে।
ওই প্রকল্প থেকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পুরসভাকে দৈনিক দুই মিলিয়ন লিটার জল দেওয়ার কথা। কিন্তু পুরপ্রধান ভবেশবাবুর অভিযোগ, ‘‘যে পরিমাণ জল পাওয়ার কথা, বাস্তবে তার থেকে অনেক কম জল দেওয়া হচ্ছে। পুরসভার সাতটি গভীর নলকূপ থেকে দৈনিক ০.৮১ মিলিয়ন লিটার জল তুলে কোনওরকমে চাহিদা সামাল দেওয়া হচ্ছে।’’
বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘আমরা পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল তুলে পাইপলাইনের মাধ্যমে রঘুনাথপুর পুরএলাকায় জল সরবরাহ করতে চাইছি। তাতে জলের জন্য অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হবে না। সে কারণেই মন্ত্রীর কাছে নতুন আরও একটি জলপ্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” তবে দফতরের আর্থিক সঙ্কটের কারণে আগামী দু’বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে রঘুনাথপুর পুরসভাকে নতুন জলপ্রকল্পের জন্য তাঁরা অর্থ দেবেন বলে এ দিন আশ্বাস দেন মন্ত্রী। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও সরকারি দফতরের আধিকারিক, কর্মীদের আবাসন প্রকল্পের জন্য পুরসভাকে জমি খুঁজতেও নির্দেশ দিয়ে যান তিনি।
জয়চণ্ডী পাহাড়ের পাদদেশে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো-সহ রাজ্য পুর দফতরের পদস্থ কর্তা, জেলা প্রশাসনের
পদস্থ কর্তারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy